শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নিরীক্ষকরা এসব প্রতিবেদনে তাদের আর্থিক অবস্থা ও সুশাসন নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে প্রতিকূল ও শর্তযুক্ত মতামত, বিশেষ জোর, টিকে থাকার অনিশ্চয়তা এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নিরীক্ষা মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রক পদক্ষেপ নিতে বিএসইসি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।
বিএসইসি মনে করে, নিরীক্ষকদের এমন পর্যবেক্ষণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিতে পারে এবং এর ফলে পুরো শেয়ারবাজার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই ব্যাংকিং খাতের প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্রুত হস্তক্ষেপ জরুরি। কমিশনের করপোরেট রিপোর্টিং ডিপার্টমেন্ট থেকে সম্প্রতি গভর্নরের কাছে এই আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়। এই উদ্বেগজনক প্রতিবেদনে মোট ১৯টি ব্যাংক ও ১২টি অ-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনায় নিরীক্ষকরা বড় ধরনের ভুলের ইঙ্গিত দেওয়া প্রতিকূল মতামত, নির্দিষ্ট অংশ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের শর্তযুক্ত মতামত এবং ভবিষ্যৎ আর্থিক অবস্থায় প্রভাব ফেলতে পারে এমন গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির বিষয়গুলো তুলে ধরেন। বিশেষ করে, বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের চলমান প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে থাকার অনিশ্চয়তা নিয়ে সতর্কতা জানানো হয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বাস্থ্য নিয়ে গভীর প্রশ্ন তৈরি করেছে।
বিএসইসি যেসব ব্যাংককে চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে রয়েছে: এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এবং ইউসিবি।
এছাড়া কমিশন যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: বাংলাদেশ ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, মাইডাস ফাইন্যান্সিং, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।
কমিশন তাদের চিঠিতে উল্লেখ করেছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে যে অনিয়ম ও ঝুঁকির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, তা বাজারের স্বচ্ছতা ও আস্থার জন্য সরাসরি হুমকি। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে নিরীক্ষা প্রতিবেদনগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তাই বিএসইসি সংশ্লিষ্ট বিধিমালা অনুসারে চিহ্নিত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযথ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।
https://sharenews24.com/article/112748/index.html

দৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

