শেয়ারবাজারে ভয়াবহ জালিয়াতি
ভুয়া বিও অ্যাকাউন্টে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
৭০ লাখ ৫০ শেয়ার আত্মসাৎ * তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে বিএসইসি
মনির হোসেন
২৩ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/698914/
দেশের শেয়ারবাজারে জাল কাগজ দিয়ে ভুয়া বিও অ্যাকাউন্ট খুলে মাস্টার ফিড অ্যাগ্রোটেক নামে একটি এসএমই কোম্পানির মৃত পরিচালকের শেয়ার বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ভয়াবহ এ জালিয়াতির ঘটনায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছে ফার্স্ট ক্যাপিটাল নামে একটি ব্রোকারেজ হাউজ।
কমিশন বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। ১৮ জুলাই ফার্স্ট ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাউসার আল মামুন এ ব্যাপারে মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল করিম শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ফার্স্ট ক্যাপিটালের অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফার্স্ট ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাউসার আল মামুন স্বাক্ষরিত বিএসইসিতে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মাস্টার ফিড অ্যাগ্রোটেকের পরিচালক ছিলেন রফিকুল আলম। সম্প্রতি তিনি মারা যান। তার নামে বরাদ্দ ৭০ লাখ ৫০ শেয়ার আত্মসাৎ করছে একটি চক্র।
এই শেয়ারের বর্তমান বাজারমূল্য ৯ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে চলতি বছরের ৫ মার্চ উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন নামে একজন নারী পাসপোর্ট এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেক দিয়ে ফার্স্ট ক্যাপিটালে বিও অ্যাকাউন্ট খোলেন। দুই মাস পর ওই অ্যাকাউন্টে মাস্টার ফিড অ্যাগ্রোটেকের ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৫০০টি শেয়ার জমা হয়। এরপর ৪ এপ্রিল থেকে ২৩ মের মধ্যে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭০৮টি শেয়ার বিক্রি করে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা নিয়ে যায়।
পরপর বড় অঙ্কের টাকা তুলে নেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে অ্যাকাউন্টের তথ্য তলব করা হয়। এক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে, তা উম্মে হাবিবার নয়। তিনি নিজেকে উম্মে হাবিবার বোন ইভা আকতার বলে দাবি করেন। উম্মে হাবিবা নিজেকে মৃত পরিচালক রফিকুল ইসলামের স্ত্রী দাবি করেন।
কিন্তু বিও অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যে পাসপোর্ট নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে তার স্বামীর নাম মো. মোকাদ্দেস হোসাইন। দুজনের ঠিকানায়ও মিল নেই। এছাড়াও অ্যাকাউন্টের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়া হয়েছে মাস্টার ফিডের বর্তমান কোম্পানি সেক্রেটারি আবুল বাসারকে।
এক্ষেত্রে গ্রাহক পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ও নমিনিকেও চেনেন না। এমনকি উম্মে হাবিবা তার শ্বশুরের নামও বলতে পারেননি বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ডকুমেন্টের ক্ষেত্রেও জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় মাস্টার ফিডের কোম্পানি সেক্রেটারি আবুল বাসার ব্রোকারেজ হাউজে ফোন করে জানান, গ্রাহক উম্মে হাবিবা অসুস্থ। তাকে ছাড়াই পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমেই লেনদেন নিষ্পত্তি করতে হবে। এতে ব্রোকারেজ হাউজ রাজি না হওয়ায় ১৬ জুলাই মাস্টার ফিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কবির হোসেন ৪/৫ জনকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে সশরীরে গিয়ে লেনদেন নিষ্পত্তি করতে বলেন।
সে সময়ে বোরকা পরা অবস্থায় শুধু চোখ খোলা একজনকে উম্মে হাবিবা হিসাবে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে অ্যাকাউন্টের ডকুমেন্ট চাইলে তারা গ্রহণযোগ্য কোনো তথ্য দিতে পারেননি। ফার্স্ট ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাউসার আল মামুন যুগান্তরকে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
উম্মে হাবিবার নামে বিও অ্যাকাউন্টে যে মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেখানে যুগান্তরের পক্ষ থেকে বারবার কল করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
তবে মাস্টার ফিডের কোম্পানি সেক্রেটারি আবুল বাসার যুগান্তরকে বলেন, এখানে কোনো কাগজপত্র জালিয়াতি করা হয়নি। সব বৈধ কাগজের মাধ্যমেই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। তিনি বলেন, রফিকুল আলম আমাদের কোম্পানি পরিচালক ছিলেন। গত বছর তিনি মারা যান। তার মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ স্ত্রী উম্মে হাবিবাকে নমিনি হিসাবে দিয়েছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রীর নামের ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে তিনি (হাবিবা) টাকা নিতে চেয়েছেন।
পাসপোর্ট এবং ন্যাশনাল আইডি কার্ডে উম্মে হাবিবার স্বামীর নাম দুই রকম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, উম্মে হাবিবার আগে একটি বিয়ে হয়েছিল। পাসপোর্টে সেই স্বামীর নাম রয়েছে। পরে তিনি রফিকুল আলমকে বিয়ে করেন। সেই সময় এনআইডি কার্ডে স্বামীর নাম পরিবর্তন করা হয়। তবে ব্রোকারেজ হাউজকে তিনি কোনো ধরনের হুমকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন।