নির্বাচনের পর শেয়ারবাজারে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে গতকাল সোমবার। নির্বাচনের পর প্রথম কার্যদিবসে এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৫ পয়েন্ট বেড়েছে। গত কয়েক মাসের মধ্যে এটিই ডিএসইএক্স সূচকের সর্বোচ্চ উত্থান। তবে সূচক বাড়লেও সেই তুলনায় লেনদেন খুব বেশি বাড়েনি।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল দিন শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৭০ পয়েন্টে। গত দুই মাসের মধ্যে এটিই সূচকটির সর্বোচ্চ অবস্থান। এর আগে সর্বশেষ গত ৯ নভেম্বর ডিএসইএক্স সূচকটি ৬ হাজার ২৭১ পয়েন্টে ছিল।
বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় জানা যায়, নির্বাচন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের শঙ্কা ছিল। বড় ধরনের কোনো সংঘাত, সহিংসতা ছাড়া নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা কিছুটা শঙ্কামুক্ত হয়েছেন। ফলে নির্বাচনের আগে যেসব ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ এখন সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। তার প্রভাব গতকালের বাজারে দেখা গেছে। তবে নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ এখনো অপেক্ষায় রয়েছেন। বাজারের ঊর্ধ্বগতি যদি কয়েক দিন টেকসই হয়, তাহলে তারাও সক্রিয় হবেন বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এদিকে গতকালের বাজারে ব্যক্তিশ্রেণির মধ্যম মানের বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও বাজারে সক্রিয় ছিল। একাধিক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এদিন বাজারে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছেন বলে জানা গেছে। বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংক এদিন বাজারে বড় বিনিয়োগ করে।
ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেনে শীর্ষ পাঁচ ব্রোকারেজ হাউস ছিল লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ, ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ, ইবিএল সিকিউরিটিজ, প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ ও ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ। এর মধ্যে গতকাল সবচেয়ে বেশি শেয়ার কিনেছে প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ। কেনার চেয়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল খুবই কম। এর বাইরে ইবিএল সিকিউরিটিজও শেয়ার বিক্রির চেয়ে কিনেছে বেশি।
নির্বাচন নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে একটা শঙ্কা ছিল, সেটি অনেকটাই কেটে গেছে। তাই নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরা আবার সক্রিয় হতে শুরু করেছেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ গতকাল এককভাবে ১৮ কোটি টাকার বেশি শেয়ার কিনেছে। তার বিপরীতে বিক্রি করেছে মাত্র ৫ কোটি টাকার শেয়ার। সেই হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত ক্রয় বা নেট বাই ছিল ১৩ কোটি টাকা। আর ইবিএল সিকিউরিটিজ ১৯ কোটি টাকার শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেছে ১৫ কোটি টাকার শেয়ার।
জানতে চাইলে ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ছায়েদুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল আমাদের নিজস্ব বিনিয়োগ ছিল কম, সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই বেশি শেয়ার কিনেছেন। সেই তুলনায় বিক্রি করেছেন কম। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মাঝারি পর্যায়ের ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের মধ্যেই শেয়ার কেনার আগ্রহ ছিল বেশি।’
নির্বাচনের পর বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার আগ্রহ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে ছায়েদুর রহমান বলেন, নির্বাচন নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে একটা শঙ্কা ছিল, সেটি অনেকটাই কেটে গেছে। নির্বাচনে বড় ধরনের কোনো সংঘাত, সহিংসতার ঘটনাও ঘটেনি। তাই নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরা আবার সক্রিয় হতে শুরু করেছেন।
বাজারের ঊর্ধ্বমুখী ধারা কয়েক দিন অব্যাহত থাকলে ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীরাও বাজারে সক্রিয় হবেন বলে মনে করেন ছায়েদুর রহমান।
এদিকে বেসরকারি একটি ব্যাংক গতকাল শেয়ারবাজারে ১০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। ব্লক মার্কেটের মাধ্যমে ব্যাংকটি একটি ভালো মৌল ভিত্তির বহুজাতিক কোম্পানির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার কিনেছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাজারের ব্লক মার্কেটে গতকাল প্রায় ৪১ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ সাড়ে ৯ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে বিএসআরএম লিমিটেডের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পৌনে ৮ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে গ্রামীণফোনের। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়েছে সী পার্ল বিচ রিসোর্টের। বাজারসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ব্লক মার্কেটে সী পার্লে হাতবদল হওয়া শেয়ার একাধিক বিনিয়োগকারীর মধ্যে হাতবদল হয়েছে।
ঢাকার বাজারে গতকাল দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৪১ কোটি টাকা, যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ৯৭ কোটি টাকা বেশি। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাজারের ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকলে লেনদেনও ধীরে ধীরে বাড়বে।
source: prothomalo.com
sokriyo hause brokerage