Source: https://bonikbarta.net
Summit Towers Limited Bond Private Placement
‘আয়কর আইন-২০২৩’ অনুযায়ী সঠিকভাবে রিটার্ন প্রস্তুত করার জন্য বেশ কিছু পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। জুলাই থেকে আইনটি কার্যকর হলেও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন এস আর ও আসছে। এই নতুন আইনে আয়ের উপস্থাপন ও করহারে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে, অডিটের ঝুঁকি এড়াতে সঠিক নিয়মকানুন ভালভাবে বুঝে আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত করতে হবে।
ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতার কর রেয়াতের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজগুলোতে বিনিয়োগ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অনুমোদিত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম। স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে যে কোন করদাতা শেয়ার বা স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড, সরকারি সিকিউরিটিজ (ট্রেজারি বন্ড), কর্পোরেট বন্ড, সুকুক, ইটিএফ, ডিবেঞ্চার এবং অ-তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ড বা ইউনিট ফান্ড ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করতে পারে। এই খাতে বিনিয়োগ থেকে করদাতা সর্বোচ্চ পরিমাণ কর রেয়াত বা কর ছাড় সুবিধা পায়। এছাড়াও এই বিনিয়োগ থেকে মূলধনী আয়ের পাশাপাশি নগদ লভ্যাংশ / সুদ বা মুনাফা অর্জিত হয়।
বর্তমানে ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যেকোনো বিনিয়োগকারী ঝুঁকিমুক্ত সরকারি ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ “ট্রেজারি বন্ড” এর প্রাইমারি অকশন এবং সেকেন্ডারি উভয় মার্কেটে বিনিয়োগ করতে পারছে।
শেয়ারবাজার থেকে করদাতার বিনিয়োগ ও প্রাপ্তিগুলো সঠিকভাবে আয়কর রিটার্নে উপস্থাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য করদাতাকে তার ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান থেকে আয়কর সনদপত্র, ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট বা লভ্যাংশ সংক্রান্ত বিবরনী, হিসাববিবরনী বা লেজার, ৩০ জুনের পোর্টফলিও এবং ব্যাংক থেকে ব্যাংক একাউন্টের হিসাববিবরনী সংগ্রহ করে রিটার্নের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।
শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ প্রদর্শন
স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজগুলোতে নিবাসী ও অনিবাসী বাংলাদেশী স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা কর রেয়াত সুবিধার জন্য যেকোনো পরিমাণ অর্থ যে কোনো সিকিউরিটিজে আয়বর্ষে বিনিয়োগ করে ৩০ জুন পর্যন্ত ধারণ করতে হবে।
আয়কর রিটার্ন [আইটি-১১গ (২০২৩)] এর তফসিল ৫ এ আয়বর্ষে করদাতার প্রকৃত বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে।
শেয়ারবাজার থেকে প্রাপ্ত মূলধনী আয়ের উপর করের প্রয়োগ
এস.আর.ও নং ১৯৬-আইন/আয়কর/২০১৫ অনুযায়ী সরকারি সিকিউরিটিজ ব্যতীত অন্যান্য যেকোন সিকিউরিটিজ স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে লেনদেন বা হস্তান্তরের থেকে সৃষ্ট মূলধনী আয় ব্যক্তিশ্রেণীর সাধারণ করদাতাদের জন্য সম্পূর্ণ কর অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ শেয়ার বা স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদি সিকিউরিটিজ থেকে অর্জিত মূলধনী আয় পূর্বের ন্যায় এখনও করমুক্ত।
আয়কর রিটার্ন [আইটি-১১গ (২০২৩)] ‘কর অব্যহতি প্রাপ্ত আয়ের’ সাথে যুক্ত করে প্রদর্শন করতে হবে।
উল্লেখ্য, কোম্পানি বা ফার্মের ক্ষেত্রে মূলধনী আয়ের উপর করহার ১০%; এবং ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক, বীমা, লিজিং কোম্পানি, পোর্টফলিও ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, স্টক ব্রোকার বা স্টক ডিলার, কোম্পানির স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার বা শেয়ারহোল্ডার ডিরেক্টর, সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষের যে কোন সময় তালিকাভুক্ত কোম্পানি পরিশোধিত মূলধনের ১০% এর অধিক শেয়ার ধারণকারীদের ক্ষেত্রে মূলধনী আয়ের উপর করহার ৫%।
সরকারি সিকিউরিটিজসহ অন্যান্য সম্পত্তি হস্তান্তর থেকে মূলধনী আয়ের উপর করহার
আয়কর আইন ২০২৩ এর সপ্তম তফসিল অনুযায়ী মূলধনী আয়ের উপর করহার ১৫%। তবে কোম্পানি ব্যতীত অন্যান্য করদাতার ক্ষেত্রে হস্তান্তরকৃত মূলধনী পরিসম্পদ অর্জন বা প্রাপ্তি অনধিক ৫ বছর হলে মোট আয়ের সাথে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং নিয়মিত হারে কর প্রদান করতে হবে।
তবে ধারা-১২৫ এর জমি, ফ্ল্যাট, ভবন, অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্লোর ও কোনো স্থাপনার নিবন্ধনে উৎসে পরিশোধিত কর চূড়ান্ত কর হিসাবে বিবেচনা করা হবে (এস আর ও নং ২৮৬) অর্থাৎ এই ধরনের সম্পত্তি বিক্রির ফলে অর্জিত মূলধনী আয়ের উপর বিক্রেতাকে অতিরিক্ত কর প্রদান করতে হবে না।
আয়কর রিটার্ন [আইটি-১১গ (২০২৩)] ‘মোট আয়ের বিবরনী’ এর ৫ নং মূলধনী আয় হিসাবে উল্লেখ করতে হবে।
সঞ্চয়পত্রের সেকেন্ডারি মার্কেট নেই সেজন্য মূলধনী আয় বা ক্ষতি হওয়ার সুযোগ নেই।
মূলধনী ক্ষতির সমন্বয়
ধারা-৭০ অনুযায়ী যে কোন মূলধনী ক্ষতি কোন অবস্থাতেই মোট আয়ের সাথে সমন্বয় করা যাবে না। মূলধনী ক্ষতি মূলধনী আয়ের বিপরীতে সমন্বয় করতে হয়।
এক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন [আইটি ১০ বি (২০২৩)] এর পরিসম্পদ দায় ও ব্যয় বিবরনীর ৪ (খ) এ উল্লেখ করে প্রদর্শন করতে হবে।
নগদ লভ্যাংশ/সুদ বা মুনাফার উপর করের প্রয়োগ
ধারা-১০৬ অনুযায়ী সিকিউরিটিজের সুদ বা মুনাফা থেকে ৫% এবং ধারা-১১৭ অনুযায়ী লভ্যাংশের উপর ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের ১০% (টিন না থাকলে ১৫%) এবং কোম্পানীর ক্ষেত্রে ২০% হারে উৎসে করকর্তন করে রাখা হয়।
ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতার এই ধরনের আয় করযোগ্য আয়ের সাথে যুক্ত করে নিয়মিত হারে কর নির্ধারণ করতে হবে এবং এক্ষেত্রে উৎসে কর্তনকৃত কর সমন্বয় করা যাবে। উল্লেখ্য, নতুন আইনে লভ্যাংশ বাবদ সম্পূর্ণ অর্থ করযোগ্য আয় করা হয়েছে। অর্থাৎ বিগত বছরগুলোতে যে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ লভ্যাংশ করমুক্ত ছিল সেটি এবার বাতিল হয়েছে।
ট্রেজারি বন্ডের সুদের উপর বাংলাদেশ ব্যাংক ৫% হারে কর কর্তন করে অবশিষ্ট অংক করদাতার ব্যাংক একাউন্টে জমা করা হয়।
আয়কর রিটার্ন [আইটি-১১গ (২০২৩)] মোট আয়ের বিবরণীতে ‘আর্থিক পরিসম্পদ হতে আয়’ অংশে উল্লেখ করতে হবে।
ব্যাংক সুদের উপর উৎসে কর কর্তন
শেয়ারবাজারে বিও একাউন্ট খোলার জন্য ব্যাংক একাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক। ধারা-১০২ অনুযায়ী সঞ্চয়ী আমানত ও স্থায়ী আমানত ইত্যাদি হতে সুদ বা মুনাফার উপর উৎসে ১০% (কোম্পানীর ক্ষেত্রে ২০%) হারে কর কর্তন করা হয়। আয়কর রিটার্নে করদাতার ব্যাংক একাউন্টে প্রাপ্ত সুদ ‘আর্থিক পরিসম্পদ হতে আয়’ অংশে উল্লেখ করতে হবে এবং উৎস কর বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ প্রমাণ (ব্যাংক বিবরনী অথবা আয়কর সনদপত্র) সংযুক্ত করতে হবে।
লভ্যাংশের উপর কর, সিকিউরিটিজের সুদ বা মুনাফার উপর কর, ব্যাংক সুদের উপর কর ইত্যাদি ‘নূন্যতম কর’ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। উৎসে কর্তনকৃত কর বিবেচনায় নিয়ে রিটার্ন প্রস্তুত করতে হবে অন্যথায় করের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। সঞ্চয়পত্রের সুদের উপর উৎস ১০% হারে কর কর্তন করা হয় যা চূড়ান্ত কর হিসাবে বিবেচ্য হবে।
ওয়ারেন্ট বা সনদ সংগ্রহ
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজগুলোর লভ্যাংশ, সুদ বা মুনাফা সাধারণত ইস্যুয়ার কোম্পানি উৎস করকর্তন করে অবশিষ্ট অংশ সরাসরি করদাতার ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে দেয়। করদাতাকে প্রাপ্ত লভ্যাংশের বিপরীতে ইস্যুয়ার কোম্পানি থেকে ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট সংগ্রহ করে আয়কর রিটার্নে সংযুক্ত করতে হয়। (ইস্যুয়ার কোম্পানি ইমেইলের মাধ্যমেও করদাতাকে ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট সরবরাহ করে)
তবে যে সকল বিনিয়োগকারী করদাতা অথবা মার্জিন ব্যবহারকারী করদাতা তার ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লভ্যাংশ সংগ্রহ করে; সেক্ষেত্রে ইস্যুয়ার কোম্পানি ঐ বিনিয়োগকারীর উৎসে করকর্তন করে অবশিষ্ট অংশ ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিও একাউন্টে পাঠিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলো আয়কর সনদপত্র এবং ডিভিডেন্ড লেজার বা লভ্যাংশ সংক্রান্ত হিসাব বিবরনীর মাধ্যমে একসাথে গ্রাহককের মোট লভ্যাংশ ও মোট কর্তনকৃত উৎস করের তথ্য সরবরাহ করে।
ট্রেজারি বন্ডের সুদের উপর উৎস কর ব্যাংক অথবা ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
কর রেয়াত বা কর ছাড় গননা
আয়কর আইন-২০২৩ এর ধারা-৭৮ অনুযায়ী নিবাসী ও অনিবাসী বাংলাদেশী স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা কর রেয়াত সুবিধায় নিম্নোক্ত হারে দাবি করতে পারবে-
ক) মোট আয়ের ৩% (এক্ষেত্রে মোট আয় থেকে কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয়, নূন্যতম কর প্রযোজ্য এইরূপ আয়, হ্রাসকৃত করহার প্রযোজ্য এইরূপ আয় বাদ দিয়ে পরিগণিত হবে); অথবা
খ) প্রকৃত মোট বিনিয়োগ ও ব্যয়ের ১৫% (এক্ষেত্রে কোনো আয়বর্ষে ষষ্ঠ তফসিল এর অংশ ৩ অনুযায়ী মোট বিনিয়োগ ও ব্যয়ের পরিমাণই হবে করদাতার প্রকৃত মোট বিনিয়োগ ও ব্যয়); অথবা
গ) ১০ (দশ) লক্ষ টাকা, এই তিনটি শর্তের মধ্যে যেটি কম সেই পরিমাণ অর্থ করদাতা কর রেয়াত হিসাবে দাবি করতে পারবে।
কর রেয়াতের জন্য অনুমোদিত বিনিয়োগ ও ব্যয়সমূহ
আয়কর আইন-২০২৩ এর তফসিল-০৬, অংশ-০৩ অনুযায়ী অনুমোদিত বিনিয়োগ ও ব্যয় (চাঁদা ও দান) নিম্নরূপ:
অনুমোদিত বিনিয়োগসমূহ-
১) স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোনো সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের সম্পূর্ণ অর্থ;
২) সরকারি সিকিউরিটিজ (সঞ্চয়পত্র, ট্রেজারি বিল, ট্রেজারি বন্ড) এ সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা।
৩) স্বীকৃত ইউনিট সার্টিফিকেট, মিউচুয়াল ফান্ড, ইটিএফ, যৌথ বিনিয়োগ স্কিম ইউনিট সার্টিফিকেটে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা;
৪) ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডিপিএস সর্বোচ্চ ১২০,০০০ টাকা;
৫) জীবন বীমার বা চুক্তিভিত্তিক “deferred annuity’র প্রিমিয়াম এর পলিসি ভ্যালুর ১০%;
অনুমোদিত চাঁদা ও দানসমূহ-
৬) ভবিষ্যৎ তহবিল আইন ১৯২৫ অনুসারে প্রদেয় চাঁদা;
৭) স্বীকৃত ভবিষ্যৎ তহবিলে করদাতা ও নিয়োগকারী কর্তৃক পরিশোধিত চাঁদা;
৮) অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিলে করদাতার পরিশোধিত চাঁদা;
৯) স্বীকৃত যাকাত তহবিল বা দাতব্য তহবিলে প্রদত্ত যাকাত/চাঁদা বা দান;
১০) সরকার অনুমোদিত জনকল্যাণ বা শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানে দান;
১১) সরকার কর্তৃক কোন ব্যক্তির বেতন হতে বার্ষিক বৃত্তি বা স্ত্রী-সন্তানের নিরাপত্তা বিধানে কর্তিত অর্থ (প্রাপ্য বেতনের ১/৫);
১২) হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের কোন সদস্যের জীবন বীমা প্রিমিয়াম/ পরিশোধিত সম্পূর্ণ অর্থ;
১৩) বোর্ডের অনুমোদিত ও অন্তত ১ বছর পূর্বে সিটি করপোরেশনের বাহিরে স্থাপিত দাতব্য হাসপাতালে দান;
১৪) বোর্ড ও সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর অনুমোদিত ও অন্তত ১ বছর পূর্বে স্থাপিত প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংগঠনে দান;
১৫) স্ত্রী-সন্তান-নির্ভরশীল কারও কল্যাণে বোর্ড অনুমোদিত তহবিল বা বিমা স্কিমে প্রদত্ত অর্থ;
১৬) স্বাধীনতা যুদ্ধ বা জাতির পিতা স্মরণে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত অনুদান।
আয়কর রিটার্ন [আইটি-১১গ (২০২৩)] এর তফসিল ৫ এ আয়বর্ষে করদাতার প্রকৃত বিনিয়োগ ও ব্যয়ের পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে।
আইটি ১০ বি (২০২৩) পরিসম্পদ দায় ও ব্যয় বিবরণী
করদাতার আয়বর্ষের শেষ দিনে মোট পরিসম্পদ প্রদর্শিত হয় আইটি ১০ বি (২০২৩)। এই অংশে অন্যান্য সকল সম্পদ দায় ও ব্যয়ের পাশাপাশি শেয়ারবাজার থেকে মূলধনী আয় ১(খ), মূলধনী ক্ষতি ৪(খ) এবং ইক্যুইটি বা শেয়ারবাজারে প্রকৃত আর্থিক সম্পদ ৮(চ)(অ) উপস্থাপন করতে হয়।
আইটি ১০ বি (২০২৩) এর পরিসম্পদ দায় ও ব্যয় বিবরণীতে আর্থিক সম্পদসমূহে ৮(চ) (অ) ক্লোজিং ইক্যুইটি প্রদর্শন করলে করদাতার শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের প্রকৃত সম্পদ প্রদর্শন হয়ে যায়।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
করদাতা কর্তৃক রিটার্ন দাখিলের সর্বশেষ তারিখ হলো করদিবস। কর দিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করলে কোনো প্রকার জরিমানা বা অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে হয় না। স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের জন্য প্রতি বছরের ৩০ নভেম্বর করদিবস।
তবে নতুন করদাতার ক্ষেত্রে কর দিবস হবে ৩০ জুন ২০২৪। নতুন আইনে আবেদনের মাধ্যমে সময় বৃদ্ধির সুযোগ রাখা হয় নাই। যদি করদাতা যুক্তি সংগত কারনে দেশের বাহিরে অবস্থান করেন; তাহলে ঐ করদাতা দেশে ফেরার ৯০ তম দিন হবে তার কর দিবস।
স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাগণ স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল করবে। কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয় থেকে সুবিধা নিতে হলে করদাতাকে কর দিবসের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে হবে। কর দিবস পরবর্তী সময়ে রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয় মোট আয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং নিয়মিত হারে কর পরিগণনাসহ প্রতি মাসে ৪% হারে জরিমানা ধার্য হবে।
চাকরি থেকে কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয়
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সরকার কর্তৃক প্রদত্ত মূল বেতন, উৎসব ভাতা ও বোনাস ব্যতীত অন্যান্য ভাতা ও সুবিধাদি আয়কর হইতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
বেসরকারি চাকুরীজীবি করদাতার বেতনখাতে করমুক্ত আয়ের সীমা মোট আয়ের এক-তৃতীয়াংশ অথবা ৪৫০,০০০ টাকা এর মধ্যে যেটি কম। অর্থাৎ যাদের বাৎসরিক আয় ১৩,৫০,০০০ টাকার বেশি তাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৪৫০,০০০ টাকা। আর যাদের আয় ১৩,৫০,০০০ টাকার কম তাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা হবে মোট আয়ের এক-তৃতীয়াংশ।
ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা
স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে ৩৫০,০০০ টাকা; মহিলা করদাতা বা ৬৫ বছর উর্ধ্ব পুরুষ করদাতার ক্ষেত্রে ৪০০,০০০ টাকা; তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী করদাতার ক্ষেত্রে ৪৭৫,০০০ টাকা; গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার ক্ষেত্রে ৫০০,০০০ টাকা।
NBR TAX DSE CSE SHAREMARKET
source: tbsnews.net
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের বিরুদ্ধে লভ্যাংশ নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। ২০২২ সালের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশ এখনও পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক হিসাবে প্রেরণ করেনি কোম্পানিটি।
রোববার (১৯ নভেম্বর) পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান বরাবর কোম্পানিটির একজন শেয়ারহোল্ডার এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, ২০২২ সালে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে জ্বালানি খাতে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান লুব-রেফ বাংলাদেশ। গত বছরের (২০২২ সাল) ২৭ ডিসেম্বর কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএমে) ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদনও করা হয়।
বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই শেয়ারহোল্ডারদের ব্যাংক হিসাবে লভ্যাংশ প্রেরণের বাধ্যবাধকতা ছিল লুব-রেফের। তবে দীর্ঘ ৯ মাস অতিবাহিত হলেও অনেক শেয়ারহোল্ডার এখনো কোম্পানিটির লভ্যাংশ পাননি। এক্ষেত্রে লুব-রেফ বিএসইসির নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
লুব-রেফের লভ্যাংশ না পেয়ে দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মোহাম্মদ শেখ-উল-ইসলাম নামে কোম্পানিটির একজন শেয়ারহোল্ডার। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, লুব-রেফ ২০২২ সালের জন্য যে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, তা কিছু বিনিয়োগকারী পেয়েছে। আবার অনেকেই লভ্যাংশ এখনো পায়নি। ব্যাংক স্টেটমেন্ট চেক করে দেখি লুব-রেফ আমার অ্যাকাউন্টেও লভ্যাংশ পাঠায়নি। বিষয়টি নিয়ে কোম্পানি সচিবকে অনেকবার কল দিয়েছি, কিন্তু তিনি আমার ফোন রিসিভ করেননি। পরে তাদের ঢাকা অফিসে গিয়ে আমি যোগাযোগ করি। সেখান থেকে আমাকে কোম্পানি সচিবের অন্য একটি নম্বর দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে অফিসে গেলে কোম্পানি সচিব আমার বিও হিসাবের ডিটেইলস চান। অক্টোবরের মধ্যে ডিভিডেন্ড আমার ব্যাংক হিসাবে দেওয়ার আশ্বাস দিলও পরবর্তীতে উনি আমার কল ধরেননি। যখন দেখলাম ২০২২ সালের ডিভিডেন্ড না দিয়েই তারা ২০২৩ সালের লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে তখন বাধ্য হয়েই বিএসইসিতে অভিযোগ করেছি।
মোহাম্মদ শেখ-উল-ইসলামের অভিযোগের বিষয়ে জানতে লুব-রেফের কোম্পানি সচিব মো. মশিউর রহমানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। ফোন রিসিভ করে প্রথমে মশিউর রহমান পরিচয় নিশ্চিত করেন তিনি। তবে প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে নিজের নাম কবির দাবি করে তিনি বলেন, মশিউর রহমান ছুটিতে আছেন। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ বা ডিভিডেন্ডের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।
লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়েও পরিশোধ না করা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, লুব-রেফ বাংলাদেশ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে কয়েক বছর আগেই। ভেবেছিলাম কোম্পানিটি ভালো কিছু করবে। লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়ে পরিশোধ না করার অর্থ হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা। এ ধরণের কোম্পানিগুলোর কারণেই পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট তৈরি হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, এজিএমে অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যেই কোম্পানিগুলোকে লভ্যাংশ পরিশোধ করতে হবে। লভ্যাংশ না পেয়ে কোন বিনিয়োগকারী যদি অভিযোগ করেন, কমিশন অবশ্যই অভিযোগ খতিয়ে দেখে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বিএসইসি সবসময় কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে, ২০২২ সালের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীরা না পেলেও ২০২৩ সালের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে লুব-রেফ। এ বছর শেয়ারহোল্ডারদের নগদ ২ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি। সর্বশেষ হিসাব বছরের (৩০ জুন, ২০২৩) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির আয়েও ভাটা পড়েছে। ২০২৩ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৪১ পয়সা। আগের বছর ইপিএসের পরিমাণ ছিল ২ টাকা ১৩ পয়সা।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় লুব-রেফ বাংলাদেশ লিমিটেড। সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কাছে কোম্পানিটির ৫৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ধারণ করছেন ৩৫ দশমিক ৭০ শতাংশ শেয়ার। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন। বাকি দশমিক ০৬ শতাংশ শেয়ার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।
LRBD LUB REF DIVIDEND NON PAYMENT COMPLAIN DSE CSE SHAREMARKET
source: barta24.com