Home Featured অভিহিত মূল্যের নিচে ৫৩টি কোম্পানির শেয়ার

অভিহিত মূল্যের নিচে ৫৩টি কোম্পানির শেয়ার

by fstcap

দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৫৩টি কোম্পানির শেয়ার এখন ফেসভ্যালু বা অভিহিত মূল্যের কমে লেনদেন হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৬টি ব্যাংকের শেয়ারদর ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে। ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসের পরও এ অবস্থা তৈরি হয়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল রোববার লেনদেন শেষে এসব তথ্য জানা গেছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতা চলছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও অস্থিরতা কাটেনি। বাজারে এক দিন উত্থান হলে দুই দিন পতন হয়। এ ছাড়া এতগুলো কোম্পানির শেয়ারদর ফেসভ্যালুর নিচে থাকার কারণে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আবার মিউচুয়াল ফান্ডকে হিসাবে ধরলে এ সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, শুধু তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ৫৩টির শেয়ারের দাম এখন ১০ টাকার নিচে। এর মধ্যে ব্যাংক খাতের ১৬টি, বস্ত্র খাতের ১৪টি, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ১৩টি, ওষুধ ও রসায়ন খাতের তিনটি, বিবিধ খাতের একটি, প্রকৌশল খাতের পাঁচটি এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের একটি কোম্পানি। কোম্পানিগুলোর এমন অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী শেয়ার বিজকে বলেন, এসব কোম্পানির মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করে না। আবার ঠিকমতো লভ্যাংশ দেয় না। এমনকি লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েও অনেক সময় বিতরণ করা হয় না। এসব কারণে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কমছে।

বিগত সরকারের আমলে দেশের পুঁজিবাজারে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে নানা সংস্কারে হাত দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরপরও পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষ আস্থা পাচ্ছে না। এতে ক্রমাগতভাবে দরপতনের ফলে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ব্যাংক খাতের যে ১৬টি কোম্পানির শেয়ার বর্তমানে অভিহিত মূল্যের নিচে লেনদেন হচ্ছে সেগুলো হলোÑএবি ব্যাংকের ৭ টাকা ৪০ পয়সা, এক্সিম ব্যাংকের ৬ টাকা ৭০ পয়সা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৪ টাকা ৮০ পয়সা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৪ টাকা, আইসিবি ৩ টাকা, আইএফআইসি ৬ টাকা ৭০ পয়সা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৪ টাকা ৬০ পয়সা, এনআরবিসি ব্যাংকের ৮ টাকা ৫০ পয়সা, ওয়ান ব্যাংকের ৮ টাকা ৯০ পয়সা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৮ টাকা ৯০ পয়সা, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের ৯ টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৯ টাকা ৩০ পয়সা, সাউথইস্ট ব্যাংকের ৮ টাকা ৭০ পয়সা, স্টান্ডার্ড ব্যাংকের ৬ টাকা, ইউসিবির ৯ টাকা ২০ পয়সা এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের ৪ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। এর বাইরে ১০ থেকে ১১ টাকার মধ্যে রয়েছে আরও দুটি ব্যাংকের শেয়ারের দাম। সে হিসাবে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১৮টিরই দাম এখন অভিহিত মূল্যের নিচে বা কাছাকাছি।

বস্ত্র খাতের কোম্পানির মধ্যে যে ১৪টির দাম অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে এসেছে। সেগুলো হলোÑআলিফ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ৭ টাকা ৫০ পয়সা, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের ৪ টাকা ৪০ পয়সা, ডেল্টা স্পিনিংয়ের ৭ টাকা ১০ পয়সা, ফেমিলি টেক্সটাইলের ২ টাকা ৮০ পয়সা, জেনারেশন নেক্সটের ৩ টাকা ৩০ পয়সা, ম্যাকসন স্পিনিংয়ের ৭ টাকা ১০ পয়সা, নূরানী ডাইংয়ের ৪ টাকা ২০ পয়সা, প্যাসিফিক ডেনিমসের ৭ টাকা ৭০ পয়সা, রিজেন্ট টেক্সটাইলসের ৪ টাকা ৩০ পয়সা, রিং শাইনের ৪ টাকা ১০ পয়সা, তাল্লু স্পিনিংয়ের ৬ টাকা ৪০ পয়সা, তুং হাই নিটিংয়ের ৩ টাকা ১০ পয়সা, ভিএফএস থ্রেডের ৮ টাকা ৬০ পয়সা এবং জাহিন স্পিনিংয়ের ৮ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে।
এ ছাড়া ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফেসভ্যালুর নিচে রয়েছে ১৩টির শেয়ারদর। এগুলোর মধ্যে বে-লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের শেয়ার ৬ টাকা ১০ পয়সা, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিডাল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) ৭ টাকা ৯০ পয়সা, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৩ টাকা ২০ পয়সা, ফাস ফাইন্যান্সের ৩ টাকা ৭০ পয়সা, ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ৩ টাকা ৫০ পয়সা, জিএসপি ফাইন্যান্সের ৬ টাকা ২০ পয়সা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ৩ টাকা ৭০ পয়সা, মাইডাস ফাইন্যান্সের ৮ টাকা ২০ পয়সা, ফিনিক্স ফাইন্যান্সের ৪ টাকা ৩০ পয়সা, পিপলস লিজিংয়ের ২ টাকা ৫০ পয়সা, প্রিমিয়ার লিজিংয়ের ৩ টাকা ৫০ পয়সা, প্রাইম ফাইন্যান্সের ৪ টাকা ৭০ পয়সা এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটালের শেয়ার ৬ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে।

প্রকৌশল খাতের পাঁচটির মধ্যে অ্যাপেলো ইস্পাতের শেয়ার ৪ টাকা ২০ পয়সা, অলিম্পিক এক্সেসরিজের ৯ টাকা ১০ পয়সা, রতনপুর স্টিলের ৯ টাকা ৯০ পয়সা, সুহƒদ ইন্ডাস্ট্রিজের ৭ টাকা ৯০ পয়সা এবং এসএস স্টিলের শেয়ার ৮ টাকা ৭০ পয়সায় অবস্থান করছে। এছাড়া জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের জিবিবি পাওয়ার অবস্থান করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। ওষুধ খাতের অ্যাক্টিভ ফার্মার শেয়ার ৯ টাকা, এএফসি এগ্রোর ৯ টাকা ৯০ পয়সা এবং কেয়া কসমেটিকসের শেয়ার ৫ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। আর বিবিধ খাতের ন্যাশনাল ফিড মিলস লিমিটেডের শেয়ারদর ৮ টাকা ৮০ পয়সায় অবস্থান করছে।

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, এসব কোম্পানির আয় নেই, আবার এগুলোর চাহিদাও নেই। তাই এসব কোম্পানির শেয়ারের প্রতি এখন আর মানুষের আগ্রহ নেই। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের পুঁজিবাজারে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন কমিশন পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং পুঁজিবাজারে আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষ পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স গঠন করে বিএসইসি। পরবর্তী সময়ে টাস্কফোর্সের পরামর্শে এবং তাদের কাজের সহযোগিতার জন্য পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করা হয়।

বিএসইসি’র মাধ্যমে গঠিত ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ ও ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ পুঁজিবাজারের সুশাসন উন্নত করা, অভ্যন্তরীণ সুশাসন শক্তিশালী করা এবং আন্তর্জাতিক মানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বেচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করাসহ সর্বোপরি দেশের পুঁজিবাজারের টেকসই সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বিএসইসি-সংশ্লিষ্টরা।    https://sharebiz.net/অভিহিত-মূল্যের-নিচে-৫৩টি/

sharebazar

You may also like