২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হয়েছিল একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেড। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বিনিয়োগকারীদের জন্য মাত্র শেয়ারপ্রতি ১০ পয়সা করে লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েছিল। সে হিসাবে মোট লভ্যাংশ দাঁড়ায় মাত্র সাড়ে ১৩ লাখ টাকা। পরিচালক বাদ দিয়ে হিসাব করলে লভ্যাংশের পরিমাণ হয় প্রায় ৯ লাখ টাকা। এ ঘোষণার কয়েক মাস পেরিয়ে গেল। এর মধ্যে দিয়ে আরেকটি অর্থবছর পেরিয়ে গেল। তবুও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ পরিশোধ করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়। ফলে সাধারণ বিনিয়োগাকারীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২১ সালের ১৯ জুলাইয়ে ৭৮৫তম সভায় প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৩০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেয় একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেডকে। অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দামে তিন কোটি সাধারণ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৩০ কোটি টাকা উত্তোলন করারা সুযোগ দেয়া হয় কোম্পানিটিকে। বিপরীতে গত ২২-২৩ অর্থবছরের বিনিয়োগকারীদের জন্য মাত্র শেয়ারপ্রতি ১০ পয়সা করে লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েছিল একমি পেস্টিসাইডস। সে হিসাবে মোট লভ্যাংশ দাঁড়ায় মাত্র সাড়ে ১৩ লাখ টাকা। এর মধ্য দিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পেরিয়ে গেল। তবুও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ পরিশোধ করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়। আর সমাপ্ত অর্থবছরের ভালো লভ্যাংশ না পাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন বিনিযোগকারীরা।
সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সদ্যসমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) একমি পেস্টিসাইডসের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৮৬ পয়সা এবং আগের হিসাববছরের একই সময়ে যা ছিল এক টাকা ২৯ পয়সা। আর সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১৭ পয়সা এবং আগের হিসাববছরের একই সময়ে যা ছিল ৩১ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে শেয়ারপ্রতি আয় কমেছে ৪৫ শতাংশেরও বেশি। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকা ৩৫ পয়সায়। এছাড়া ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাববছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের পাঁচ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে একমি পেস্টিসাইডস। তখন কোম্পানিটির ইপিএস ছিল এক টাকা ৫১ পয়সা এবং আগের হিসাববছরে যা ছিল ২ টাকা ১২ পয়সা। অন্যদিকে ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। অথচ পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে ৩০ জুন ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা ছিল ১৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল দুই টাকা এবং পুঞ্জীভূত মুনাফার পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
একমি পেস্টিসাইডসের একাধিক বিনিয়োগকারী এ প্রতিবেদককে বলেন, আইপিও আসা একটা কোম্পানি শেয়ারপ্রতি মাত্র ১০ পয়সা লভ্যাংশ দিতে পারে না। এটা মানা যায় না। একমি একটি ভালো গ্রুপ ছিল। তাদের উত্তরসূরি হয়ে একমি পেস্টিসাইড বিনিয়োগাকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। বিএসইসির উচিত এসব নিম্নমানের কোম্পানিগুলোর বোর্ড পুনর্গঠন করা। আর বিএসইেিত অনেক খারাপ লোক আছে, তাদেরও অপসারণ করতে হবে। ভালো লোক দিয়ে পরিচালনা করতে হবে। আইপিও ফান্ডের টাকা ব্যবহার শুরুর সময় অর্থাৎ ২০২১ সালের জানুযারি মাসে ভবন নির্মাণে দুই কোটি অগ্রিম দেখানো হচ্ছে। এর সাত মাস পর আগস্টে এসে দেখানো হয় ১০ কোটি টাকা ভবন নির্মাণের বিপরীতে অগ্রিম, যা রহস্যজনক। আর এত টাকা অগ্রিম দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। অথচ প্রকৃত ব্যয়ের কোনো হিসাব নেই। আমরা জানি বিল্ডিং নির্মাণর কাজই শুরু হয়নি।
এখানে হয়তো ভুয়া হিসাবের মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে, অথবা নিজের অন্য প্রতিষ্ঠানে টাকা বিনিয়োগ করে নিজেই সুবিধা ভোগ করছে। অথচ শফিক বসাক অ্যান্ড কোং ওআশরাফ উদ্দিন কোং কীভাবে এ ধরনের অডিট রিপোর্ট প্রদান করে, তা কমিশনের উচিত তদন্ত করা। এ বিষয়ে জানতে একমি পেস্টিসাইডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউর রহমান সিনহার ব্যবহƒত মুঠোফোন নাম্বারের একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে এ বিষয়ে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সেলিম রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা জুলাই মাস থেকে বিনিয়োগাকালীদের লভ্যাংশ বিতরণ শুরু করেছি। তবে ব্যাংকিং জটিলতার কারণে আমরা পুরোপুরি লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারিনি। তবে অন্য কারণে আমাদের জেড ক্যাটেগরি দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একমি পেস্টিসাইডসের অনুমোদিত মূলধন ১৫০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১৩৫ কোটি টাকা। জেড ক্যাটেগরির কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩১ শতাংশ ৮০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগাকারীদের ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫২ দশমিক ৫৮ শতাংশ শেয়ার মালিকানা রয়েছে।
acme pesticides limited dividend