দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের আর্থিক প্রতিবেদনে গরমিল দেখা গেছে। কোম্পানির দেখানো মজুদ পণ্যের অস্তিত্ব ও সঠিক মূল্য নিয়ে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত নয়। কারণ নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান দেরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া একই কারণে প্রতিষ্ঠানটির নগদ অর্থের সত্যতা যাচাই করতে পারেননি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে অবণ্টিত লভ্যাংশ নিজেদের কাছে ফেলে রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময় সর্বশেষ তিন অর্থবছরের (২০২০-২০২৩) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ। আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ন্যায় ২০২১-২২ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনেও প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান একই অভিযোগ খতিয়ে পেয়েছে।
কোম্পানিটির নিরীক্ষক জানিয়েছেন, আর্থিক প্রতিবেদনে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মজুত পণ্যের অস্তিত্ব ও সঠিক মূল্য নিয়ে তারা নিশ্চিত নয়। কারণ, কোম্পানিটির নিরীক্ষক হিসেবে তাদেরকে দেরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া একই কারণে নগদ অর্থের সত্যতা যাচাই করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার মজুত পণ্য ও ২০ লাখ টাকা নগদ অর্থ ছিল বলে আর্থিক প্রতিবেদনে দেখিয়েছে।
কোম্পানিটির নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মজুত পণ্যের সত্যতা নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। একই সঙ্গে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান কোম্পানির স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ নিশ্চিত হতে পারেনি। এ ছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে অবণ্টিত লভ্যাংশ নিজেদের কাছে ফেলে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছে কোম্পানিটির নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান।
নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বিবিধ খাতের এ কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের ৩০ জুন শেষে যে পরিমাণ মজুত পণ্য দেখানো হয়েছে তার সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি। কারণ চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি তারা (নিরীক্ষক) কারখানা পরিদর্শনে গিয়েও মজুত পণ্যের সত্যতা যাচাইয়ে বিকল্প নিরীক্ষা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেনি। নিরীক্ষক আরও জানিয়েছে, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ স্থায়ী সম্পদ কেনার তারিখ, ব্যয়, অবচয় হার, অবচয় শেষে মূল্য ইত্যাদি বিষয়ের ফিক্সড অ্যাসেট রেজিস্টার তাদেরকে দিতে পারেনি। ফলে নিরীক্ষক স্থায়ী সম্পদের মূল্যেও নিশ্চিত হতে পারেননি।
এদিকে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে (সিএমএসএফ) অবণ্টিত লভ্যাংশ হস্তান্তর করেনি। কোম্পানির কাছে ২৪ লাখ টাকার বেশি অবণ্টিত লভ্যাংশ রয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। গত ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে অপ্রদানকৃত অবস্থায় থাকার পরেও বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী সিএমএসএফে স্থানান্তর করেনি কোম্পানিটি।
এদিকে সম্প্রতি কোম্পানিটির পর্ষদে এসেছে পরিবর্তন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) দেওয়া তথ্যানুসারে, সাম্প্রতিক সময় কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল মুর্শেদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লতিফা বিনতে লুৎফর এবং পরিচালক ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী ও আসাদুর রহমান মির্জা তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং তাদের কাছে থাকা কোম্পানিটির শেয়ার মেহমুদ ইকুইটিস লিমিটেডের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। তাদের পরিবর্তে মেহমুদ ইকুইটিসের মনোনীত হিসেবে ড. এ কে এম সাহাবুব আলম পরিচালক/ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শওকত মেহমুদ ও নয়ন মাহমুদ পরিচালক হিসেবে যোগ দেন।
এদিকে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ সর্বশেষ তিন হিসাব বছরের জন্য (২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩) বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আলোচ্য তিন হিসাব বছরে কোম্পানিটি দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। লোকসানে জর্জরিত হওয়ায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ টানা কয়েক বছর তাদের আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করেনি।
নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২ টাকা ৪৯ পয়সা, আগের হিসাব বছরে এ লোকসান হয়েছিল ৩ টাকা ৭৮ পয়সা এবং ২০২০-২১ হিসাব বছরে ১ টাকা ৮৫ পয়সা লোকসান হয়। গত বছরের ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৪৯ পয়সায়, আগের বছর শেষে যা ছিল ১৯ টাকা ৯৯ পয়সায় এবং তারও আগে বছর শেষে ছিল ৩০ টাকা ৪২ পয়সায়। এর আগে ২০১৯-২০ সালের জন্য বিনিয়োগকারীদের ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের জন্য ৪ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ পায় বিনিয়োগকারীরা। তার আগের হিসাব বছরে ৮ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানি।
২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা। এবং পরিশোধিত মূলধন ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৭৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩ কোটি ৫২ লাখ ১৮ হাজার ৫৭টি। মোট শেয়ারের ৩০ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক ও বাকি ৭০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। গত এক বছরে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ শেয়ার সর্বনিম্ন ২৭ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৬১ টাকা ৪০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করেছে।
miracle industry bangladesh bd