ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বীমা কোম্পানি বাদে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দেশীয় উৎপাদন ও সেবা খাতসংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসের মুনাফার চিত্র বেশ হতাশাজনক। এমন ২৩০ কোম্পানির মধ্যে ৫১ শতাংশের হয় লোকসান হয়েছে, নতুবা আগের বছরের একই সময়ে মুনাফা কমেছে। আবার ১৬ শতাংশ কোম্পানি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আর্থিক হিসাব প্রকাশ করেনি। অর্থাৎ ৬৬ কোম্পানি নেতিবাচক ধারায়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত দেশীয় উৎপাদন ও সেবা খাতসংশ্লিষ্ট কোম্পানি মোট ২৩০টি। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত মোট ১৯১টি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এসব কোম্পানি মার্চ শেষে ৯ মাসের যে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) প্রকাশ করেছে, সে তথ্য পর্যালোচনায় এমন চিত্র মিলেছে। ৩৯টি কোম্পানি এখনও আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সর্বশেষ জানুয়ারি-মার্চ বা কোম্পানিগুলোর তৃতীয় প্রান্তিকের মুনাফার চিত্রও ছিল প্রায় একই রকম। ৪৮ শতাংশ কোম্পানি হয় লোকসান করেছে, অথবা মুনাফা কমেছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, উৎপাদন ও সেবা খাতের ৫৬ কোম্পানি হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) লোকসান করেছে। এসব কোম্পানির ২৩টি গত হিসাব বছরের একই সময়ে কম-বেশি মুনাফা করেছিল। চলতি হিসাব বছরের ৯ মাসে এসব কোম্পানির লোকসান দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। গত হিসাব বছরের একই সময়ে এসব কোম্পানির মোট লোকসান ছিল ৪৮০ কোটি টাকা। অবশ্য গত বছর মুনাফায় থাকা ২৩ কোম্পানির মোট মুনাফা ছিল ৭৪ কোটি টাকা।
তৃতীয় প্রান্তিকের হিসাব অনুযায়ী, ১৩৫ কোম্পানি মুনাফা করেছে। এর মধ্যে ৬১টি মুনাফা গত হিসাব বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। বিপরীতে ৭৩ কোম্পানির মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। একটি মুনাফা অপরিবর্তিত।
মুনাফায় থাকা কোম্পানিগুলোর মোট কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ২ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা, যা গত হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ নিট মুনাফা কমেছে ১ হাজার ১০২ কোটি টাকা প্রায় ৩৪ শতাংশ।
মুনাফায় থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দেড় শতাংশ মুনাফা কমেছে রেনাটা লিমিটেডের। কোম্পানিটির চলতি হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে ইপিএস হয়েছে ২২ টাকা ৯৫ পয়সা, যা গত হিসাব বছরে ছিল ২৩ টাকা ৩৪ পয়সা। টানা ৯ মাসের হিসাবে মুনাফা খানিকটা কমলেও তৃতীয় প্রান্তিকে এ কোম্পানির ইপিএস বেড়ে ৬ টাকা ৩৮ পয়সা হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৫ টাকা ০৬ পয়সা।
মুনাফা কমার হার অপেক্ষাকৃত কম ইস্টার্ন হাউজিং, বেঙ্গল উইন্ডসর থার্মো প্লাস্টিকস, ফরচুন সুজ, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, অগ্নি সিমেন্টস, এএমসিএল (প্রাণ), ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, ইস্টার্ন ল্যুব, এডভেন্ট ফার্মা, আরডি ফুড, বঙ্গজ। এসব কোম্পানির ইপিএস কমার হার ২ থেকে ১০ শতাংশ।
তবে প্রায় ৯৭ শতাংশ ইপিএস কমেছে ডমিনেজ স্টিল কোম্পানির। গত হিসাব বছরের ৯ মাসে যেখানে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৩১ পয়সা, এ বছর তা মাত্র ১ পয়সায় নেমেছে। ইপিএস কমায় এর পরের অবস্থানে বেক্সিমকো লিমিটেড। একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস প্রায় ৯০ শতাংশ কমে শুধু ৮৯ পয়সায় নেমেছে। গত বছর বেক্সিমকোর ইপিএস ছিল ৮ টাকা ৫৭ পয়সা। প্যাসিফিক ডেনিমের ইপিএস কমেছে ৮৩ শতাংশ।
এ ছাড়া ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ইপিএস কমেছে বিডি অটোকার, আরএন স্পিনিং, কুইনসাউথ টেক্সটাইল, এমএল ডাইং, শাইনপুকুর সিরামিক, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন, মতিন স্পিনিং এবং ড্রাগন সোয়েটারের।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রবৃদ্ধিসহ মুনাফায় থাকা ৭২ কোম্পানির মধ্যে ১৫টি গত বছরের একই সময়ে লোকসানে ছিল। এসব কোম্পানি হলো– কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ, মালেক স্পিনিং, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, সিএনএটেক্স, জিপিএইচ ইস্পাত, ইভিন্স টেক্সটাইল, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার, ওইম্যাক্স, সায়হামটেক্স, ইনটেক, ফার কেমিক্যাল, পাওয়ার গ্রিড, ইফাদ অটোস, রহিমটেক্স এবং হাক্কানি পাল্প।
মুনাফায় প্রবৃদ্ধি থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ফার্মা এইডস কোম্পানির। গত হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে এ কোম্পানির ইপিএস ছিল মাত্র ৫ পয়সা। এ বছর তা ১৮ টাকা ৩৭ পয়সা হয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় প্রান্তিকেই ইপিএস হয় ৭ টাকা ৪৬ পয়সা।
মুনাফায় প্রবৃদ্ধির ওপরের দিকে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো– ফাইন ফুডস, ন্যাশনাল টিউবস, সোনালী আঁশ, শাহজীবাজার পাওয়ার, আমান ফিড, সায়হাম কটন, কেঅ্যান্ডকিউ, বিআরএসএম লিমিটেড, এসএস স্টিল, বারাকা পাওয়ার, ওয়ালটন, ক্রাউন সিমেন্ট।
source: https://samakal.com/economics/article/236282/লোকসানে-ও-মুনাফা-হারিয়েছে-অর্ধেকের-বেশি-কোম্পানি
bangladesh economic industry company profit and loss lose half of total company