Home Featured ভারতীয় বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রেকর্ড সর্বনিম্ন হিনো বাসের বিক্রি

ভারতীয় বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রেকর্ড সর্বনিম্ন হিনো বাসের বিক্রি

by fstcap

বাংলাদেশে হিনো বাসের একমাত্র পরিবেশক আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেড বাণিজ্যিক যানবাহন খাতে তাদের একসময়ের আধিপত্য হারিয়েছে। মূলত ভারতীয় ব্র্যান্ড অশোক লেল্যান্ড ও টাটা-র সঙ্গে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার মুখে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে জাপানি ব্র্যান্ডটি।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আফতাব অটোমোবাইলস মাত্র ২১টি হিনো বাস বিক্রি করেছে, যা তাদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন বিক্রির রেকর্ড।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে আফতাব অটোমোবাইলস ৭০৪টি হিনো বাস বিক্রি করে ২৯৬ কোটি টাকা আয় করেছিল। কিন্তু গত অর্থবছরে সেই আয় ৯৬ শতাংশ কমে মাত্র ১২.৪৬ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

অন্যদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরেক প্রতিষ্ঠান ইফাদ অটোস ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯৩৭টি অশোক লেল্যান্ড বাস বিক্রি করেছে।

বিক্রিতে এই ধস আফতাব অটোমোবাইলসের পুঞ্জীভূত আয়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তাদের মোট আয় দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫৯ শতাংশ কম।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে আফতাব অটোমোবাইলস ৪৮১ কোটি টাকা আয় করেছিল, যা তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

গত অর্থবছরে কোম্পানিটি ১৪.৮২ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে, যেখানে আগের অর্থবছরে তারা ৪১ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল।

১৯৮২ সাল থেকে আফতাব অটোমোবাইলস বাংলাদেশে টয়োটা ও হিনো গাড়ি সংযোজন করছে। এছাড়াও নাভানা ব্যাটারিজ লিমিটেড নামে তাদের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান।

কোম্পানিটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ঋণ পরিশোধের চ্যালেঞ্জ এবং দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে তারা প্রয়োজনীয় ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না। এতে নতুন হিনো বাসের চেসিস আমদানি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে কোম্পানিটির ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে। ক্রমবর্ধমান সুদব্যয় বড় বাধা তৈরি করেছে। আয় দিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

আফতাব অটোমোবাইলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে বার্ষিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান শফিউল ইসলাম উল্লেখ করেছেন, বাণিজ্যিক গাড়ির বাজারে ক্রমপরিবর্তনশীল অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে।

তবে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট অস্থায়ী উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী এক বছরের মধ্যে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। এর ফলে এসি ও নন-এসি বাসের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে এবং নতুন নতুন রুট খোলা হচ্ছে। এটি বাণিজ্যিক যানবাহনের বাজারের জন্য বড় সম্ভাবনা তৈরি করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের পরিচালকদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক অস্থিরতা, খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেশের আর্থিক পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

এর ফলে আফতাব অটোমোবাইলস তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যে অর্জন করতে পারেনি। তবে কোম্পানিটি ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। তারা উৎপাদন ও বিক্রি বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে।

ব্যবসায় মন্দা থাকার পরও কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান অব্যাহত রেখেছে। গত অর্থবছরে শুধু সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বৃহস্পতিবার আফতাব অটোমোবাইলসের শেয়ারের মূল্য ছিল ৩৪.৮০ টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় ০.৫৮ শতাংশ বেশি।

এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত আয় ৭০ শতাংশ বেড়ে ১৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। মূলত তাদের অটোমোবাইল ব্যাটারি উৎপাদনকারী সহযোগী প্রতিষ্ঠান নাভানা ব্যাটারিজ লিমিটেডের সাফল্যের হাত ধরে এই আয় বেড়েছে।

তবে আয় বৃদ্ধির পরও এই প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৪.৬৯ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। এ সময় তাদের শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ০.৪৪ টাকা।  tbsnews.net

 

bus company bangladesh bd hino tata ashok leyland

You may also like