Home Featured তলানিতে বিভিন্ন শেয়ারের দাম

তলানিতে বিভিন্ন শেয়ারের দাম

by fstcap

শেয়ারবাজার গতিহীন হয়ে পড়েছে। তলানিতে এসেছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। ৫ আগস্টের পর দেশের অর্থনীতির অন্যান্য খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও ব্যতিক্রম শুধু শেয়ারবাজার। বৃদ্ধি নয়, কমছে মূল্যসূচক ও বাজারমূলধন। কমছে তারল্য প্রবাহ। সাড়ে ৫ মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ৮৫০ পয়েন্ট কমেছে। এতে ডিএসইর বাজারমূলধন কমেছে ৫৩ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে কিছু দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। সবকিছু মিলে শেয়ারবাজার গভীর খাদের কিনারায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের এ অবস্থার পেছনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নেতৃত্বের দুর্বলতা দায়ী। এ অবস্থায় ৭ জানুয়ারি বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থ উপদেষ্টা। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।

এদিকে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে যুগান্তর। সেখানে বেশকিছু তথ্য উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন পুঁজিবাজারে দুটি শব্দ খুব পরিচিত। একটি হলো আস্থার সংকট এবং অপরটি নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা। কিন্তু ৫ আগস্টের পর আরও দুটি শব্দ যোগ হয়েছে। তা হলো বৈষম্য ও সংস্কার। কিন্তু অন্যান্য খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখানে সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি এখনো।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হলে পরপর কয়েকদিন ইতিবাচক হয় বাজার। তবে তা ধরে রাখা যায়নি। এ সময়ে বিএসইসিতে পরিবর্তন আসে। একজনকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে পরের দিন আবার পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তী সময়ে বর্তমান কমিশনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা একেবারেই অনভিজ্ঞ। বাজারের ব্যাপারে তাদের কোনো ধারণা নেই। নতুন উদ্ভাবন দূরের কথা, অনেক পরিভাষাই তারা বুঝেন না। এছাড়াও নতুন কমিশনের বেশকিছু সিদ্ধান্ত ছিল বিতর্কিত। স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদ গঠনসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত বাজারে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করে। বিষয়টি বাজারসংশ্লিষ্টরা ভালোভাবে নেননি।

গত বছরের ১১ আগস্ট ডিএসইর মূল্যসূচক ছিল ৬ হাজার ১৫ পয়েন্ট। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তা কমে ৫ হাজার ১৬৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এ হিসাবে ৫ মাসে সূচক ৮৫০ পয়েন্ট কমেছে। ওই সময়ে গড় লেনদেন ছিল ৭০০ কোটি টাকা। কিন্তু বর্তমানে তা ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। ১১ আগস্ট ডিএসইর বাজারমূলধন ছিল ৭ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে তা কমে ৬ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে বাজারমূলধন ৫৩ হাজার কোটি টাকা কমেছে। মৌল ভিত্তিসম্পন্ন বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম নিম্নমুখী। তবে বিএসইসি বলছে ভিন্নকথা। যারা আগে বাজারে কারসাজি করেছিল, তাদের বেশকিছু লোকের ব্যাপারে বিএসইসি ব্যবস্থা নিচ্ছে। ফলে ওই চক্রটি বাজারে পরিকল্পিতভাবে পতন ঘটাচ্ছে।

এদিকে সরকার গঠিত শ্বেতপত্র কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজার থেকে ১ লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। জালিয়াতি, কারসাজি এবং ভুয়া কোম্পানি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে এ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক খাতের প্রভাবশালী উদ্যোক্তা গোষ্ঠী, ইস্যু ম্যানেজার, নিরীক্ষক ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কারসাজির চক্র গড়ে ওঠে। বিএসইসি এ ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব পালন এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনীতির অবস্থা মূল্যায়নে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজারের মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। দীর্ঘদিন থেকে এ সংকট চলে আসছে। এর সঙ্গে অর্থনৈতিক বিভিন্ন সংকট, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় রাজনীতিসহ সবকিছু যোগ হয়েছে। ফলে সবার আগে আস্থার সংকট দূর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের এই নিশ্চয়তা দিতে হবে-কারসাজির মাধ্যমে কেউ তার টাকা হাতিয়ে নিলে বিচার হবে। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। তবে কাজটি খুব সহজ নয়। যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিন কয়েকটি গেম্বলার গ্রুপ অলিখিতভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করত। পরিস্থিতি একটু খারাপ হলেই কমিশন থেকে বড় হাউজ এবং কয়েকজন বড় বিনিয়োগকারীকে শেয়ার কিনে বাজার সাপোর্ট দিতে বলা হতো। বর্তমানে গ্রুপগুলো নিষ্ক্রিয়। ফলে বাজারে লেনদেন বাড়ছে না। বাজারের সংকটের আরেকটি কারণ মার্জিন ঋণ শেয়ার (কেনায় ঋণ সুবিধা)। বর্তমানে মার্জিন ঋণের হার ১:০.৮। অর্থাৎ কোনো বিনিয়োগকারীর ১ লাখ টাকা থাকলে তাকে আরও ৮০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হবে। কিন্তু অনেক হাউজ এই সীমা মানেনি। ফলে বাজার কিছুটা নেতিবাচক হলেই শেয়ার বিক্রি করে ঋণ সমন্বয় করা হয়। এতে পতন আরও ত্বরান্বিত হয়।

গত ১৫ বছরে নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী এবং পরিবারের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল পুরো দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি। তারাই দেশ চালাবে, সম্পদ লুট করবে আর সাধারণ মানুষ তাতে রসদ জোগাবে। তাদের দুর্নীতি, দুঃশাসন ও বিচারহীনতার প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। সবকিছু মিলে বিনিয়োগকারীদের চরম দুরবস্থা চলছে। এ অবস্থায় দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে বাজারে সংস্কার জরুরি। অন্যদিকে ৫ আগস্টের পর সরকারের পক্ষ থেকে নীতিসহায়তার কথা জানানো হয়েছে। যেমন: বিদ্যমান আইনে ৫০ লাখ টাকার অধিক মূলধনি আয়ের ওপর সর্বোচ্চ করহার ছিল ৩০ শতাংশ। সেই করহার কমিয়ে বর্তমানে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া সম্পদশালী করদাতাদের করের ওপর বিদ্যমান আইনে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হয়। এতে শেয়ারবাজার থেকে অর্জিত মূলধনি মুনাফার ওপর আয়কর ও সারচার্জ বাবদ মোট ৪০ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে কর দিতে হতো। নতুন নিয়মে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফার ওপর প্রদেয় আয়কর ও সারচার্জ বাবদ সর্বোচ্চ করহার কমিয়ে ২০ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে শেয়ারবাজারে এর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।

এক সপ্তাহের বাজার : গত সপ্তাহে ডিএসইতে ৪১৩টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২০১টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ১৫০টি, অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। তবে ১৬টি কোম্পানির কোনো শেয়ার লেনদেন হয়নি। এ সময়ে ৫ কার্যদিবসে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৩টি কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রতিদিনের গড় লেনদেন ছিল ৪১২ কোটি টাকা।

শীর্ষ ১০ কোম্পানি : গত সপ্তাহে ডিএসইতে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেশি লেনদেন হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে-এডিএন টেলিকমের গড় লেনদেন ছিল ২৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশন ১২ কোটি ৫০ লাখ, মিডল্যান্ড ব্যাংক ১০ কোটি ৯২ লাখ, লাভেলো আইসক্রিম ১০ কোটি ২১ লাখ, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ১০ কোটি ১৫ লাখ, এশিয়াটিক ল্যাব ৯ কোটি ৮২ লাখ, কহিনুর কেমিক্যাল ৯ কোটি ৭৬ লাখ, ওয়াইম্যাক্স ৮ কোটি ৪৩ লাখ, আফতাব অটোমোবাইল ৮ কোটি এবং ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইংয়ের ৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ডিএসইতে গত সপ্তাহে যে সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি বেড়েছে সেগুলো হলো-খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, অলটেক্স, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, মুন্নু সিরামিক, ঢাকা ডাইং, দুলামিয়া কটন, ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং এবং সিকদার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি কমেছে সেগুলো হলো-পাওয়ার গ্রিড, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, ওয়াইম্যাক্স, এশিয়াটিক ল্যাব, রিলায়েন্স ১, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, সিএনএ টেক্সটাইল, প্রিমিয়ার লিজিং এবং ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।    https://www.jugantor.com

You may also like