Home Featured টানা পতন ঠেকাতে শেয়ারের দাম কমার নতুন সীমা নির্ধারণ

টানা পতন ঠেকাতে শেয়ারের দাম কমার নতুন সীমা নির্ধারণ

by fstcap

দাম দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমবে না

টানা দরপতনের মুখে শেয়ারের দাম কমার নতুন সীমা বেঁধে দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে ফ্লোরপ্রাইসে থাকা কোম্পানির ক্ষেত্রে এই সীমা প্রযোজ্য হবে না। বিএসইসি সূত্র জানিয়েছে, বিনিয়োগকারীদের ক্রমাগত লোকসান ঠেকাতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার এসংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে বিএসইসি। এই নির্দেশনা আজ বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে। তবে বাজারসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অতীতে শেয়ারের দর বেঁধে দিয়ে (ফ্লোরপ্রাইস) দেখা গেছে, তা বাজারের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে ভালো কোনো সুফল নিয়ে আনেনি। তাই বাজারকে বাজারের নিয়মেই চলতে দেওয়া উচিত। উল্লেখ্য, শেয়ার বাজারের পতন ঠেকাতে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই সর্বশেষ দফায় ফ্লোরপ্রাইস আরোপ করেছিল বিএসইসি। এতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর একটি বড় অংশের শেয়ারের দাম কমে ফ্লোরপ্রাইসে আটকে যায়। গত প্রায় দেড় বছর ধরে এসব কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন হয়নি বললেই চলে। ফলে পুঁজিবাজারে একধরনের স্থবিরতা নেমে আসে। এ অবস্থায় বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ধাপে ধাপে ফ্লোরপ্রাইস প্রত্যাহার করে বিএসইসি। কিন্তু ফ্লোরপ্রাইস প্রত্যাহারের পর কিছুদিন বাজার মোটামুটি ভালো থাকলেও এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে দরপতন হচ্ছে দেশের শেয়ারবাজারে। ক্রমাগত লোকসানে নিঃস্ব বিনিয়োগকারীদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা দরপতন ঠেকাতে শেয়ারের দাম কমার নতুন সীমা বেঁধে দিয়েছে।

 
 

নতুন নির্দেশনা অনুসারে, এক দিনে কোনো কোম্পানির শেয়ারের মূল্য সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারবে। এর চেয়ে কম মূল্যে কেউ শেয়ার বিক্রি বা কিনতে পারবে না। এর আগে শেয়ারের বাজারমূল্যের আলোকে মূল্য সর্বনিম্ন ৩.৭৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত  কমতে পারত। তবে শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে আগের সীমা বহাল আছে। শেয়ারের আগের দিনের বাজারমূল্যের আলোকে পরদিন মূল্য সর্বনিম্ন ৩.৭৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারবে।

বিদ্যমান সার্কিট ব্রেকার পদ্ধতিতে শেয়ারের দামের ভিত্তিতে মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধির সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। যে কোনো কোম্পানির শেয়ারের আগের দিনের ক্লোজিং মূল্যের আলোকে পরদিন এই সীমা প্রযোজ্য হয়। কোনো কোম্পানির শেয়ারের মূল্য ২০০ টাকার মধ্যে থাকলে পরদিন ঐ শেয়ারের মূল্য সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে বা কমতে পারে। মূল্য ২০০ টাকার ওপর থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ৮.৭৫ শতাংশ, ৫০০ টাকার ওপর থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত ৭.৫০ শতাংশ, মূল্য ১ হাজার টাকার ওপর থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত ৬.২৫ শতাংশ, ২ হাজার টাকার ওপর থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ৫ শতাংশ এবং মূল্য ৫ হাজার টাকার বেশি হলে ৩.৭৫ শতাংশ বাড়তে বা কমতে পারে। এই সার্কিট ব্রেকারের ওপরের সীমা তথা মূল্য বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমাটি বহাল রেখে নিম্নসীমা তথা মূল্য হ্রাসের সর্বোচ্চ সীমা গতকাল বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

 

গতকাল এক দিনেই ডিএসইর প্রধান সূচকটি ৬৪ পয়েন্টের বেশি কমেছে

গতকালও দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বড় দরপতন হয়েছে। ফলে ঈদের পর লেনদেন হওয়া আট কার্যদিবসের মধ্যে সাত কার্যদিবসেই শেয়ার বাজারে দরপতন হলো। গতকাল ডিএসইতে লেনদেনকৃত মোট ৩৯৪টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৭৯টির, কমেছে ২৭৪টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪১টির দর। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সূচকে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫৪.৬৩ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৫৭৮.৯৭ পয়েন্টে নেমে গেছে। গতকাল এই বাজারে ৬০২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৯৭ কোটি ৫৬ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অন্য বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৭৩ পয়েন্ট।

এদিকে শেয়ার বাজারের চলমান দরপতন ঠেকাতে করণীয় সম্পর্কে বাজার অংশীজনরা বলেছেন, অ্যাডহক (অস্থায়ী) ভিত্তিতে নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে শেয়ার বাজার দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই হচ্ছে না। তারা বলেছেন, বাজার উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে। তারা মার্জিন ঋণ পলিসি (শেয়ারের বিপরীতে দেওয়া ঋণসুবিধা) সময়োপযোগী করার তাগিদ দিয়েছেন। এছাড়া বাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিতে আরো কঠোর হওয়ার কথা বলেছেন। না হলে বাজার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে সাময়িক কিছু সুবিধা পাওয়া গেলেও তা দীর্ঘমেয়াদে সুফল বয়ে আনবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, শেয়ারের দাম কমার নতুন সীমা বেঁধে দিয়ে বাজার কখনো ভালো করা যাবে না। বাজারকে বাজারের নিয়মে চলতে দিতে হবে। তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কখনো বাজারে হস্তক্ষেপ করে না। তাদের কাজ হলো, সুশাসন নিশ্চিত করা।

দেশের শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছায়েদুর রহমান বলেন, বিএসইসি তাদের দায়িত্বের জায়গা থেকে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে শেয়ারের দাম কমার নতুন সীমা বেঁধে দিয়েছে। তিনি বলেন, গত কিছুদিনে বাজারে ৮ থেকে ৯ শতাংশ মূল্য সংশোধন হয়েছে। এ অবস্থায় বাজার যে কোনো সময় ঘুরে দাঁড়াবে।

এ প্রসঙ্গে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে ভালো করতে ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। মার্জিন ঋণনীতির পরিবর্তনের পাশাপাশি মিউচুয়াল ফান্ড খাতকে শক্তিশালী করতে হবে। তা না হলে দীর্ঘমেয়াদে বাজারে সুফল মিলবে না।

বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নতুন নির্দেশনা প্রসঙ্গে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, প্রতিদিন একই শেয়ার এক-দুই ঘণ্টায় কেনাবেচা করে একশ্রেণির বিনিয়োগকারীর যে মুনাফা করার প্রবণতা ছিল, নতুন এই নির্দেশনার ফলে সেটি সম্ভব হবে না। কারণ, নতুন নির্দেশনা অনুসারে, এক দিনে কোনো কোম্পানির শেয়ারের মূল্য সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারবে। কিন্তু শেয়ারের আগের দিনের বাজার মূল্যের আলোকে পরদিন মূল্য সর্বনিম্ন ৩.৭৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারবে। ফলে ডে নেটিং কমে যাবে। আশা করছি, এতে বাজার স্থিতিশীল হবে।

source: https://www.ittefaq.com.bd

 

share price reducing rules

You may also like