March 7, 2025 6:41 am
March 7, 2025 6:41 am
Home Featured আইপিওতে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের মুনাফার মায়াজাল ; পরিচালকদের পৌষ মাস চললেও বিনিয়োগকারীদের সর্বনাশ!

আইপিওতে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের মুনাফার মায়াজাল ; পরিচালকদের পৌষ মাস চললেও বিনিয়োগকারীদের সর্বনাশ!

by fstcap

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে মুনাফার উল্লম্ফন ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের গল্প শুনিয়ে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করেছিল শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কিন্তু তালিকাভুক্তির পর বাস্তবে ঘটেছে উল্টোটা। কয়েক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ব্যবসা তলানিতে ঠেকেছে, অথচ লোকসানের মধ্যেও বেড়েছে পরিচালকদের সম্মানি, শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, আর বিনিয়োগকারীদের দেওয়া হয়েছে নামমাত্র ডিভিডেন্ড!

এছাড়াও সম্প্রতি কোম্পানির অডিট রিপোর্টেও উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। শ্রমিকদের প্রাপ্য ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপ্যাশন ফান্ড (WPPF) সংরক্ষণ করা হয়নি। অন্যদিকে ক্যাটাগরি ধরে রাখতে কৌশলী প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। পরিণতিতে কোম্পানির স্বচ্ছতা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। এতে ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

২০১৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ বিনিয়োগকারীদের সামনে লাভজনক এক কোম্পানির ছবি তুলে ধরে। আইপিওর সময় তারা বেশ ভালো মুনাফার তথ্য প্রকাশ করে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করে। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই কোম্পানির আসল চিত্র সামনে চলে আসে—ব্যবসা মন্দার অজুহাতে আয় কমতে থাকে, শেয়ারদর নেমে আসে তলানিতে, আর বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশিত রিটার্ন তো দূরের কথা, মূলধনই হারানোর উপক্রম হয়।

কোম্পানিটির প্রসপেক্টাস বিশ্লেষনে দেখা যায়, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) (রিস্টেটেড) ছিলো ৪.৩৭ টাকা। যা ২০১৬ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১. ৪৬ টাকা।

তবে ডিএসই’র তথ্য বলছে, ২০২০ সালের জুন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়ায় ০.১৫ টাকায়। ২০২১ শেষে লোকসান আরও বেড়ে তা ১.০৩ টাকায় ওঠে আসে। তবে ২০২২ ও ২০২৩ সালে কোম্পানিটির লোকসান কাটিয়ে মুনাফায় গেলেও তা আর ধরে রাখতে পারেনি। ২০২৪ শেষে কোম্পানিটি আবারও লোকসানে পতিত হয়। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ১.৫১ টাকা।

তবে, ব্যবসা খারাপ করলে বা কোম্পানি লোকসানে থাকলেও কোম্পানির পরিচালকদের সম্মানী বা আয় ঠিকই বেড়েছে। বিনিয়োগকারীদের আশার আলো নিভে গেলেও কোম্পানির ব্যবস্থাপনার লোকজন সেই আলোতেই নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নতি করে নিয়েছেন।

কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষনে দেখা গেছে, যেকোনো একটি কোম্পানির প্রাণ বলা হয় তার বিনিয়োগকারী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। দু:খের বিষয় হচ্ছে, সেই বিনিয়োগকারীরা আশানুরুপ রিটার্ণ না পেলেও কিংবা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা কমলেও শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ তার পরিচালকদের সম্মানি বাড়িয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে, যা অত্যন্ত অমানবিক বলছেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা। অর্থ সংকটের কারণে কোম্পানিটি ব্যবসা সম্প্রসারণও করতে পারছে না। লোকসানে থাকা কোম্পানিটির তালিকাভুক্ত পরবর্তী শেয়ার প্রতি আয়তো বাড়েইনি উপরন্ত গত পাঁচ বছরে বেশিরভাগ সময় লোকসান করেছে।

আরও পড়ুন: বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষমতায়ন জরুরি: আশিকুর রহমান

তথ্য বিশ্লেষণে আরও জানা গেছে, সদ্য বিদায়ী বছরে (৩০ জুন ২০২৪) কোম্পানিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিয়েছে ২ কোটি ৮৯ লাখ ৪১৯ টাকা। এর আগের বছর বেতন বোনাস দিয়েছে ৩ কোটি ১২ লাখ ২ হাজার ৯৮৪ টাকা। অর্থাৎ প্রত্যেক বছর শুধু বেতন বোনাসই কোম্পানিটি তিন কোটি টাকার অধিক অথবা কিছু কম দিয়ে থাকে। সদ্য বিদায়ী বছরে বর্তমানে কোম্পানিটির হাতে ক্যাশ রয়েছে মাত্র ১ কোটি ২ লাখ ৫৯ হাজার ৩০০ টাকা, যা দিয়ে আগামী এক বছরের বেতন বোনাসই ঠিকভাবে দিতে পারবে না কোম্পানিটি। শুধু তাই নয়, ১৫৪ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকার বিশাল মূলধনী কোম্পানিটি সামান্য এই অর্থ দিয়ে অন্যান্য পরিচালন ব্যয় মেটাতেও হিমশিম খাচ্ছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সদ্য বিদায়ী বছরে কোম্পানিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বোনাস ২৩ লাখ ২ হাজার ৫৬৫ টাকা কমিয়ে পরিচালকদের সম্মানি বাড়িয়েছে ২৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬০০ টাকা বা ১৪১ শতাংশের বেশি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ক্যাপিটাল ওয়ার্ক ইন প্রোগ্রেস শুণ্যে নেমে এসেছে। অর্থাৎ সদ্য বিদায়ী বছরে কোম্পানিটি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসা সম্প্রসারণে কোনো কাজ করেনি। অথচ এর আগের বছরেও কোম্পানিটি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসা সম্প্রসারণে ৫ কোটি ৪২ লাখ ১৬ হাজার ৭৯৩ টাকা ব্যয় করেছিল। গত পাঁচ বছরের মধ্যে অধিকাংশ সময়েই লোকসান করেছে কোম্পানিটি।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানির অবস্থান নির্ধারণে তার ক্যাটাগরি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণত ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো নিয়মিত ডিভিডেন্ড প্রদান করে, যা বিনিয়োগকারীদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে। কিন্তু শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এই ক্যাটাগরি ধরে রাখতে নামমাত্র ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা করেছে।

নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি যদি শেয়ারহোল্ডারদের নিয়মিত ডিভিডেন্ড প্রদান করে, তবে সেটি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকে, আর যদি ডিভিডেন্ড কমে যায় বা বন্ধ হয়, তবে সেটি ‘বি’ বা ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে যায়। কিন্তু শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ব্যবসায়িকভাবে দুর্বল অবস্থানে থাকার পরও সামান্য পরিমাণ ক্যাশ বা স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, যাতে তারা ‘এ’ও ‘বি’ ক্যাটাগরিতে থেকে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতে পারে।

তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে চার বছরেই বিনিয়োগকারীদের নামমাত্র ডিভিডেন্ড দিয়েছে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। ২০২০ সালে ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে কোম্পানিটি। ২০২১ সালে ৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে, যার মধ্যে ২.৫০ শতাংশ ক্যাশ ও ২.৫০ শতাংশ স্টক, ২০২২ সালে ১০ শতাংশ ক্যাশ, ২০২৩ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ ও সদ্য বিদায়ী বছরে ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে অথচ এই সময়ে কোম্পানিটি ছিলো লোকসানে।

বিনিয়োগকারীদের অনেকেই মনে করছেন, এই নামমাত্র ডিভিডেন্ড শুধুমাত্র ক্যাটাগরি ধরে রাখার জন্য একটি কৌশল, প্রকৃতপক্ষে এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লাভজনক সিদ্ধান্ত নয়। বাজার বিশ্লেষকরাও বলছেন, কোম্পানির প্রকৃত আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করলে বোঝা যায়, তাদের লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা কমেছে, কিন্তু তবুও তারা সামান্য ডিভিডেন্ড দিয়ে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে, যা সুস্থ বিনিয়োগ ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর।

আরিফ আহমেদ নামের এক বিনিয়োগকারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম কোম্পানিটি ভালো অবস্থায় আছে বলেই ডিভিডেন্ড দিচ্ছে, কিন্তু পরে বুঝলাম, এটা আসলে আমাদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য। আমরা এখন বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে এ ধরনের কৌশলী প্রতারণার বিরুদ্ধে আরও কঠোর হতে হবে। শুধুমাত্র ক্যাটাগরি ধরে রাখার জন্য নামমাত্র ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল, যা বাজারে স্বচ্ছতা নষ্ট করে এবং আস্থার সংকট তৈরি করে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বিজনেস জার্নালকে বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে যদি বলি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বোনাস কমিয়ে পরিচালকদের সম্মানি বাড়ানো মোটেই উচিত হয়নি। এর বাহিরে কোম্পানির ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট না দেখে কোনো মন্তব্য করা যাবে না।

এদিকে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে আরেকটি গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ এনেছে নিরীক্ষক। কোম্পানিটির নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কোম্পানিটি শ্রম আইন লঙ্ঘন করে ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপ্যাশন ফান্ড (WPPF) সংরক্ষণ করেনি, যা শ্রমিকদের সরাসরি বঞ্চিত করার শামিল।

বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী, প্রতি আর্থিক বছরে মুনাফার ৫% শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে জমা রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এই তহবিল সংরক্ষণ করেনি বা শ্রমিকদের প্রদান করেনি। অর্থাৎ, কোম্পানির মুনাফা থেকেও শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, শ্রমিকদের জন্য ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) গঠন করা হলেও তা বিতরণ না করে প্রতারণা করেছে। কোম্পানিটির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় এ তথ্য জানিয়েছে নিরীক্ষক।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৪৬ লাখ ২৩ হাজার টাকার ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) গঠন করা হয়েছে। তবে ওই ফান্ড নির্ধারিত সময়ে বিতরন করেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু ২০০৬ সালের শ্রম আইনের ২৩২ ধারা অনুযায়ি, অর্থবছর শেষ হওয়ার ৯ মাসের মধ্যে ফান্ড বিতরণের বিধান রয়েছে। কিন্তু ওই ফান্ড কর্মীদের মধ্যে বিতরণ না করে তাদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া, শ্রমিকদের প্রাপ্য অধিকার নিয়ে নিরীক্ষকের মন্তব্য প্রকাশের পর বেশ কয়েকদিন পেরুলেও শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের এই অনিয়ম সম্পর্কে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়নি। শ্রমিকদের প্রাপ্য অর্থ কোথায় গেল, তা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও প্রশ্ন উঠেছে। যে কোম্পানি শ্রমিকদের পাওনা মেরে খেতে পারে, তারা বিনিয়োগকারীদের প্রতিও সঠিক দায়িত্ব পালন করছে কি না- তা নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু শ্রম আইন লঙ্ঘন নয়, বরং শ্রমিকদের সঙ্গে চরম অন্যায় ও প্রতারণা। শ্রমিকদের অধিকার হরণ করে কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদ নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করেছে বলে অভিযোগ উঠছে। এ ধরনের আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে বাজারের প্রতি আস্থা কমে যাবে। শ্রমিকদের পাওনা আত্মসাৎ করা কেবল নৈতিক ও আইনগতভাবে ভুল নয়, বরং এটি কোম্পানির ভবিষ্যৎকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে।

তাদের মতে, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা লোপাটের এই ঘটনা শুধু একটি কোম্পানির সমস্যা নয়, বরং পুরো শিল্পখাতের জন্যই বিপজ্জনক। যদি কোম্পানিগুলো এই ধরনের অনিয়ম করেও পার পেয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও কোম্পানি শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘন করতে উৎসাহিত হবে। তাই শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

আরও পড়ুন: পুনরুদ্ধার হয়নি শেয়ার বাজার, কমেছে বিনিয়োগকারীদের আস্থা!

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের অনিয়ম শুধু বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করেনি, বরং পুরো পুঁজিবাজারের জন্যই একটি খারাপ বার্তা দিচ্ছে। কোনো কোম্পানি যদি বিনিয়োগকারীদের আস্থার সঙ্গে ছলচাতুরী করে, শ্রমিকদের প্রাপ্য টাকা মেরে দেয়, আর নিজেদের স্বার্থেই প্রতিষ্ঠান চালায়, তবে সেটি দীর্ঘমেয়াদে বাজারের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। তাদের মতে, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর এখনই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ধরনের কোম্পানিগুলোকে আইনের আওতায় না আনলে ভবিষ্যতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও কমে যাবে।’ তারা আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে বিনিয়োগকারীদের আরও সতর্ক হয়ে বিনিয়োগ করতে হবে। শুধু কোম্পানির বিজ্ঞাপন বা লোভনীয় হিসাব দেখে বিনিয়োগ না করে, তার প্রকৃত আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ করা জরুরি।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ও সিএফও আতাউর রহমানের সাথে যোগাযোগ কর হলে তিনি বিজনেস জার্নালকে বলেন, ফোনে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না, হোয়াটসঅ্যাপে লিখে পাঠান। পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন পাঠানো হলেও তিনি এর কোন সদুত্তোর দেননি। বরং অফিসে সরাসরি দেখা করার কথা বলেন।

বিএসইসির ৫৮৯তম কমিশন সভায় শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের আইপিও অনুমোদন দেয়। অভিহিত মূল্যে (১০ টাকা) দুই কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ কোম্পানিটি ওয়াশিং প্লান্ট ভবন নির্মাণ, সম্প্রসারণ, মেশিন ও সরঞ্জামাদি ক্রয়, ইটিপি সম্প্রসারণ ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করার কথা ছিলো।

ওই বছরের (২০১৭ সাল) ৮ মার্চ ৪৫ টাকায় কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হলেও বর্তমানে তা ১৮.২০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। যদিও লোকসানি এ কোম্পানির শেয়ার গত এক মাস কিংবা ৩২ কার‌্যদিবসের ব্যবধানে ১৪.১০টাকা থেকে১৮.২০ টাকায় ওঠে এসেছে। লোকসানী প্রতিষ্ঠান হিসেবে টানা দরবৃদ্ধির এ চিত্রকে অস্বাভাবিক বলছেন বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা।

১৫৪ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৫ কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৪৭৩ টি, যার মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৫১.৪৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৪.১৩ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ৭.১৪ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৭.২৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

sharebazar investor bd

You may also like