আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে লোকসানের পাহাড় জমবে। চলতি অর্থবছরে যেখানে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা লোকসান প্রাক্কলন করা আছে, আগামী এক অর্থবছরেই সেটা ৫ গুণ বেড়ে প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সূত্রে জানা গেছে- বস্ত্র, পাট, ইস্পাত, কৃষি ও মৎস্য উন্নয়ন, পরিবহন, জ¦ালানি, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সেবাসহ বিভিন্ন খাতে ৪৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে আগামী অর্থবছরে বাজেটে মোট আয়ের (পরিচালন রাজস্ব এবং অ-পরিচালন আয়) লক্ষ্যমাত্রার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ লাখ ১ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। একই অর্থবছরে এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যয় (পরিচালন ব্যয় এবং অ-পরিচালন ব্যয়) হবে ৪ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। ফলে আগামী অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে লোকসানের প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৮ হাজার ৪৭ কোটি টাকা, যা চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২২ হাজার ৫৮ কোটি টাকা বেশি।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট আয়ের (পরিচালন রাজস্ব এবং অ-পরিচালন আয়) লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা (সংশোধিত) ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে মোট লোকসানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। সেখান থেকে আগামী অর্থবছরে ৫ গুণেরও বেশি লোকসানের পরিমাণ বাড়বে।
সম্প্রতি শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন, দেশে সরকারি মালিকানাধীন ২৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান লোকসানে চলছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) অধীন চারটি, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ১৫টি এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) অধীন ৯টি প্রতিষ্ঠান। সংসদে দেওয়া শিল্পমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, বিএসইসির অধীন গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি লিমিটেড ও ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড এবং ঢাকার তেজগাঁওয়ে ইস্টার্ন টিউবস লিমিটেড লোকসানে চলছে। বিএসএফআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন ১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫টিই লোকসানি হিসাবে পরিচালিত হচ্ছে।
বিসিআইসির অধীন লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (এসএফসিএল), আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (এএফসিসিএল), যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (জেএফসিএল), চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল), ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পিএলসি (জিপিএফপিএলসি), ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিএল), কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড ((কেপিএমএল), বাংলাদেশ ইনসুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারিওয়্যার ফ্যাক্টরি লিমিটেড (বিআইএসএফএল) এবং উসমানিয়া গ্লাসশিট ফ্যাক্টরি লিমিটেড (ইউজিএসএফএল)।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেশের বাজারে ব্যবসা করে যেখানে বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো লাভ করছে, সেখানে একই ধরনের ব্যবসা করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো দিনের পর দিন লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লোকসান অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। সীমাহীন দুর্নীতি, সঠিক নীতি-কৌশলের অভাব এবং উদাসীনতার কারণেই প্রতিষ্ঠানগুলোর এ দুরবস্থা হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের জন্য দুর্নীতি, অদক্ষতা এবং সামর্থ্য অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন না করাকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর ধরে লোকসান করে আসছে। এক সময় যখন প্রতিযোগী ছিল না, তখন এসব প্রতিষ্ঠান মুনাফা করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটা বড় ধরনের রিভিউ বা পরিবর্তন আনা দরকার। কোনটা কোন পদ্ধতিতে রাখলে ভালো হবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দিতে হবে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে শেয়ার অফলোড করা যেতে পারে। যাতে সরকারের পাশাপাশি জনগণের মালিকানা সৃষ্টি হয়। পরিচালনা পর্ষদে শেয়ারের ভিত্তিতে জনগণের প্রতিনিধিও থাকবে। শুধু সরকারি কর্মকর্তারাই প্রতিষ্ঠান চালালে হবে না। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে রাখার দরকার নেই। এগুলো বেসরকারি খাতে দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এসব পরিবর্তনের এখন সময় এসেছে।
অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল সূত্র জানিয়েছে, ‘লাভ-লোকসান পরিস্থিতি যে কোনো করপোরেশনের আর্থিক বিশ্লেষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের প্রায় সব সম্পদ ও ঋণ সরকার অথবা রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক জোগান দেওয়া হয়ে থাকে। সুতরাং এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সম্পদের ওপর মুনাফার হার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি।’ এতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট লোকসান প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৮ হাজার ৪৭ কোটি টাকা।
source: https://www.dainikamadershomoy.com/details/018fdf16117f4
state controlled company industry bangladesh bd