সুপরিকল্পিতভাবে শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলে নিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীসহ বিভিন্ন পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে চিহ্নিত একটি গোষ্ঠী। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কাজ করেছে এই গোষ্ঠীর হয়ে। তবে এই বাজার ঠিক করতে ভালো কোম্পানির শেয়ার আনার পাশাপাশি আইপিও বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। ২১ সেপ্টেম্বর টিবিএস’র এক রাউন্ড টেবিল বৈঠকে এসব সুপারিশ উঠে আসে। বিশ্লেষকরা আরও বলেন, বাজার ভালো করতে দ্রুত একটি সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
Featured
বিভিন্ন ব্যাংক দখল করে নামে-বেনামে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে তা পাচারে অভিযুক্ত এস আলম গ্রুপ ও এর মালিকদের সম্পদের তথ্য চেয়েছে সিঙ্গাপুরের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে সম্প্রতি চিঠি দিয়ে এস আলমের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দেশে-বিদেশে সম্পদের তথ্য জানতে চেয়েছে ওই ইউনিট। এস আলম গ্রুপের পাচারের টাকায় সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে সম্পদ কেনার ওপর গণমাধ্যমগুলোর অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ করে এ তথ্য চেয়েছে সিঙ্গাপুর। এদিকে, এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তর বা বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে করা রিটের আদেশ হবে আগামী রোববার।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী এক দশক ধরে সিঙ্গাপুরে সাইফুল আলম হোটেল, বাড়ি, বাণিজ্যিক স্থাপনাসহ বিপুল সম্পত্তি কিনেছেন। যদিও গত সরকার এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গত সরকারের আমলে এস আলমের অর্থ পাচারের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত না করতে উচ্চ আদালত থেকে একটি আদেশ দেওয়া হয়।
এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম ওরফে মাসুদ, তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। একই দিন তাদের বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের বিশেষ অনুমোদন দেওয়া হয়। মূলত তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করা হলে আইনি ঝামেলা এড়াতেই তিনি গত সরকারের সহায়তায় এ ব্যবস্থা করে থাকতে পারেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে এস আলম, তাঁর স্ত্রী, সন্তান, ভাইসহ পরিবারের ব্যাংক হিসাবের তথ্য সংগ্রহ করেছে বিএফআইইউ।
বিএফআইইউর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বৈশ্বিক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সিঙ্গাপুর এফআইইউ এস আলমের তথ্য চেয়ে থাকতে পারে। কেননা, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ উপায়ে সিঙ্গাপুরে সম্পদ গড়ার একাধিক রিপোর্ট হয়েছে। এখন অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা না নিলে দেশটি বৈশ্বিকভাবে মানি লন্ডারিং নীতিমালা পরিপালন না করায় অভিযুক্ত হবে। তিনি বলেন, এস আলমের বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করছেন। সেখানে বাংলাদেশ থেকে বৈধ উপায়ে তাঁর কোনো অর্থ বিদেশে পাঠানোর অনুমোদন না থাকার বিষয়টি জানানো হবে। এ ছাড়া অন্যান্য তথ্য দেওয়া হবে। বৈশ্বিক নীতিমালার আলোকে এক দেশ আরেক দেশকে এ ধরনের তথ্য দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বিদ্যমান আইনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে বিনিয়োগের সুযোগ নেই। কেউ তা করে থাকলে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ। এখন পর্যন্ত দেশের ২২টি প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন নিয়েছে। এ তালিকায় এস আলম গ্রুপ এবং তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। আর এখন পর্যন্ত ব্যক্তি পর্যায়ের কাউকে দেশের বাইরে বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ফলে বিদেশে তাঁর বিনিয়োগ বেআইনি।
বিগত সরকারের বিশেষ আনুকূল্যে এস আলম গ্রুপ সরাসরি সাতটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। এসব ব্যাংক ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে অন্তত দুই লাখ কোটি টাকার ঋণ বড় অংশই পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২০১৭ সালে দখল নেওয়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ থেকে ৭৫ হাজার কোটি এবং এসআইবিএলের ১৫ থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঋণের বড় অংশই এস আলম গ্রুপের। আর চলতি বছর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে সামান্য কিছু ঋণ তারা বের করে নেয়। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের ঋণ রয়েছে ৯ হাজার ৭১১ কোটি টাকা।
গত ৫ আগস্ট সরকার বদলের পর ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোসহ মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। এসব ব্যাংক থেকে যেন নতুন করে আর ঋণ বের করতে না পারে, সে জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো কোথায় কত টাকা ঋণ দিয়েছে, বন্ধকি সম্পত্তির পরিমাণসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউ ছাড়াও এস আলমের বিরুদ্ধে সব শেয়ার হস্তান্তর ও বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ ছাড়া কর ফাঁকির তথ্য সংগ্রহ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এ রকম পরিস্থিতির মধ্যে গত ১২ সেপ্টেম্বর এস আলম গ্রুপ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আর্থিক, সামাজিক ও আইনি সহায়তা দিতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়।
সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞার আদেশ রোববার
এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তর বা বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের আদেশ আগামী রোববার। গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে রিটের ওপর শুনানি হয়। আদালত আদেশের জন্য রোববার দিন ধার্য করেছেন বলে জানান রিট আবেদনকারী আইনজীবী মো. রুকুনুজ্জামান। দায়ের করা রিটে এস আলম গ্রুপ এবং প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সব স্থাবর সম্পত্তির তালিকা দাখিল করার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।
এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর এস আলম গ্রুপের শেয়ারহোল্ডার, পরিচালক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে মামলা (পিআইএল) করেছিলেন আইনজীবী রুকুনুজ্জামান। রিট আবেদনে এস আলম গ্রুপের আওতাধীন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এস আলম গ্রুপের শেয়ারহোল্ডার, পরিচালক ও অন্যান্য ব্যবসা-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ, চলতি অবস্থা ও দায়-দেনার বিষয়ে তথ্য চাইতে আদালতকে অনুরোধ জানানো হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এস আলমের সঙ্গে আঁতাতকারীদের বাধ্যতামূলক অবসর চেয়ে স্মারকলিপি
বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা এস আলম গ্রুপসহ লুটেরাদের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছে, তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিগত সরকারের সময়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া বাকি দুই ডেপুটি গভর্নরের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গভর্নর বরারবর এ স্মারকলিপি দিয়েছেন। ডেপুটি গভর্নর-৩-এর মাধ্যমে স্মারকলিপি দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ব্যাংক খাত সংস্কার এখন সময়ের দাবি। গত ৭ আগস্ট তাদের আন্দোলন হয়েছিল তৎকালীন গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউর প্রধান ও নীতি-উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে। গভর্নর, দুই ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউর প্রধান ও নীতি-উপদেষ্টা পদত্যাগ করলেও বাকি দু’জন এখনও বহাল আছেন। মূলত ওই সময়ের নির্বাহী পরিচালক-১ ও বর্তমান ডেপুটি গভর্নর-৩-এর মৌখিক আশ্বাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজ চালানোর জন্য দু’জন ডেপুটি গভর্নর বহাল ছিলেন। এখন গভর্নর ও দুই ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের ফলে অন্যদেরও পদত্যাগ বা প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য সাধারণ কর্মকর্তারা দায়ী থাকবে না।
দাবির মধ্যে আরও আছে– অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিলুপ্ত করা, আগামীতে ডেপুটি গভর্নর পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পরিবর্তে পনোন্নতির মাধ্যমে পূরণ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে গভর্নর নিয়োগ দিয়ে সংসদীয় কমিটির কাছে জবাবদিহির ব্যবস্থা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনগত, আর্থিক পরিচালনগত ও ব্যবস্থাপনা স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা।
S.Alam group bangladesh bd
বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: ঋণ জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের কারণে সাধারণ মানুষ এখন আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগের মতো আমানত রাখতে ভরসা পাচ্ছেন না। তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২২ সাল থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমছে আমানতকারীর সংখ্যা।
সর্বশেষ চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ৪৭ হাজার আমানতকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে গেছেন।
তবে আলোচ্য তিন মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানত বেড়েছে ৮ হাজার ১১৩ কোটি টাকা।
আর্থিকখাত সংশিস্নষ্টরা বলছেন, ঋণ জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের কারণে বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে পড়েছে। এসব কারণে সাধারণ মানুষও এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানত রাখতে ভয় পান।
এর প্রেক্ষিতে প্রতি মাসেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতকারীর সংখ্যা কমছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যেভাবে তদারকি করার দরকার ছিল, সেটাও হচ্ছে না। এখন গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ শেষে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২৭ হাজার ৩৪১ জন। আর জুন শেষে অর্থাৎ তিন মাস পর আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩৭ জনে। সেই হিসাবে তিন মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতকারীর সংখ্যা কমেছে ৪৭ হাজার ৬০৪ জন ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতকারীর সংখ্যা কমেছিল ৩ হাজার ৮৮০ জন। এর আগে ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতকারীর সংখ্যা কমেছিল ২৫ হাজার ৭৮২ জন।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ি, এর আগের তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) এ সংখ্যা কমেছিল ১৮ হাজার ৪৯৩ জন। এছাড়া ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) এই সংখ্যা কমেছিল ৩৫ হাজার ৫ জন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, জুন প্রান্তিকে এসব প্রতিষ্ঠানে আমানত বেড়েছে ১.৮৩ শতাংশ। আলোচ্য প্রান্তিকশেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ১১৬ কোটি ৮ লাখ টাকা। আর প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে আমানত ছিল ৪৪ হাজার ৩০৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে আমানত বেড়েছে ৮ হাজার ১১৩ কোটি ৯ লাখ টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণের স্থিতি ছিল ৭৪ হাজার ৫২৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর তিন মাস পর (এপ্রিল-জুন) আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৯১৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
depositor Bangladesh bd
জিবাজারে তালিকাভুক্ত এক্সপোর্ট ইমপোর্ট (এক্সিম) ব্যাংক অব বাংলাদেশ পিএলসির সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুর বিষয়ে অনাপত্তিপত্র দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ব্যাংকটি ৩০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চেয়েছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ২৫০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যুর জন্য অনাপত্তিপত্র দিয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্যানুসারে, গত জুনে এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদ ৩০০ কোটি টাকার সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সাত বছর মেয়াদি এ বন্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থে টায়ার টু মূলধনভিত্তি শক্তিশালী করার কথা জানিয়েছিল ব্যাংকটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অনাপত্তি দেয়ার সময় বন্ডের অর্থের পরিমাণ ৫০ কোটি কমিয়ে ২৫০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
চলতি ২০২৪ হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় হয়েছে ১ টাকা ১৪ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ২১ পয়সা। গত ৩০ জুন শেষে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৪ টাকা ১৪ পয়সায়।
সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৩ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে ব্যাংকটির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৩৩ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ২ টাকা ৫৭ পয়সা। গত ৩১ ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির সমন্বিত এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ২৩ টাকায়।
২০২২ ও ২০২১ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে এক্সিম ব্যাংক। ২০২০ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ ও ২ দশমিক ৫০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ। এছাড়া ২০১৮ ও ২০১৯ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল এক্সিম ব্যাংক। ২০১৭ হিসাব বছরে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডাররা।
ব্যাংকটির ঋণমান দীর্ঘমেয়াদে ‘ডাবল এ’ ও স্বল্পমেয়াদে ‘এসটি-টু’। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২৩ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন, চলতি ২০২৪ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ও রেটিং ঘোষণার দিন পর্যন্ত প্রাসঙ্গিক অন্যান্য গুণগত ও পরিমাণগত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ প্রত্যয়ন করেছে ক্রেডিট রেটিং ইনফরমেশন অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (সিআরআইএসএল)।
২০০৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এক্সিম ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ২ হাজার কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৪৪৭ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ১ হাজার ৮৮১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ব্যাংকটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৪৪ কোটি ৭৫ লাখ ৫৭ হাজার ৩৪৪। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৩২ দশমিক ৪৫ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৮ দশমিক ৮৮, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক ৭৪ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৩৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
ডিএসইতে গতকাল ব্যাংকটির শেয়ারের সর্বশেষ ও সমাপনী দর ছিল ৮ টাকা ৬০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির দর ৭ টাকা ৬০ থেকে ১১ টাকা ৩০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করেছে।
exim bank bd
বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি করেছেন পিতা। এই পণ্যের কাঁচামাল কিনতে রিজার্ভ থেকে ডলার ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই পণ্য দুবাইয়ে বসে কিনেছে পুত্রের প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত সময়ে সেই অর্থ দেশে আসেনি। এভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইসহ তিনটি দেশে আটকে গেছে প্রায় ৮ কোটি ডলার। বর্তমানে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৯৫৭ কোটি টাকা।
রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচারের এই আয়োজন সম্পন্ন করেছে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আর আর গ্লোবাল।
বেক্সিমকো গ্রুপের ১৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে গত ১২ বছরে তিনটি দেশে পোশাক রপ্তানি দেখিয়ে এ টাকা পাচার করেছে বলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এই ঘটনায় গ্রুপটির মালিক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে এই অর্থ পাচার করেছে বেক্সিমকো গ্রুপ।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের শীর্ষ ঋণগ্রহীতা বেক্সিমকো গ্রুপ। ব্যাংকটির বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৮ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে।
জনতা ব্যাংকের রপ্তানি বিভাগ এক প্রত্যয়নপত্রে সিআইডিকে জানিয়েছে, ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট প্রায় ৮ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই টাকা দেশে আসেনি বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রত্যয়নপত্রের বিষয়টি জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল জব্বার প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অর্থ পাচারের ঘটনায় বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। ১৪ আগস্ট ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ১ সেপ্টেম্বর বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের বিষয়টি অনুসন্ধান শুরু করে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। ২২ আগস্ট সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কত টাকা পাচার
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেক্সিমকোর ১৭টি প্রতিষ্ঠান দুবাই, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যে পোশাক রপ্তানি করেছে। তদন্তে দেখা গেছে, দুবাইয়ের যে প্রতিষ্ঠানে বেক্সিমকো পোশাক রপ্তানি দেখিয়েছে, সেটি সালমান এফ রহমানের পরিবারের। কেবল পোশাক রপ্তানির আড়ালে প্রায় ৮ কোটি মার্কিন ডলার পাচার করেছে বেক্সিমকো গ্রুপ, যা বর্তমান বাজারমূল্যে ৯৫৭ কোটি টাকার সমান।
বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান তাঁর ভাই সালমান এফ রহমান। দুবাইয়ে আর আর গ্লোবালের মূল প্রতিষ্ঠান আর
আর হোল্ডিংসের প্রতিষ্ঠাতা সোহেল রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমান ও সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ান এফ রহমান। দুবাইয়ের আল গারহৌদ এলাকার জালফা বিল্ডিংয়ের ঠিকানায় আর আর হোল্ডিংসের নিবন্ধন হয়। ৫ আগস্টের আগে আর আর হোল্ডিংসের ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠানটির নানা ব্যবসার ও প্রতিষ্ঠাতাদের তথ্য দেওয়া ছিল। পরে প্রতিষ্ঠাতাসহ কিছু তথ্য সরিয়ে ফেলা হয়। প্রতিষ্ঠানটি তেল-গ্যাস, পোশাকসহ নানা খাতের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে সেখানে উল্লেখ আছে।

সিআইডি সূত্র জানায়, পোশাক রপ্তানি ছাড়াও বেক্সিমকো গ্রুপ গত ১৫ বছরে জনতা ব্যাংকসহ ৭টি ব্যাংক থেকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। এ ছাড়া নামে-বেনামে আইএফআইসি, ন্যাশনাল ব্যাংক, এবি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক থেকেও একই কায়দায় ঋণ নিয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি গত তিন বছরে বন্ডের নামে বাজার থেকে ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা নিয়েছে। এ ছাড়া আরও ২০ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার তথ্য পেয়েছে সিআইডি।
সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, বেক্সিমকো গ্রুপ সৌদি আরবের দাম্মামে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল গড়ে তুলেছে। যার পুরো অর্থ দেশ থেকে নেওয়া হয়েছে। গ্রুপটির বিরুদ্ধে পোশাক রপ্তানির বাইরে বাণিজ্যের আড়ালে ১৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে সিআইডি।
এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বেক্সিমকো গ্রুপের বক্তব্য জানতে গ্রুপটির জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান ইমপ্যাক্ট পিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বক্তব্য দিতে পারেনি।
বেক্সিমকোয় উদার জনতা
জনতা ব্যাংকের বেশ পুরোনো গ্রাহক বেক্সিমকো গ্রুপ। গ্রুপটি ১৯৭৮ সালে জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করে। ১৯৯৮ সালে গ্রুপটির পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া শুরু করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন সালমান এফ রহমান। এরপর বেক্সিমকোর টেক্সটাইল, এলপিজি প্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। ২০১৮ সালে জনতা ব্যাংক বেক্সিমকোর প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগ্রাসী অর্থায়ন করে। ব্যাংকটির মতিঝিলের স্থানীয় কার্যালয় শাখা থেকে এই অর্থায়ন করা হয়, তখন শাখাটির ব্যবস্থাপক ছিলেন মিজানুর রহমান। তিনি এখন প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত।
জনতা ব্যাংক একটি গ্রুপকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দিতে পারে, দিয়েছে তার প্রায় ১৬ গুণ বেশি। যার পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। বেক্সিমকোর ঋণের ১৮ হাজার কোটি টাকা ইতিমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে। ফলে জনতা ব্যাংকের ঋণের ৫০ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে। এতে ব্যাংকটি তারল্যসংকটে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মে পণ্য রপ্তানি হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে রপ্তানি আয় দেশে আনতে হয়। আর তা না হলে অর্থ পাচার আইনে ওই রপ্তানিকারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে বেক্সিমকোর ক্ষেত্রে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী প্রথম আলোকে বলেন, ১২ বছর ধরে পণ্য রপ্তানি করে সেই আয় দেশে না আনা বড় ধরনের অনিয়ম ও অপরাধ। এর পেছনে অর্থ পাচারের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোনো কারণ নেই। বিদেশ থেকে রপ্তানির অর্থ না আসার পরও জনতা ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটিকে যেভাবে অর্থ দিয়ে গেছে, সেটি একটি অপরাধ। এই অপরাধের সঙ্গে বেক্সিমকো ও ব্যাংকের যাঁরা যাঁরা জড়িত, তাঁদের শাস্তি হওয়া উচিত। প্রয়োজনে বেক্সিমকোর সম্পদ বিক্রি করে হলেও অর্থ আদায়ে কার্যকর সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
beximco bd
দেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চিতি বা রিজার্ভের পরিমাণ বর্তমানে ২ হাজার ৪৩০ কোটি বা ২৪ বিলিয়ন ডলার। তবে আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে এর পরিমাণ ২ হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি বাড়ায় বেড়েছে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ। সংকট কাটতে শুরু করায় ব্যাংকগুলো এখন নিজেরাই ডলার কেনা-বেচা করতে পারছে। ডলারের দাম বর্তমানে ১১৮-১২০ টাকার মধ্যে রয়েছে।
হুসনে আরা শিখা বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে ও কার্ব মার্কেটে ডলারের দামের পার্থক্য এখন ১ শতাংশেরও কম। ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। আন্তঃব্যাংক লেনদেন সক্রিয় থাকার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার এখন থেকে স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুসারে নিট রিজার্ভ গণনা করা হয়। গ্রস বা মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বাদ দিলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ জানা যায়। আইএমএফের ঋণ অনুমোদনের পর ২০২৩ সালের জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই তথ্য প্রকাশ করছে।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব নিয়ে আহসান এইচ মনসুর জানান, তিনি রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। তাতে রিজার্ভ বাড়বে, কমার কোনো ‘সম্ভাবনা নেই’।
bangladesh reserve
বাংলাদেশের জ্বালানি অবকাঠামো উন্নয়ন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায়সহ বেশকিছু খাতে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এ তথ্য জানান ব্যাংকটির রিজিওনাল হাব ম্যানেজার নাসিস সুলাইমান।
তিনি বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে অর্থাৎ আগামী তিন বছরে বাংলাদেশের জ্বালানি অবকাঠামো উন্নয়ন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায়সহ প্রয়োজনীয় বেশকিছু খাতে আমরা সহায়তা দেব। অন্যান্য ইসলামিক দেশের মতো আমাদের পলিসি অনুযায়ী সেটা দেওয়া হবে। এর পরিমাণ ৪-৫ বিলিয়ন হবে।
আরবের ইসলামিক ট্রেড ফিন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) মাধ্যমে জ্বালানি খাতে যে সহায়তা দেওয়া হয় সেটি বাড়ানো হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
এরপর উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাইক্লোন সেন্টার, বন্যায় অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত, প্রান্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, টুইন টাওয়ারের মতো বড় বড় বিল্ডিং করার মতো খাতে আমরা বিনিয়োগ করতে বলেছি।
তিনি বলেন, আমরা জ্বালানি সহায়তা বৃদ্ধির কথা বলেছি, তারা অন্যান্য ডোনারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানাবে বলেছে। আমরা আরও অনেক এডিশনাল ফান্ডের কথা বলেছি তাদের। মোটকথা ওরা আমাদের অনেক সহায়তা করছে। আরও দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা করবে সে প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছে।
IDB Islami development bank Bangladesh
বাতিল হচ্ছে বিশেষ আইনে করা চুক্তি
দ্বীপ জেলা ভোলার গ্যাস সিএনজি (কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস) করে মূল ভূখণ্ডে সরবরাহ করতে উন্মুক্ত দরপত্র ডাকতে যাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে জ্বালানি বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে করা হলে বর্তমানের চেয়ে কম খরচে ভোলার গ্যাস মূল ভূখণ্ডে সরবরাহ করা যাবে। এতে সরকার ও গ্রাহক উভয় পক্ষই লাভবান হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ প্রসঙ্গে বুধবার কালবেলাকে বলেন, ভোলার গ্যাস সিএনজি করে সরবরাহ করতে বিশেষ আইনে একটি কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হয়েছে। আমরা বিশেষ আইন স্থগিত করেছি। এখন ভোলার গ্যাস সিএনজি করে সরবরাহ করতে উন্মুক্ত দরপত্র ডাকা হবে। আমরা জ্বালানি খাতের সব কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চাই।
বুধবার কালবেলায় ভোলার গ্যাস নিয়ে ‘বিপুর মদদে ইন্ট্রাকো হাতিয়ে নিয়েছে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর বর্তমানে নির্দিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে থাকা বিশেষ আইনের চুক্তি বাতিল করে উন্মুক্ত দরপত্র ডাকার উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জ্বালানি বিভাগের সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভোলার গ্যাস সিএনজি করে সরবরাহ করতে বিশেষ আইনে তৎকালীন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীকে কাজটি দেওয়া হয়। ফলে কোম্পানিটি যে দাম নির্ধারণ করেছে, সেই দামেই শিল্পকারখানার গ্রাহকরা নিতে বাধ্য ছিলেন। বর্তমানে বেশি দাম হওয়ার কারণে গ্রাহকদের অনেকেই এই গ্যাস কিনছেন না। এই অবস্থায় বর্তমানে ভোলার গ্যাস সিএনজিকরণ বন্ধ রয়েছে। জানা গেছে, গত বছর ভোলার গ্যাস সিএনজি করার উদ্যোগ নিলে ৮ থেকে ১০ কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করে। ওইসব কোম্পানরি সঙ্গে পেট্রোবাংলা বৈঠকও করেছিল; কিন্তু পরবর্তী সময়ে সরকার-ঘনিষ্ঠ কোম্পানি ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসিকে বিশেষ আইনে কাজটি দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ২১ মে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির সঙ্গে ১০ বছরের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে ইন্ট্রাকো। পরে একই বছরের ২১ ডিসেম্বর ধামরাইয়ের অবস্থিত গ্রাফিক্স টেক্সটাইল লিমিটেডের কারখানায় সিএনজি আকারে ভোলার গ্যাস সরবরাহের মধ্যদিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। ৩ হাজার পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চি) চাপে প্রতি সিলিন্ডারে গ্যাসের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৫০০ ঘনমিটার।
বিশেষ আইনে করার এই চুক্তির মাধ্যমে কোম্পানিটি ভোলা থেকে প্রাথমিকভাবে ৫ মিলিয়ন ঘনফুট এবং পরবর্তী সময়ে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট (৭ লাখ ৮ হাজার ৪১৫ ঘনমিটার) গ্যাস দৈনিক সিএনজি আকারে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করবে। চুক্তি অনুযায়ী, ইন্ট্রাকো সরকার থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কিনেছে ১৭ টাকায়। আর বিক্রি করছে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সায়। ঘনমিটারপ্রতি লাভ ৩০ টাকা ৬০ পয়সা। এ হিসাবে দৈনিক লাভের পরিমাণ ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর মাসে লাভ ৬৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ভোলার গ্যাস সরবরাহ করে মুনাফার নামে ৪৫৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় ইন্ট্রাকো।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, উন্মুক্ত দরপত্র হলে ভোলার গ্যাস আরও কমদামে সরবরাহ করা যাবে। ভোলার গ্যাসকে ১ হাজার পিএসআই থেকে বুস্টার কম্প্রেসরের মাধ্যমে ৩ হাজার পিএসআই প্রেসারে কম্প্রেস করে মোবাইল স্টোরেজের মাধ্যমে জল এবং স্থলপথে সহজে নিয়ে আসা যায়। এতে করে কম্প্রেসর চার্জ অর্ধেকেরও কম হবে এবং ডিকম্প্রেসন চার্জ একেবারে বাদ যাবে। সরকার চাইলে কয়েকশ ইন্ডাস্ট্রিকে অনুমতি দিতে পারে, যারা ফিড গ্যাসের মূল্য (ঘনমিটার ১৭ টাকা) পরিশোধ করে নিজস্ব খরচে কম্প্রেসড ও পরিবহন করে তাদের ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়ে আসবে। এ ছাড়া প্রতি ঘণ্টায় ৫০০ ঘনমিটার গ্যাস প্রক্রিয়া করার সক্ষমতার দেশীয় ‘বুস্টার কম্প্রেসর’ মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা, যেখানে প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুৎ খরচ হবে মাত্র ৫০ কিলোওয়াট।
অন্যদিকে বর্তমানে যে মোবাইল স্টোরেজগুলো বিদ্যমান সেগুলো একেকটি প্রতিবার ৩ হাজার ঘনমিটার গ্যাস বহন করতে পারে। ভোলা থেকে ঢাকা ও আশপাশে যাতায়াত করতে যদি প্রতিবার ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়, তাহলে পরিবহন খরচ হবে প্রতি ঘনমিটারে মাত্র ৭ থেকে ৮ টাকা। প্রতিযোগিতামূলক বাজার হলে এতে সরকার ও গ্রাহক উভয়ই লাভবান হবে।
bhola gas Kalbela.com
বাতিল হচ্ছে জ্বালানি খাতের ৪ মেগা প্রকল্প। এগুলো হচ্ছে-কক্সবাজারে অবস্থিত সামিট পাওয়ারের তৃতীয় এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ), এস আলম গ্রুপের ইস্টার্ন রিফাইনারির ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২’ এবং ভোলায় রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রমের ৫টি কূপ খনন প্রকল্প। এছাড়া বাতিলের তালিকায় আছে একক কোম্পানিকে দিয়ে ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে আনার সিদ্ধান্ত। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সামিটের তৃতীয় এফএসআরইউ : ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বৈঠকেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের আলোচিত এই প্রকল্পটি বাগিয়ে নিয়েছিল সামিট গ্রুপ। কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা ও যাচাই-বাছাই ছাড়াই ওই বৈঠকে ১৭ হাজার কোটি টাকার এলএনজি টার্মিনালের কাজ দেওয়া হয় সামিটকে। মাত্র ১০ দিনের প্রক্রিয়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর একক সিদ্ধান্ত ও চাপে সামিটকে এই কাজ দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধির (বিশেষ আইন) আইন ২০১০ এর আওতায় তৎকালীন সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ৩০ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সভাকক্ষে (দ্বিতীয় তলা) ‘গ্যাস পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভা’ অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। ওই বৈঠকেই মহেশখালীতে ভাসমান তৃতীয় এলএনজি টার্মিনালের কাজ সামিটে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে (১০ জুন) কারিগরি কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই বৈঠকে তৎকালীন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব (বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব) মো. মাহবুব হোসেন, তৎকালীন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান (বর্তমান পানিসম্পদ সচিব) নাজমুল আহসানসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান যুগান্তরকে বলেন, ‘বিশেষ আইনে করা সব চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। এজন্য ৫ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে এ ধরনের প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। ফাওজুল কবির খান বলেন, আমরা এখন ভাসমান টার্মিনালের চেয়ে স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের চিন্তা করছি। এখন থেকে সব হবে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায়।’
জানা গেছে, কক্সবাজারের মহেশখালীতে তৃতীয় এফএসআরইউ স্থাপনের জন্য বেশকিছু কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন জ্বালানি উপদেষ্টার নির্দেশে শুধু সামিটের প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই না করেই সামিটের প্রস্তাব আমলে নিয়ে তাদের কাজ দেওয়া হয়। এমনকি সামিটকে কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর কারিগরি কমিটি প্রতিবেদন দেয়। নিয়ম অনুযায়ী কারিগরি কমিটির প্রতিবেদনের পর প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ ও কাজের অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি কক্সবাজারের মহেশখালীতে দেশের তৃতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল বা এফএসআরইউ নির্মাণের খসড়া চুক্তি অনুমোদন করে। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুমোদিত খসড়া চুক্তি অনুযায়ী, টার্মিনাল চালুর পর থেকে ১৫ বছর মেয়াদে দৈনিক ৩ লাখ ডলার (চুক্তিতে উল্লিখিত বিনিময় হার অনুযায়ী ৩ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকার সমপরিমাণ) রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ পাবে সামিট।
গ্যাজপ্রমের ৫ কূপ খনন প্রকল্প : জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করার জন্য সঞ্চালন লাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই এখনো শেষ হয়নি। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দ্রুত শেষ করা হলেও ২০২৬ সালের আগে সঞ্চালন লাইন হচ্ছে না। কিন্তু জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর আশায় ভোলা গ্যাসক্ষেত্রে পাঁচটি কূপ খননের কাজ দেওয়া হয় রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি গ্যাজপ্রমকে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) আবিষ্কার করা এ গ্যাসক্ষেত্রে বিনা দরপত্রে গ্যাজপ্রমকে কূপ খননের কাজ দেওয়া হয়।
বাপেক্সের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিজস্ব লোকবল দিয়ে তাদের একটি কূপ খনন করতে সর্বোচ্চ খরচ হয় ৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে গ্যাজপ্রমকে দিয়ে কূপ খনন করতে গিয়ে খরচ হয় ১৮০ কোটি টাকার মতো। ২০২০ সালে তিনটি কূপ খননের জন্য গ্যাজপ্রমকে দিতে হয়েছে ৫৪০ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার যুগান্তরকে বলেন, সরকার গ্যাজপ্রর্মের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে তিনি শুনেছেন যদি এই প্রকল্প বাতিল হয় তাহলে আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে কূপগুলো খনন করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের এখন খুবই গ্যাস ক্রাইসিস আছে। তাই টার্গেট হচ্ছে স্থানীয়ভাবে দ্রুত গ্যাস উত্তোলন করা। সেজন্য যদি কোনো প্রকল্প বাতিল হয়ে যায়, তাহলে যাতে সময়ক্ষেপণ না হয়, সেজন্য সবকিছু চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে।
বিনা দরপত্রে ও বাপেক্সের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাজপ্রমকে কূপ খননের কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘কূপ খনন করার জন্য যে পরিমাণ টাকা দরকার তা বিনিয়োগ করা সরকারের উচিত ছিল। এখন যন্ত্রপাতি না থাকার অজুহাতে বাপেক্সের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানিকে কূপ খননের কাজ দেওয়া অপরাধ।’
ইআরএল ও এস আলম গ্রুপের প্রকল্প : ইস্টার্ন রিফাইনারি (ইআরএল) এবং এস আলম গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রস্তাব ইতোমধ্যে বাতিল করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। ২৯ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল্লাহ এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, বিপিসির আওতাধীন ইআরএল কর্তৃক বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২’ শীর্ষক প্রকল্পটি বিপিসি/ইআরএল এবং এস আলম গ্রুপের মধ্যে সরকারি বেসরকারি যৌথ উদ্যোগী চুক্তির আওতায় বাস্তবায়ন প্রস্তাব বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পটির ডিপিপি বৈদেশিক মুদ্রার হালনাগাদ রেট অনুযায়ী প্রাক্কলন এবং সব ক্রয় পরিকল্পনা পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী প্রণয়নপূর্বক পরিকল্পনা কমিশনে পুনর্গঠিত ডিপিপি পাঠানোর জন্য বিপিসিতে পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
একক কোম্পানিকে দিয়ে ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে আনার সিদ্ধান্ত : ভোলার গ্যাস সিএনজি (কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস) করতে আরও একাধিক কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হবে। উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে কোম্পানিগুলো নির্বাচন করা হবে। বর্তমানে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ও দরপত্র আহ্বান ছাড়া একটি বিশেষ কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিটির নাম ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন। জানা গেছে, কোম্পানিটি ইতোমধ্যে এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অস্বাভাবিক মূল্য নির্ধারণ করে সাড়ে চারশ কোটির বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শেয়ার বাজার থেকে। আর এ উদ্যোগের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। নিজের পছন্দের কোম্পানিকে কাজ দিতে কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়াই বিশেষ আইনে ভোলার গ্যাস সিএনজি করার চুক্তি করা হয়।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ছাত্র-জনতা মিলে ভোলায় অবস্থিত ইন্ট্রাকোর রিফুয়েলিং স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়। এখনো স্টেশনটি বন্ধ আছে। অন্যদিকে, এ খাতের ব্যবসায়ীরা চুক্তি বাতিল করে পুনরায় দরপত্রের মাধ্যমে কাজ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
অটোগ্যাসের স্টেশন মালিক সমিতির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. সিরাজুল মাওলা এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, ভোলার গ্যাস সিএনজি করার প্রকল্পে সরকার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্দিষ্ট একটি কোম্পানিকে বিশেষ আইনে কাজ দিয়ে অস্বাভাবিক মুনাফা করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিটি যে পদ্ধতিতে ভোলার গ্যাসকে সিএনজি করেছে, তা জটিল। এর চেয়ে সহজ পদ্ধতি বা টেকনোলজি আছে। কিন্তু ওই কোম্পানি ছাড়া কাউকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। অনেক কোম্পানি সেই সময় আগ্রহ দেখালেও কাউকে কাজ দেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, প্রায় ৮ থেকে ১০টি কোম্পানি ভোলার গ্যাস সিএনজি করে সরবরাহের আগ্রহ দেখালেও প্রতিমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশনায় ইন্ট্রাকোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে পেট্রোবাংলা। ইন্ট্রাকোর এমডি রিয়াদ আলী নসরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী সহযোগী। এর আগেও এই ইন্ট্রাকোকে একাধিক এলপিজি ফিলিং স্টেশন করার অনুমোদন দেন নসরুল হামিদ।
চুক্তি অনুযায়ী, ইন্ট্রাকো সরকার থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কিনেছে ১৭ টাকায়। আর বিক্রি করছে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সায়। ঘনমিটারপ্রতি লাভ ৩০ টাকা ৬০ পয়সা। এই হিসাবে দৈনিক লাভের পরিমাণ ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ভোলার গ্যাস সরবরাহ করে মুনাফার নামে ৪৫৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় ইন্ট্রাকো। বন্ধ না হয়ে কার্যক্রম চালু রাখা হলে বছরে মুনাফা হবে ৭৮০ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এটা খুবই অস্বাভাবিক।
ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব, প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ক্রয়মূল্য ১৭ টাকার পরিবর্তে ২৭ টাকা এবং কম্প্রেশন চার্জ প্রতি ঘনমিটারে ১০ টাকা হারে যোগ করে বিক্রয় মূল্য ৩৭ টাকা ধার্য করা হলে সরকার, ব্যবসায়ী ও গ্রাহকরা লাভবান হবেন। আগ্রহী শিল্প মালিকরা এই গ্যাস পরিবহণ ভাড়া পরিশোধ করে তাদের কারখানায় নিয়ে যাবেন। বর্তমানে ভোলার তিনটি গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। যেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট।
energy sector mega project
গাজীপুরের কাশিমপুরের ভবানীপুর এলাকায় বিগবস নামে একটি কারখানায় আগুন লাগানো হয়েছে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা তাঁদের তাড়িয়ে দেন।
কাশিমপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বেক্সিমকো গ্রুপের কারখানার শ্রমিকেরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা অন্যান্য কারখানাও বন্ধ করতে বিভিন্ন কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর চালায়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ চেষ্টা করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, আজ সকাল থেকে বকেয়া বেতনের দাবিতে বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেন। তাঁরা সড়কও অবরোধ করেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক দল বিক্ষুব্ধ শ্রমিক বিগবস কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেন। পরে তাঁরা লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, বিগবস নামে একটি কারখানায় আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে তাঁদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। তবে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা তাঁদের একটি গাড়িতে ভাঙচুর করলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা চলে আসেন। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে, তারা সহযোগিতা করলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আবার গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করবেন।
বিগবস করপোরেশন লিমিটেড কারখানার স্টোরকিপার ওয়াহেদ খান বলেন, বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকেরা বেতন পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা বিগবস কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানায় এসে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। পরে শ্রমিকেরা তাঁদের কারখানার ওয়্যার হাউজে অগ্নিসংযোগ করে। সেখানে মূল্যবান ফেব্রিক্স রয়েছে। এছাড়াও এর আশেপাশে বসতবাড়ির দোকানপাটও রয়েছে।
সংশোধনী: সংবাদটিতে প্রথমে বিগবস কারখানাটি বেক্সিমকো গ্রুপের বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে কারখানাটি বেক্সিমকো গ্রুপের নয়।
kashimpur karagar


