October 23, 2024 1:14 pm
Home Banking ডিসেম্বরেই ঘুরে দাঁড়াবে এসআইবি – মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ

ডিসেম্বরেই ঘুরে দাঁড়াবে এসআইবি – মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ

by fstcap

দেশের শরিয়াহভিত্তিক অন্যতম বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি (এসআইবি পিএলসি)। ১৯৯৫ সালে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি বা এসআইবিএলের যাত্রা শুরু হয়। ব্যাংকটির বর্তমানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ। ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থা, আগামীর পদক্ষেপ সম্পর্কে  কথা বলেছেন তিনি। বিস্তারিত….

প্রশ্নঃ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে আছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। খাদের কিনারে চলে যাওয়া ইসলামী ধারার এ ব্যাংকটিকে ঘুরে দাঁড়াতে কোন কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দিচ্ছেন। মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছেন কীভাবে?

মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ : এ ব্যাংকে আমি দীর্ঘ ২২ বছর অতিবাহিত করেছি। ফলে দীর্ঘদিন যুক্ত থাকা আমার এ চলার পথে একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। আমি ২০০২ সালের জানুয়ারিতে ফাস্ট অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ব্যাংকে যুক্ত হই। ২২ বছরের পথচলায় ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় কাজ করার সুযোগ হয়েছে। এ ব্যাংকের সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক। ফলে শাখাগুলোতে কী ধরনের সমস্যা রয়েছে, কীভাবে গ্রাহকদের সেবা দিতে হবে- তা হাতেকলমে দেখার সুযোগ হয়েছে।

বর্তমানে ব্যাংকে একটি ক্রাইসিস মুহূর্ত চলছে। আমি মনে করি, এ সমস্যার ৫০ শতাংশের বেশি মানব সৃষ্ট এবং বাকি ৫০ শতাংশেরও কম প্রকৃতিগতভাবে তৈরি হয়েছে। সে কারণে শাখা পর্যায়ে নগদ না পাওয়ার পেছনে কী কী ধরনের সমস্যা হতে পারে, কীভাবে এর সমাধান করা যেতে পারে- এটা আমি পর্যালোচনা করেছি। পাশাপাশি আমাদের প্রধান কার্যালয়ে যারা সিনিয়র ম্যানেজার এবং মাঠের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রয়েছেন- তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ব্যাংকের অভিজ্ঞ সব কর্মকর্তা এ ব্যাপারে আমাকে মানসিকভাবে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন।

প্রশ্নঃ বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে কী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন?

মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ : আমি মনে করি, আমরা যদি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা নেই এবং গ্রাহকদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে দিতে থাকি, আগামী দুই বছরেও তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারব না। অর্থাৎ আমার ডিপোজিট সব দিয়েও গ্রাহক সন্তুষ্টি আদায় করা যাবে না। এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- আমাদের প্রাথমিক যে ঘাটতি রয়েছে এটা সামাল দিতে আমাদের যত ইউটিলিটি আছে অর্থাৎ যেগুলোর মাধ্যমে নগদ টাকা জমা হয়, সেগুলোর পেছনে আমরা সময় বেশি দিব।

আমরা বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এর মধ্যে নগদ জমা বাড়ানোর পাশাপাশি রিকভারি অর্থাৎ মেয়াদোত্তীর্ণ ও খেলাপি বিনিয়োগ থেকে আদায় বাড়ানোর প্রতি বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাময়িকভাবে স্থগিত হওয়া বিভিন্ন বিল সংগ্রহের হিসাব যেমন- ডেসকো, তিতাস, পল্লী বিদ্যুৎ, ওয়াসা, বিটিসিএল, বিআরটিএ, ডিপিডিসি, বাখরাবাদ, কর্ণফুলীসহ আরো বেশকিছুর প্রতিষ্ঠানের সেবা দেয়ার মাধ্যমে নগদ আয় বাড়ানো হচ্ছে- যা আমাদের তারল্য সংকট কাটাতে সহায়তা করবে। এছাড়া আরো বেশকিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছি যার মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পুরোদমে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির মাধ্যমে তারল্য সহায়তা পেয়েও গতি ফিরেছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে। গ্রাহকদের পুরো টাকা না দিতে পারলেও বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটি এখন স্বল্প অঙ্কের চাহিদা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করতে পারছে। এরই মধ্যে সম্মানিত গ্রাহকদের বিভিন্ন হিসাবে (এ-সিএস) নগদ গ্রহণ বেড়েছে এবং সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৯৪ কোটি টাকা মেয়াদোত্তীর্ণ এবং খেলাপি বিনিয়োগ আদায় করেছে এসআইবিএল। ব্যাংকটিতে সুশাসন ফিরাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

সব গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ভালো ও মন্দ সবাই আমাদের গ্রাহক। সবাইকে বলছি নিয়মিত বিনিয়োগ পরিশোধ করতে; যারা নিয়মিত দেয় না, তারাও অনেক আশ্বাস দিয়েছেন বিনিয়োগ পরিশোধ করবে। তবে যারা টাকা দিবে না- তাদের ব্যাপারেও আমরা কঠোর। তাদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পিছু হটব না।

প্রশ্নঃ বর্তমান পর্ষদ কীভাবে সহযোগিতা করছে?

মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ : বর্তমানে ব্যাংকের ভালো ও নির্ভরযোগ্য বোর্ড অব ডিরেক্টরস রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রত্যেকেই নিজ স্থানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য প্রশংসিত। বিজ্ঞ পর্ষদ তাদের সুচিন্তিত পলিসি ও দক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছেন। পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে শতভাগ স্বচ্ছতা রয়েছে। এ রকম বোর্ড আর্থিক খাতে সবখানে দরকার। আশা করছি, সবাই মিলে শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমরা অন্যতম সেরা ব্যাংক হব। একটি ভালো ব্যাংক তৈরিতে যে পরিকল্পনা দরকার, তার সব কিছুই নেয়া হয়েছে।

প্রশ্নঃ ব্যাংকটি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ : আমানত প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়াতে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। বর্তমানে ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ৩২ হাজার ৭১৩ কোটি টাকার মতো- যা বিগত দুই মাসে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। বর্তমানে ফরেন ট্রেডের পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। আমদানি রপ্তানি মিলে ১৬ হাজার কোটি টাকা মতো। এটা বাড়ানোর চেষ্টা থাকবে। সবচেয়ে বেশি জোর দিতে চাই মেয়াদোত্তীর্ণ ও খেলাপি বিনিয়োগ কমিয়ে আনতে।

এছাড়া আগের মতো গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনতে নানাবিধ কার্যক্রম অব্যাহত রাখব। তারল্য সংকট থাকলেও এ ব্যাংকে গ্রাহকদের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত। রেমিট্যান্স গ্রাহকদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এর আগে যেসব রেমিট্যান্স গ্রাহক তাদের কষ্টার্জিত অর্থ আমাদের মাধ্যমে পাঠাতেন তাদের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করছি, যাতে তারা আগের মতোই রেমিট্যান্স পাঠানো অব্যাহত রাখেন। আমাদের পরিকল্পনা হলো ওভারডিও, ক্লাসিফায়েড ও অবলোপনকৃত বিনিয়োগ থেকে আদায়ের কার্যক্রমকে আরো জোরদার করা, চলমান মামলাগুলো গতিশীল করা, স্থগিত হয়ে থাকা মামলাগুলোকে পুনরায় সচল করা। এছাড়া ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং ক্ষেত্রভেদে তাদের নামে নতুন মামলা দেয়া।

প্রশ্নঃ এস আলম গ্রুপের নামে-বেনামে ঋণের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিবেন?

মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ : আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যতই শক্তিশালী ব্যক্তি হোক, ব্যাংকের টাকা ব্যাংককে, জনগণের টাকা জনগণকে ফেরত দিতে হবে। এ মোটিভ নিয়ে আমরা নেমেছি। এস আলম গ্রুপ নামে-বেনামে এসআইবিএল থেকে যে ঋণ নিয়েছে, তার মধ্যে চলমান কিছু প্রকল্প থেকে টাকা আদায় সম্ভব এবং সেগুলো আদায়ের ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত সচেষ্ট। এ গ্রুপের প্রায় ২৫০ কোটি টাকার এমটিডিআর (মেয়াদি আমানত) হিসাব আমরা এর মধ্যেই যাচাইয়ের মাধ্যমে স্থগিত করে রেখেছি। এলসি খোলাসহ বিভিন্ন ব্যাংকিং কার্যক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের ওপর কিছু সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিল- যা পর্যায়ক্রমে তুলে নেয়া হচ্ছে। এতে করে আমাদের ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে চলেছে। এসআইবিএল জন্মগতভাবে এস আলম গ্রুপভুক্ত ব্যাংক নয়। ২০১৭ সালে জোরপূর্বক গ্রুপটি এ ব্যাংক দখল করে নেয়। ফলে এস আলম গ্রুপ পরিচালিত অন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এসআইবি পিএলসিকে মেলানো ঠিক হবে না।

প্রশ্নঃ বর্তমানে ব্যাংকে কী ধরনের সেবা দিচ্ছেন?

মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ : শরিয়াহ মোতাবেক সব ধরনের ব্যাংকিংসেবা দিচ্ছি। চালু রয়েছে ১৮০টি শাখা, ২৩৬টি উপশাখা, ৩৭৪টি এজেন্ট ব্যাংকিং ও ২২৪টি এটিএম বুথ। চব্বিশ ঘণ্টা এটিএম সার্ভিস ও রিয়েল টাইম অন-লাইন ব্যাংকিং চালু রয়েছে। বৈদেশিক রেমিটেন্স সেবার জন্য বিশ্বের বিখ্যাত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রেমিট্যান্স কোম্পানির সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে।

তাছাড়া আমাদের সব শাখায় রয়েছে অনলাইন ভিত্তিক ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট করার সুবিধা। এসআইবিএলে অনেক ডিপোজিট প্রোডাক্ট ও ইনভেস্টমেন্ট প্রোডাক্ট রয়েছে। আমাদের কিছু একেবারেই ব্যতিক্রম এবং জনবান্ধব ডিপোজিট প্রডাক্ট রয়েছে। জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে ছাদ বাগানে আমরা বিনা জামানতে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ইনভেস্ট (ঋণ) প্রকল্প রয়েছে। এটার ভালো ফল পেয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের এ ছাদকৃষিকে কৃষিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। আমাদের আরেকটা প্রোডাক্ট আছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ক্রয়ে বিনিয়োগ বিষয়ে। সাধারণত ব্যাংকগুলো নতুন গাড়িতে ইনভেস্ট করে বা ঋণ দেয়। আমরা রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ক্রয়ের জন্য ইনভেস্ট করে থাকি। এটাও সাধারণ মানুষের জন্য। আমাদের অবসরপ্রাপ্তদের জন্য একটা প্রোডাক্ট রয়েছে। অনেকে অবসরের পর সঠিক সঞ্চয় প্রকাল্প না জানার কারণে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে টাকা নষ্ট করে। আমরা তাদের আমানত রাখার বিপরীতে মাসিক ভিত্তিতে লাভ বেশি দেয়ার প্রস্তাব দেই।

‘হকার, ড্রাইভারদের জন্যও আমরা প্রোডাক্ট নিয়ে এসেছি। ড্রাইভাররা যাতে গাড়ির মালিক হতে পারে সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গমনেচ্ছু ছাত্রদের বিশেষ কর্জে-হাসানা প্রদান প্রকল্প আছে। এটা সাধারণ মানুষের জন্য খুবই উপকারী। এ ক্ষেত্রে আমরা নামমাত্র একটা ন্যূনতম সার্ভিস চার্জ নিয়ে থাকি। #ভোরের কাগজ

You may also like