প্রায় চার দশক আগে ওষুধ খাতের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। পাশাপাশি লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জেও কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত। এ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও তার ভাই এএসএফ রহমান। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক ভবিষ্যৎ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিটির প্রায় ৮৬ শতাংশ শেয়ারই দেশী-বিদেশী ব্যক্তি বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়েছে। তাছাড়া লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হওয়ার কারণে কোম্পানির দৈনন্দিন কাজে এর উদ্যোক্তাদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। ক্ষমতায় থাকাকালীন অবস্থায়ও সালমান এফ রহমান পেশাদার কর্মীদের হাতেই কোম্পানিটি পরিচালনার ভার ছেড়ে দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার ধারণ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এ বছরের জুলাই শেষে কোম্পানিটির ৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ শেয়ার ছিল এর দুই উদ্যোক্তার কাছে। এর মধ্যে সালমান এফ রহমানের কাছে ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ ও এ এস এফ রহমানের কাছে ছিল ২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপ-সংশ্লিষ্ট আরো পাঁচ প্রতিষ্ঠানের কাছে ছিল ১০ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ শেয়ার। এর মধ্যে বেক্সিমকো হোল্ডিংস লিমিটেডের কাছে ৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ, বেক্সিমকো লিমিটেডের কাছে দশমিক ৭১ শতাংশ, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে ৩ দশমিক ২২ শতাংশ, বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাছে দশমিক ২২ শতাংশ এবং ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট ও ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের কাছে ছিল দশমিক ২৯ শতাংশ শেয়ার। সব মিলিয়ে দুই উদ্যোক্তা ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়েছে ১৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ শেয়ার।
লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের বিনিয়োগকারীদের কাছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ২২ দশমিক ৪২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের বিদেশী পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৯ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ার। স্থানীয় আর্থিক ও অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে রয়েছে ২৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ শেয়ার। আর ব্যক্তি শ্রেণীর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ২৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ শেয়ার। সব মিলিয়ে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়েছে ৮৫ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার।
দেশের ওষুধের বাজারের ১০ থেকে ১১ শতাংশ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের। কোম্পানিটি গত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে ৩ হাজার ৯২৬ কোটি টাকার ওষুধ বিক্রি করেছে। এ সময়ে কোম্পানির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৪৫২ কোটি টাকা। সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটি ৩ হাজার ৩০৫ কোটি টাকার ওষুধ বিক্রি করেছে। এ সময়ে কোম্পানিটির ৪৩৭ কোটি টাকা কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যান্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির বড় অংকের ঋণ থাকলেও সে তুলনায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ঋণের পরিমাণ বেশ কম। চলতি বছরের ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪৩ কোটি টাকা। এ সময়ে কোম্পানির সংরক্ষিত আয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকায়।
জানতে চাইলে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ আলী নেওয়াজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমানে আগের তুলনায় কোম্পানি ৮৫ শতাংশের মতো ব্যবসা করতে পারছে। ধারাবাহিকভাবে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। কোম্পানির দৈনন্দিন কার্যক্রমে পর্ষদের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। পেশাদার কর্মীদের মাধ্যমেই কোম্পানির কার্যক্রম চলছে।’
তিনি আরো জানান, আপাতত পর্ষদ পুনর্গঠনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত নেবেন। বর্তমানে কোম্পানির জ্যেষ্ঠ পরিচালক ইকবাল আহমেদই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের পুঁজিবাজারের পাশাপাশি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জেও তালিকাভুক্ত। এ কারণে কোম্পানিকে কঠোর সুশাসন মেনে চলতে হয়। তাছাড়া কোম্পানির সিংহভাগ শেয়ারই দেশী বিদেশী বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়েছে। ফলে কোম্পানির কার্যক্রমে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সেভাবে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।