দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে বিশেষ করে বলতে গেলে, ব্যাংকিং খাতে নানা অনিয়ম চলছে। ফলে এই খাতটি প্রায় ডুবতে বসেছে। পুঁজিবাজারেও এ খাতের অবস্থান ব্যাতিক্রম নয়। যদিও পুঁজিবাজার যে খুব ভালো সময় পার করছে তা কিন্তু না। তবে পুঁজিবাজার ভালো থাকুক আর খারাপ থাকুক ব্যাংক খাতের সুদিন দেখার সৌভাগ্য হয়নি বিনিয়োগকানীদের।
যেখানে ১৫ থেকে ২০ টাকার নিচে কোন সিগারেটের সাথে এক কাপ চা পাওয়া যায় না, সেখানে অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার দর এর চেয়ে কম দামে বেচা-কেনা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বা বিনিয়োগকারীরা ১৮-২০ টাকা একটি সিগারেটের ধোয়ায় উড়িয়ে দিতে কার্পন্য করছেন না, সেখানে ৪-৫ টাকায় লেনদেন করা একটি ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করতে রাজি নন।
মুলত, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বিভিন্ন অনিয়মের মধ্যে আছে- প্রভাবশালী মহলের চাপ ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঋণ অনুমোদন, ভুয়া কোম্পানির নাম ব্যবহার করে ঋণ নেওয়া এবং পরিচালকদের নিয়ম বহির্ভূত আধিপত্য বিস্তার। এসব অনিয়মের কারণে খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে এমন করুণ দশা বিরাজ করছে প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, পুঝজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬ ব্যাংকের মধ্যে অর্ধেকের বেশি বা ১৯টিই ১০ টাকা বা এর নিচে লেনদেন করছে। এছাড়া ১০টি ২০ টাকার মধ্যে আর ৪-৫ টি ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যেই ঘুরাফেরা করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংক খাতে নানা অনিয়মের তথ্যে বেরিয়ে এসেছে সত্য। তারপরও শেয়ার দাম এতে নিচে নেমে যাওয়ার মতো খারাপ অবস্থায় যায়নি দেশের ব্যাংক খাত। মূলত বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটের কারণে ব্যাংকের শেয়ার দামে এমন করুণ দশা বিরাজ করছে।
তাদের মতে, ব্যাংক খাতের শেয়ার দামের দুরবস্থার কারণে সার্বিক শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে যে টানা দরপতন হয়েছে, সেখানেও ব্যাংক খাতের দুরবস্থার ভূমিকা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পরিচালকরা কম দামে তাদের ব্যাংকের শেয়ার কেনার উদ্যোগ নিতে পারেন। এতে বিনিয়োগকারীদের ব্যাংকের ওপর আস্থা বাড়বে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক নিয়ে অনেক নেতিবাচক সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে। বিশাল অঙ্কের ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। পরিচালকরা পারস্পরিক যোগসাজশে ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ আছে। এসব কারণে ব্যাংকের শেয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তারপরও আমি মনে করি বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ার দাম যে পর্যায়ে নেমেছে এত নিচে নামা যুক্তিসঙ্গত নয়।
তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে নানা অনিয়ম হয়েছে সত্য। তবে দেশের ব্যাংক খাত এত খারাপ হয়ে যায়নি যে এভাবে শেয়ারের দরপতন হবে। এখনো ব্যাংক খাতই দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। মূলত বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটের কারণে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য ব্যাংকের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসলে অবশ্যই তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলো একের পর এক বোনাস শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন ও শেয়ার বাড়িয়েছে। সেই শেয়ার তারা বাজারে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করেছেন। এখন ব্যাংকের শেয়ার দাম অনেক কমে গেছে। পরিচালকদের উচিত এখন কম দামে বাজার থেকে নিজ ব্যাংকের শেয়ার কেনা। তাহলে এ খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের কিছুটা হলেও আগ্রহ বাড়বে।
bank share bangladesh bd