বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি সামিট পাওয়ার লিমিটেডের (এসপিএল) আয় ব্যাপক হারে কমে গেছে। তবে আয়ের তুলনায় উৎপাদন ব্যয় বেশি কমায় কোম্পানিটি মুনাফার প্রবৃদ্ধিতে ফিরে এসেছে। চলতি ২০২৩-২৪ হিসাববছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) আয় প্রায় ৩০ শতাংশ কমলেও নিট মুনাফা উল্টো প্রায় ৯ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানিটির অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি হিসাববছরের প্রথমার্ধে সামিট পাওয়ার উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয় করেছে ২ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। আগের হিসাববছরের একই সময়ে যা ছিল ৩ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির আয় কমেছে ৯২৭ কোটি টাকা বা ২৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। তবে চলতি হিসাববছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির উৎপাদন ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এর ফলে আয় কমলেও উল্টো মুনাফা বেড়েছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি প্রথমার্ধে সামিট পাওয়ারের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৭৫৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা আয়ের ৭৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর ২০২২-২৩ হিসাববছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির উৎপাদন ব্যয় ছিল ২ হাজার ৬৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, যা সে সময়ের আয়ের ৮৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে উৎপাদন ব্যয় কমেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। এর ফলে কোম্পানির নিট মুনাফা বেড়েছে। চলতি প্রথমার্ধে সামিট পাওয়ারের নিট মুনাফা হয়েছে ১৮২ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা আগের হিসাববছরের একই সময়ে ছিল ১৬৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
এ ছাড়া চলতি হিসাববছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির আয় হয়েছে ৮২৯ কোটি টাকা, আগের হিসাববছরের একই প্রান্তিকে যা ছিল ১ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ৮৭ কোটি টাকা, আগের হিসাববছরের একই প্রান্তিকে যা ছিল ৮০ কোটি টাকা।
চলতি হিসাববছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৭১ পয়সা, আগের হিসাববছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৫৭ পয়সা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৯ টাকা ৭৭ পয়সা।
২০২২-২৩ হিসাববছরে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৪৬ শতাংশ। একই হিসাববছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। ঘোষিত লভ্যাংশ ও অন্যান্য এজেন্ডায় বিনিয়োগকারীদের অনুমোদন নিতে এ বছরের ১৮ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টায় হাইব্রিড সিস্টেমে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আহ্বান করা হয়েছে।
২০২২-২৩ হিসাববছরে কোম্পানিটির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৭ পয়সা, আগের হিসাববছরে যা ছিল ৩ টাকা ৮৭ পয়সা। সে হিসাবে কোম্পানিটির সমন্বিত ইপিএস কমেছে ৪৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। সমাপ্ত হিসাববছরে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি নিট পরিচালন নগদ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ৭ টাকা ৪ পয়সা, আগের হিসাববছরে যা ছিল ৫ টাকা ৯১ পয়সা। গত ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির সমন্বিত এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩৮ টাকা ২ পয়সা, আগের হিসাববছরে যা ছিল ৩৫ টাকা ৭২ পয়সা।
২০২১-২২ হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করে সামিট পাওয়ারের পর্ষদ। আলোচ্য হিসাববছরে কোম্পানিটির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ৮৭ পয়সা, আগের হিসাববছরে যা ছিল ৫ টাকা ২৫ পয়সা। ওই বছরের ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির সমন্বিত এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩৫ টাকা ৭২ পয়সায়। আগের হিসাববছর শেষে যা ছিল ৩৪ টাকা ৪৫ পয়সায়।
৩০ জুন সমাপ্ত ২০২১ হিসাববছরে ৩৫ শতাংশ ও ২০২০ হিসাববছরে ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে সামিট পাওয়ার। এর আগে ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯ হিসাববছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ৩৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে সামিট পাওয়ার। ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় সামিট পাওয়ার। তার আগে ২০১৭ হিসাববছরের জন্য ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা।
২০০৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৬৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ২ হাজার কোটি ৯৪ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ১০৬ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ২৩৯টি। এর মধ্যে ৬৩ দশমিক ১৮ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালক, ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বাকি ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।
source: www.deshrupantor.com
summit power limited ipo profit gain