Home Featured জালিয়াতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দরকার

জালিয়াতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দরকার

by fstcap

সমকাল : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

এটিএম তারিকুজ্জামান : বেশ কিছু কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম দেখা যায়।  ঢালাওভাবে বলার সুযোগ নেই যে, সবার আর্থিক প্রতিবেদন খারাপ। তবে যখন মানুষ একের পর এক কোম্পানির প্রতিবেদনে অনিয়মের তথ্য পায়, তখন আস্থার সংকট তৈরি হয়। সার্বিকভাবে আমাদের আর্থিক প্রতিবেদনগুলো এর কার্যকারিতা, স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে পারছে না। এর প্রধান দায় এসব কোম্পানির। কারণ তারা আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে, আর নিরীক্ষক তা নমুনাভিত্তিক যাচাই করে পর্যবেক্ষণ দেন। তবে নিরীক্ষক যদি সততা, দক্ষতা ও পক্ষপাতিত্বহীন দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা বিভাগের ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা কমে যায়। এখানে ঘাটতি আছে।

সমকাল : আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে অভিযোগ সবচেয়ে বেশি এবং বেশ পুরোনো। এর প্রতিকার কী? 

 

এটিএম তারিকুজ্জামান : আইপিওতে আসা কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতি থাকার প্রমাণ পেলে কোম্পানি, নিরীক্ষক, ইস্যু ব্যবস্থাপক, অবলেখনকারীসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বিরুদ্ধেই কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এর ফলে ভবিষ্যতে যারা আইপিওতে আসবে, তারা অনিয়ম করার সাহস পাবে না।  

সমকাল : ব্যবস্থা তো কিছু ক্ষেত্রে নেওয়া হয়। বিএসইসি কিছু জরিমানা করে। কিন্তু অনিয়ম বন্ধ হচ্ছে না কেন? 

এটিএম তারিকুজ্জামান : শুধু জরিমানা যে কাজ করছে না, তা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি। তাই শুধু প্রতিষ্ঠানকে নয়, অনিয়মের জন্য যাদের দায় আছে, সবাইকে চিহ্নিত করতে হবে। এরপর দায় অনুযায়ী পৃথক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে হয়তো অনিয়ম কমবে।

সমকাল : জরিমানাই কি অপরাধের উত্তম শাস্তি?

এটিএম তারিকুজ্জামান : অবশ্যই নয়। অপরাধের মাত্রা বেশি হলে লাইসেন্স বাতিল করা উচিত। দায়ী ব্যক্তিদের আরও বড় শাস্তির (যেমন জেলে পাঠানো) জন্য প্রতারণার মামলা করা যেতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে বেশি কঠোর না হয়ে এক বা দু’বার সময় দেওয়া যেতে পারে। অভ্যাসগতভাবে কেউ অন্যায় করলে তাঁকে স্থায়ীভাবে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মামলা করা উচিত। কোনো কোম্পানির আইপিও আগে বাতিল হওয়ার পর পুনরায় পাস হলে আগে কেন বাতিল হয়েছিল এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকলে তা বাধ্যতামূলকভাবে নতুন প্রসপেক্টাসে লাল হরফে ছাপানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং এ তথ্য আইপিও প্রসপেক্টাসের শুরুতেই থাকতে হবে। কোনো ব্যক্তির দায় থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিষয়ে (তাঁর কোম্পানি থাকলে সেখানে ওয়েবসাইটে) তাঁর প্রোফাইলেও এ ধরনের তথ্য সন্নিবেশ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এভাবে ব্যবস্থা নিলে সামাজিকভাবে সম্মানহানির ভয়ে ব্যক্তি অনিয়মে জড়াবেন না এবং অনিয়ম ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে আসবে।

সমকাল : আইপিওর আগে জালিয়াতি বন্ধে কোনো ব্যবস্থা কি নেওয়া হয়েছে?

এটিএম তারিকুজ্জামান : জালিয়াতি প্রতিরোধের জন্য একমাত্র উপায় হলো, আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। এমনভাবে ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে সংশ্লিষ্টরা আর কোনো দিনই এমন জালিয়াতি করার সুযোগ না পান। এর বিকল্প কিছু নেই। 

সমকাল : আইপিওতে কোনো অনিয়ম পেলে তথ্যের সত্যতা ও যথার্থতা বিষয়ে বিএসইসি নিশ্চয়তা দেয় না। সংস্থাটির মতে, ভুল কিছু থাকলে তা কোম্পানি, নিরীক্ষক ও অন্যদের দায়। এভাবে দায় এড়ানোর কি কোনো সুযোগ আছে?

এটিএম তারিকুজ্জামান : আইন অনুযায়ী গেলে কমিশনের যুক্তি ঠিক আছে। কিন্তু নৈতিক দিক থেকে দেখলে দায় নিতে হয়। কারণ বিএসইসি আইপিও আবেদন পেয়েই তা অনুমোদন করে না। অনুমোদনের আগে যাচাই-বাছাই করে। এখানেও নির্মোহ থাকা উচিত এবং কিছু দায় নেওয়া উচিত যদি তা কমিশনের অনুমোদিত বলা হয়। আইপিওতে শেয়ার বিক্রি করার কোনো পর্যায়ে যদি দেখা যায়, প্রসপেক্টাসের তথ্য ভুল বা মিথ্যা এবং ওই বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ারবাজারের প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হবে। এ দায় শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর পড়বে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর থেকে মানুষের আস্থা কমে যেতে দেওয়া কখনোই উচিত নয়।

সমকাল : প্রসপেক্টাসে মিথ্যা তথ্যসংবলিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রমাণের পরেও কিছু কোম্পানির আইপিও পাস হয় এবং স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়ে যায়…

এটিএম তারিকুজ্জামান : অনিয়ম প্রমাণের পরও যদি আইপিও পাস হয়, তার ব্যাখ্যা কেবল বিএসইসি দিতে পারবে। স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে পৃথক বিধান আছে। আইপিও অনুমোদন ও সাবস্ক্রিপশন হওয়ার পরও বিধান পরিপালন না হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত না করার ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জ রাখে।

সমকাল : অভিযোগ আছে, শেয়ারদর প্রভাবিত করতে প্রান্তিক মুনাফা বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেখানো হয়। এ বিষয়ে কি নিরীক্ষা প্রতিবেদনে কিছু পর্যবেক্ষণ থাকে? 

এটিএম তারিকুজ্জামান : এ ধরনের অভিযোগ প্রায়ই পাওয়া যায় এবং এর সত্যতা আছে। এর দায় কোম্পানির ব্যবস্থাপনা বিভাগের। নিরীক্ষকরা যখন পুরো বছরের নিরীক্ষা করেন, তখন তাদের এ বিষয়গুলো দেখা উচিত। যদি দেখা যায়, প্রান্তিক প্রতিবেদনের সবগুলোতে প্রকৃত আর্থিক অবস্থার প্রতিফলন হয়নি, তাহলে সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেওয়া উচিত। 

সমকাল : কোনো কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতি হচ্ছে কিনা, তা কি পরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা স্টক এক্সচেঞ্জের আছে? 

এটিএম তারিকুজ্জামান : আছে। তবে অনিয়ম ধরা পড়লেও বিএসইসির কাছে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে চিঠি দেওয়া ছাড়া নিজে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে না। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় কিনা বা নিলেও কতটা কত সময়ে নেয়, সে পরিসংখ্যান এখন জানা নেই। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জের থাকা উচিত। যথাসময়ে যথাব্যবস্থা না নেওয়া হলে অনিয়ম কমানো কঠিন।

Source: Daily samakal

You may also like