Home Industry News শ্রমিক অসন্তোষের ১০ দিন: আসতে পারে ‘No Work, Nop Pay’র ঘোষণা

শ্রমিক অসন্তোষের ১০ দিন: আসতে পারে ‘No Work, Nop Pay’র ঘোষণা

by fstcap
বিজিএমইএ’র একটি সূত্র জানায়, ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের আশ্বাস সত্ত্বেও শনিবার সকাল থেকে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অন্তত ৫০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় টানা দশম দিনেও (আজ শনিবার) শ্রমিক অস্থিরতার কারণে ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে অন্তত ৫০টি কারখানা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেকোন মুহূর্তে ‘নো ওয়ার্ক নো পে’র ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছে শিল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বড় কয়েকটি শিল্প গ্রুপের শ্রমিকরা প্রতিদিন সকালে এসে কার্ড পাঞ্চ করার পর কাজ না করে বেরিয়ে পড়ে। 

বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো শাখা বা বিভাগে বেআইনি ধর্মঘটের কারণে মালিক উক্ত শাখা বা প্রতিষ্ঠান আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকরা কোনো মজুরি পাবেন না।

 

বিজিএমইএ’র একটি সূত্র জানায়, ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের আশ্বাস সত্ত্বেও শনিবার সকাল থেকে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অন্তত ৫০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে শারমীন গ্রুপ, হা-মীম গ্রুপ, অনন্ত গ্রুপের কারখানাগুলোও রয়েছে।

কিছু কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় এলেও– কাজ না করে কারখানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ এসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।

এছাড়াও শ্রমিক অসন্তোষের জেরে সকাল থেকেই বন্ধ ছিল নিউএইজ গ্রুপের ৪টি কারখানাসহ অন্তত ১৪টি কারখানা।

সূত্র জানায়, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদ সকালে কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও শ্রমিকরা লাঞ্চের আগে কারখানা থেকে বেরিয়ে যায়।

এদিকে শিল্পাঞ্চলের সমস্যা সমাধানে এই মুহুর্তে মালিক ও শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করতে আশুলিয়ায় অবস্থান করছেন বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট খন্দকার রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেলসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এর আগে দুপুরে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করার তথ্য আছে। এই সংখ্যা কমবেশি হতে পারে। কাঠগড়া জোনে একটি কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে বসে আছে, আমরা সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি।

বিজিএমইএ সূত্র আরও জানায়, দিনের শুরুতে জিরাবো টু বিশমাইল সড়কে অবস্থিত পোশাক কারখানাগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও  – বেলা বাড়ার সাথে সাথে এই অঞ্চলের অন্তত দুটি কারখানায় ঝামেলা শুরু হয়। 

এর মধ্যে কন্টিনেন্টাল এর শ্রমিকরা বের হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি লুসাকার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে কাজ বন্ধ করে রেখেছে বলে জানা গেছে।

এর আগে গতকাল শুক্রবার শিল্প মালিক, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের নেতাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে দুই দফা বৈঠকের পর বিজিএমইএ নেতারা আজ থেকে সকল পোশাক কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেন। 

কিন্তু সকাল থেকে শ্রমিকদের বিক্ষোভ এবং কাজ না করে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় মালিকপক্ষ এসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।

সকালে শিল্প পুলিশের একাধিক সূত্র টিবিএসকে জানায়, বিজিএমইএ’র ঘোষণা অনুযায়ী সকাল থেকে আশুলিয়ার অধিকাংশ পোশাক কারখানা খোলা রাখা হলেও, বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর জোনে অবস্থিত একাধিক কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে কাজ না করে কারখানা থেকে বেরিয়ে যায়।

তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় পরিস্থিতি আজ অনেকটাই ভালো ছিল জানিয়ে শিল্প পুলিশ জানায়, শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো কারখানায় হামলা-ভাঙচুরের খবর আজ পাওয়া যায়নি।

শ্রমিক নেতারা যা বলছেন

এদিকে তৃণমূলের শ্রমিক নেতারা মনে করছেন, বিজিএমইএসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে অংশীজনদের সাথে দফায় দফায় যে আলোচনা চলছে, এতে তৃণমূলের শ্রমিক নেতাদের অংশগ্রহণ কম। যেটি সমস্যা সমাধান না হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। চলমান শ্রমিক অসন্তোষে শ্রমিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণ কম বলেও দাবি করেন তারা।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু টিবিএসকে বলেন, বিজিএমইএ বা নীতিনির্ধারণী পর্যায় যেই আলোচনা করা হচ্ছে তাতে মাঠ পর্যায়ের কিংবা তৃণমুলের শ্রমিক নেতাদের অংশগ্রহণ খুবই কম। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য তাদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি, কারণ আঞ্চলিক নেতারা সরাসরি শ্রমিকদের সঠিক বার্তা পৌছে দিতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তবে এই শ্রমিক নেতা এটিও স্বীকার করেন যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর চলমান শ্রমিক আন্দোলনে শ্রমিক নেতাদের ভূমিকা খুবই কম, অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকরা এটিও বলছেন যে তাদের কোনো ট্রেড ইউনিয়ন লিডারের প্রয়োজন নেই। 

তা সত্ত্বেও এই শ্রমিক নেতা সমস্যা সমাধানে তৃণমূলের শ্রমিক নেতাদের সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ”র একজন পরিচালক টিবিএসকে বলেন, ‘এই অঞ্চলে মাত্র ৪/৫টি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের মত ইস্যু থাকতে পারে। কিন্তু তা অন্তত দেড়শ’ কারখানায় ছড়িয়ে গেছে, যার কারণে ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই শিল্প খাত।’

এসময় এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এই শিল্প খাতটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশে অর্ডার চলে যেতে পারে এবং ক্রেতারা বাংলাদেশের কারখানাগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

এবিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

জড়িত শ্রমিক নেতা ও বহিরাগতদের চিহ্নিত করা হয়েছে

তৈরি পোশাক খাত সংশিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে অন্তত ১২০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা গত ১০ দিনের এই অসন্তোষের কলকাঠি নাড়ছেন। 

এদের মধ্যে ৬০ থেকে ৬৫ জন রয়েছে শ্রমিক, শ্রমিক নেতা ও বহিরাগত এবং বাকিরা বিএনপি, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীর নাম।

একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সাভার-আশুলিয়া অঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে তারা শ্রমিক, বহিরাগতসহ বেশ কিছু ব্যক্তির জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছেন, যারা মূলত উষ্কানিদাতা হিসাবে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি বাকিদেরও শনাক্ত করার কাজ চলছে বলে জানায় সূত্রটি।

এছাড়াও সূত্রটি জানায়, ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে একটি ভিডিও এসেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানার সামনে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ হৃদয় শ্রমিকদের প্রতি উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এই ছাত্রলীগ নেতার সন্ধান করছেও বলে জানায় সূত্রটি।

এছাড়াও এই অঞ্চলের শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সাংসদ সদস্য মো. সাইফুল ইসলামের ৩য় সারির অনুসারীদের তথ্য যাচ্ছে বলে জানা গেছে, যারা ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে।

অন্যদিকে গাজীপুর, শ্রীপুর ও ময়মনসিংহের ভালুকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও নতুন করে ঝুট ব্যবসা পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এমন অন্তত ৬০/৭০ জনের নাম পাওয়া গেছে, যাদের অধিকাংশই স্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী। 

এর মধ্যে ঝুট ব্যবসা পেতে একটি প্যাডে ময়মনসিংহের ভালুকা পৌরসভা এলাকায় ‘ভালুকা এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্যাডে একটি কারখানা কর্তৃপক্ষকে ঝুট ব্যবসা সেই প্রতিষ্ঠানকে দিতে লিখিতভাবে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে ১৩ জন স্বাক্ষর করার পাশাপাশি সিলসহ সুপারিশ করে স্বাক্ষর রয়েছে ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফখর উদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চুর।

এ বিষয়ে জানতে ওই প্যাডে থাকা দুটি নাম্বারে কল দিলে একজন নিজেকে জহির বলে পরিচয় দেন। তাকে ঝুটের বিষয়ে প্রশ্ন করতেই মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন করে দেন তিনি। অপরজন ঝুটের প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলতেই কিছু জানেন না দাবি করে লাইন কেটে দেন।

নাম্বার দুটিতে পরবর্তীতে একাধিকবার কল করা হলেও আর রিসিভ করা হয়নি।

garments industry

You may also like