Home Featured শেয়ারবাজারে গুরু পাপে লঘুদণ্ড!

শেয়ারবাজারে গুরু পাপে লঘুদণ্ড!

by fstcap

জেনেক্স ইনফোসিসে কারসাজি
শেয়ারবাজারে গুরু পাপে লঘুদণ্ড!
মুনাফা ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা, বিপরীতে জরিমানা ২০ লাখ

ক্রমেই অপরাধীদের অভয়রাণ্য হয়ে উঠছে শেয়ারবাজার। কারসাজির নানা উপায়ে বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৪ বছরে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) ১৮৪টি তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কিন্তু শাস্তি হচ্ছে নামমাত্র। দু-একটি ঘটনায় শাস্তি দেওয়ার দাবি করা হলেও অপরাধীরা যত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, শাস্তি হচ্ছে তার খুবই সামান্য অংশ। সম্প্রতি আইটি খাতের কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস নামে একটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে আবারও এ ধরনের ঘটনা সামনে এসেছে। কোম্পানিটির শেয়ারে কারসাজির মাধ্যমে বাজারে চিহ্নিত চক্র আবুল খায়ের হিরু চক্র রিয়ালাইজড (শেয়ার বিক্রি করেছে) এবং আনরিয়ালাইজড (শেয়ার বিক্রি করা হয়নি) মিলে ২ কোটি ৮২ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। এরমধ্যে রিয়ালাইজড মুনাফা ৯২ লাখ টাকা। কিন্তু এ অপরাধে তাকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি। এর মানে হলো ২০ লাখ টাকা দিলেই তার ৭২ লাখ টাকা বৈধ হয়ে যাবে। অর্থাৎ জরিমানা রিয়ালাইজড মুনাফার এক-পঞ্চমাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক নয়।

তবে বিএসইসি বলছে, তারা যৌক্তিকভাবেই জরিমানা করে। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম যুগান্তরকে বলেন, কোনো কোম্পানির শেয়ারের তদন্তের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে রিপোর্ট পাঠানো হয়। এরপর কমিশন অভিযুক্তসহ সংশ্লিষ্টদের শুনানিতে ডাকে। কিন্তু শুনানির সময় দেখা যায় আনরিয়ালাইজড মুনাফা কমে যায়। কখনো আবার লোকসানে চলে যায়। ফলে কমিশন সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে একটি যৌক্তিক জরিমানা করে। তিনি বলেন, এ ধরনের জরিমানা বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং লেনদেনে স্বচ্ছতা আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

শেয়ারবাজারে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড। ২০১৯ সালে কোম্পানিটি বাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তালিকাভুক্তির পরপরই কোম্পানির শেয়ারে কারসাজির বিষয়টি সামনে চলে আসে। কয়েক বছরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে উঠানামা করেছে। ডিএসইর তদন্তে উঠে এসেছে ২০২১ সালের ১৬ থেকে ১ জুন পর্যন্ত মাত্র ১৫ দিনে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৬৯ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৬৩ টাকা থেকে ৯২ টাকায় লেনদেন হয়েছে। অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ানোর নেতৃত্ব দিয়েছেন সরকারি সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার শেয়ারবাজারে ব্যাপক সমালোচিত আবুল খায়ের হিরু ও তার পরিবারসহ পুরো একটি চক্র। এর আগে ১২টি কোম্পানির শেয়ারে কারসাজিতে এই চক্রের নাম এসেছে। এসব বিষয় একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুগান্তর।

ডিএসইর অনুসন্ধানে জেনেক্স শেয়ার কারসাজি নিয়ে বেশকিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে অস্বাভাবিক শেয়ার লেনদেনকে আইন লঙ্ঘন এবং অপরাধ হিসাবে দেখানো হয়েছে। অপরাধের তালিকায় নয়টি বিও অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে-আবুল খায়ের হিরুর চারটি বিও অ্যাকাউন্ট, তার প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কোঅপারেটিভসের দুটি অ্যাকাউন্ট, হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের একটি, বাবা আবুল কালাম মাতবর একটি এবং হিরুর বোন কনিকা আফরোজের একটি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি ব্রোকারেজ হাউজে এ নয়টি অ্যাকাউন্ট ছিল। হাউজগুলো হলো-ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ, এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজ এবং রেমনস ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজ। এরমধ্যে একটি হাউজ থেকে শেয়ার ক্রয়ের আদেশ দিয়ে অন্য হাউজ থেকে বিক্রি করেছে। এভাবেই কৃত্রিমভাবে লেনদেন করে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে। এরপর সাধারণ বিনিয়োগকারী এখানে যুক্ত হলে শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে গেছে। এ প্রক্রিয়ায় চক্রটি ৩৫ লাখ ৬০ হাজার ১৮৫টি শেয়ার কিনেছে। আলোচ্য ১৫ দিনে বিক্রি করেছে ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৫০টি শেয়ার। এতে গ্রুপটির রিয়ালাইজড মুনাফা হয় ৯২ লাখ ৩০ হাজার ৫১৫ টাকা। এ কাজের মাধ্যমে চক্রটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ সালের সেকশন ১৭ই লঙ্ঘন করেছে। এরফলে ওই অধ্যাদেশের ২২ ধারায় তাদের ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে কমিশন। অর্থাৎ গুরু পাপে লঘু দণ্ড।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বাজারের মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট। এ সংকট কাটাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। এক্ষেত্রে কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। না হলে তা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক হবে না।

আলোচ্য সময়ে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ারের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিলেন সুমন খান, আবুল খায়ের হিরুর নিজ নামে তিনটি অ্যাকাউন্ট, হিরুর প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কোঅপারেটিভ, এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, নাসিমা আক্তার লতা, মাকসুদা বেগম, হাসান মো. সিরাজ, জহরা রসুল, উম্মে বিলকিস, শান্তা ফাস্ট ইনকাম ইউনিট ফান্ড, নাজমুল হক মিলন এবং সৈয়দ শোয়েব আহমেদ। তবে আলোচ্য সময়ে যারা বেশি শেয়ার বিক্রি করেছেন এরমধ্যে রয়েছে-জহরা রসুল, ডিআইটি কো অপারেটিভস, ইউসিবি স্টক ব্রোকার, এটিসিপি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, সুমন খান, মাকসুদা বেগম, আমার রসুল, জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, আইসিবি এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ইউনিট ফান্ড, বাংলাদেশ ফান্ড, আইসিবি এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, নাসিমা আক্তার লতা, আইসিবি ইউনিট ফান্ড, নাজমুল হক মিলন এবং দীপক রক্ষিত।

১২০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি মিলিয়ে ১৯২ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। কোম্পানির ইস্যু ম্যানেজার ছিল ইম্পেরিয়াল ক্যাপিটাল এবং অডিটর মাসিহ মুহিত হক অ্যান্ড কোম্পানি। কোম্পানির পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসাবে রয়েছেন মোহাম্মদ আদনান ইমাম, ভাইস চেয়ারম্যান প্রিন্স মজুমদার, পরিচালকদের মধ্যে-চৌধুরী ফজলে ইমাম, হাসান শহিদ সরওয়ার, নিলুফার ইমাম এবং রোকেয়া ইসলাম। স্বতন্ত্র পরিচালক হিসাবে রয়েছেন-মো. নাজমুল হাসান ও টিআইএম নুরুল কবির।

source: https://www.jugantor.com

 

sharebazar rules strict for immoral members

You may also like