গত অর্থবছর শুরু থেকেই মন্দার মুখে পড়ে দেশের বিদ্যুৎ খাত। জ্বালানি সংকটে ঘোষণা দিয়ে শুরু করা হয় লোডশেডিং। প্রয়োজনীয় তেল-গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় বিভিন্ন কোম্পানির বিদ্যুৎ উৎপাদন লম্বা সময় বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির ফলে তেল আমদানি ও ঋণ পরিশোধ খরচও বেড়ে যায় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর। ফলে মুনাফা অর্জনে বড় ধরনের ধাক্কা খায় কোম্পানিগুলো। এতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ কোম্পানির মুনাফা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়।
২০২২-২৩ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুনাফা কমেছে খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (কেপিসিএল)। আগের অর্থবছরের তুলনায় কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে পাঁচ হাজার ২১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুনাফা কমেছে এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশনের। এ কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৭৯৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। এছাড়া সামিট পাওয়ারের ৭৪ দশমিক ৫১ শতাংশ, বারাকা পাওয়ারের ৬৭ দশমিক ১১ শতাংশ, শাহজিবাজার পাওয়ারের ৬৪ দশমিক ৩০ শতাংশ, ডরিন পাওয়ারের ৬১ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশনের ১৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ মুনাফা কমেছে। তবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে কেবল জিবিবি পাওয়ারের মুনাফা সামান্য বেড়েছে, যার পরিমাণ ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
কোম্পানিগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, কেপিসিএল সর্বশেষ অর্থবছরে ৫০৫ কেটি ৯২ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে লোকসান গুনেছে ৬৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, কোম্পানিটি আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) ২৪৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যবসার বিপরীতে মুনাফা করেছিল এক কোটি ৩০ লাখ টাকা। এতে এক বছরের ব্যবাধানে কেপিসিএলের মুনাফা কমেছে ৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বা পাঁচ হাজার ২১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। যদিও আগের বছরগুলোতে মুনাফায় ছিল কোম্পানিটি। সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান গুনেছে এক টাকা ৬৭ পয়সা। লোকসান গুনলেও এ সময় বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে কেপিসিএল।
এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮০০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে লোকসান দিয়েছে ৬৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। অথচ আগের অর্থবছর (২০২১-২২) ২০৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে লোকসান করেছিল সাত কোটি ৭১ লাখ টাকা। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির লোকসান বেড়েছে ৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা বা ৭৯৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। সর্বশেষ হিসাব বছরে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে দুই টাকা ৩৬ পয়সা, যা আগের অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ৫১ পয়সা। লোকসান গুনলেও এই বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে।
বিদ্যুৎ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি মুনাফা কমেছে সামিট পাওয়ারের। ২০২২-২৩ অর্থবছর কোম্পানিটি পাঁচ হাজার ৫১৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ১৭১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। তবে আগের অর্থবছরে পাঁচ হাজার ৩৪১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে মুনাফা করেছিল ৬৭৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৫০১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বা ৭৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। সর্বশেষ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়ায় দুই টাকা সাত পয়সা, যা আগের বছরে ছিল তিন টাকা ৮৭ পয়সা। এই বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে। যদিও আগে সামিট পাওয়ার আরও অধিক হারে লভ্যাংশ দিত।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বারাকা পাওয়ার ২৩৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে মুনাফা করেছে ১৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। তবে এর আগের বছর ১৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকার আয়ের বিপরীতে কোম্পানিটির মুনাফা ছিল ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৩১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বা ৬৭ দশমিক ১১ শতাংশ। সর্বশেষ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৫৬ পয়সা, আগের অর্থবছর যা ছিল দুই টাকা ১৩ পয়সা। ২০২২-২৩ হিসাববছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে।
এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (এসপিসিএল) ৯৩৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ২৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। এর আগের বছরে ৭২৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে মুনাফা ছিল ৭৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এ হিসাবে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৫১ কোটি ১৬ লাখ টাকা বা ৬৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে এক টাকা ৫২ পয়সা, যা আগের বছরে ছিল চার টাকা ১৪ পয়সা। এ বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১১ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করেছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ডরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেমস এক হাজার ৮৪২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ৬৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা মুনাফা করে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এক হাজার ৫০২ কোটি ৪১ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ১৬৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল ডরিন পাওয়ার। এ হিসাবে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ১০২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বা ৬১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সর্বশেষ অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে তিন টাকা ৫৬ পয়সা, আগের অর্থবছর যা ছিল ১০ টাকা ৩১ পয়সা। এ বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১১ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে।
ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আয় ছিল ২০২২-২৩ অর্থবছরে চার হাজার ১৩০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এ সময় কোম্পানিটি ৮২৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। তবে আগের অর্থবছরে চার হাজার ৯৪৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা আয় ছিল ইউনাইটেড পাওয়ারের। ওই অর্থবছর মুনাফা ছিল এক হাজার ১৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এ হিসাবে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ১৯১ কোটি ২৯ লাখ বা ১৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। সর্বশেষ অর্থবছরে ইউনাইটেডের ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ৮৩ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ১৭ টাকা ২১ পয়সা। এই বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৮০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে।
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিগুলো যখন মুনাফায় বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে তখন জিবিবি পাওয়ারের মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছর কোম্পানিটির আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৮৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর বিপরীতে মুনাফা করেছে ১১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। যদিও আগের অর্থবছর ৬৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ১০ কোটি ৩০ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল জিবিবি। এ হিসাবে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ৮৯ লাখ টাকা বা আট দশমিক ৬৪ শতাংশ। সর্বশেষ হিসাব বছরে জিবিবির ইপিএস হয়েছে এক টাকা ১০ পয়সা, আগের বছর যা ছিল এক টাকা এক পয়সা। মুনাফা সামান্য বাড়লেও এ বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের মাত্র দুই শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করেছে।
Source: sharebiz
Power Sector crisis negative growth