Home Featured ফ্লোর প্রাইস তোলার পর ৮১% দরপতন

ফ্লোর প্রাইস তোলার পর ৮১% দরপতন

by fstcap

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত দুই মাসে প্রায় ৮১ শতাংশ কম্পানি ও ফান্ডের দর কমেছে। শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের চাপে ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ারের সর্বনিম্ন দামসীমা তুলে নেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর পরই শুরু হয় দরপতন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইস থাকায় প্রায় দুই বছর শেয়ার কেনাবেচা করতে পারেননি বিনিয়োগকারীরা।

এ জন্য ফ্লোর প্রাইস তোলার পর দাম কমিয়ে হলেও অনেকে শেয়ার বিক্রি করেন। তাই বাজারে দরপতন হয়েছে। এমন দরপতনের পর বাজার ঘুরে দাঁড়ায় বলেও মন্তব্য তাঁদের।
পুঁজিবাজারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের তালিকাভুক্ত কম্পানি তিতাস গ্যাসের ৯ হাজার শেয়ারে বিনিয়োগ করা মোশারফ হোসেন (ছদ্মনাম) নামের এক বিনিয়োগকারী জানান, মৌল ভিত্তির এ কম্পানি থেকে ভালো মুনাফার আশায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করেন তিনি।

কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর দরপতন ঠেকাতে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ারদরের নিম্নসীমা নির্ধারণ করে দেয় বিএসইসি। এরপর দীর্ঘ অপেক্ষা। ২০ মাস পর গত ১৮ জানুয়ারি ৩৫টি কম্পানি ছাড়া বাকি ৩২০টি কম্পানি ও ফান্ডের ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বিএসইসি। সেই সময় মোশারফ হোসেনের শেয়ারের ফ্লোর প্রাইসও উঠে যায়।
ফ্লোর প্রাইস ওঠার পরের দুই মাসের ব্যবধানে তিতাস গ্যাসের শেয়ারদর কমেছে ৩৫.৬৯ শতাংশ বা ১৪.৬ টাকা। আড়াই বছরের ব্যবধানে মোশারফ হোসেন তাঁর বিনিয়োগের প্রায় ৩৬ শতাংশ হারিয়েছেন।

জানা গেছে, শুধু তিতাস গ্যাসের শেয়ার দর নয়, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পর গত দুই মাসের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ৮০.৪৩ শতাংশ বা ৩৩৩টি কম্পানি, ফান্ড ও বন্ডের দর কমেছে (২৩৭টি সরকারি সিকিউরিটিজ বা ট্রেজারি বন্ড ও নতুন তালিকাভুক্ত পাঁচটি কম্পানি ও বন্ড ছাড়া এ হিসাব করা হয়েছে)।

কালের কণ্ঠ’র বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কম্পানি ও ফান্ডগুলোর ২১ জানুয়ারির প্রারম্ভিক দর ও ২৫ মার্চের সমাপনী দরে পার্থক্য তুলে ধারা হয়েছে। এ সময় তালিকাভুক্ত ৪১৪টি কম্পানি, ফান্ড ও বন্ডের মধ্যে দর কমেছে ৩৩৩টির বা ৮০.৪৩ শতাংশ, দর বেড়েছে ৬২টির বা ১৪.৯৭ শতাংশ এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ১৯টি বা ৪.৫৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের।

এ সময় সদ্য তালিকাভুক্ত এনআরবি ব্যাংক, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, বেস্ট হোল্ডিংস, সিকদার ইনস্যুরেন্স কম্পানি, সাউথইস্ট ব্যাংক ফার্স্ট পারপেচুয়াল বন্ড ও ইউসিবি সেকেন্ড পারপেচুয়াল বন্ডের শেয়ারদরের তথ্য গণনা করা হয়নি।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত দুই মাসে ৪৪ কার্যদিবস লেনদেন হয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। এর মধ্যে ১৭ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বাড়লেও কমেছে ২৭ দিন। এ সময় ডিএসইর প্রধান সূচক ৬ হাজার ৩৩৬.৭৫ পয়েন্ট থেকে কমে ৫ হাজার ৮৩৪.৩৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে ডিএসইতে সূচক কমেছিল ৫০২ পয়েন্ট।

কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর গত দুই মাসে ২০ শতাংশের বেশি দর কমেছে ১৩০টি কম্পানির। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে আর্থিক খাতের তালিকাভুক্ত কম্পানি জিএসপি ফাইন্যান্সের। এ সময় কম্পানিটির শেয়ার ৩০.৩ টাকা থেকে কমে ১৩.৬ টাকায় লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ গত দুই মাসে কম্পানিটির দর কমেছে ১৬.৭ টাকা বা ৫৫.১১ শতাংশ। জিএসপি ফাইন্যান্সের প্রায় সমপরিমাণ দর কমেছে আর্থিক খাতের আরেক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসির। গত দুই মাসে কম্পানিটির দর কমেছে ৫৫.০৩ শতাংশ বা ৩১.৭ টাকা। গত ১৮ জানুয়ারি কম্পানিটির শেয়ার ছিল ৫৭.৬ টাকা। সোমবার (২৫ মার্চ) কম্পানিটির দর ২৫.৯ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর বাজারে স্বাভাবিক উত্থান অব্যাহত ছিল। দ্বাদশ নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া বিএসইসির সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ ফ্লোর প্রাইস থাকায় বাজারে লেনদেনে মন্দা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপে দরপতন শুরু হয়।

তিনি বলেন, সম্প্রতি বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকের পর থেকে তারা বাজারে সাপোর্ট দেওয়া শুরু করেছে। এতে লেনদেন ও সূচক উভয়ই বাড়ছে। অতি দ্রুত সূচকের পাশাপাশি লেনদেন আরো বাড়বে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল-আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছিল। ওই সময় স্মার্ট বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগও করেছিলেন। হঠাৎ ছন্দঃপতন হয়। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তা ও আইটেমনির্ভর বিনিয়োগের কারণে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছিল না।

তিনি বলেন, শেয়ারদরের পতনের নেপথ্যে অনুমাননির্ভর কারণ তৈরি না করে সঠিক কারণ অনুসন্ধান করা উচিত। তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও বাজার নিয়ে নিয়মিত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা উচিত।

এ প্রসঙ্গে জানতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. এ টি এম তারিকুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

source: www.kalerkantho.com

 

floor price price down 81% share

You may also like