বিজনেস ইনসাইটস রিপোর্ট: সরকারি সিকিউরিটিজ, মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট, পাবলিকলি লিস্টেড সিকিউরিটিজ এবং সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি বা ছাড় বাতিল করা বা কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। পাশাপাশি সংস্থাটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির গেইন ট্যাক্স, বন্ড ও জিরো কুপন বন্ডসহ আরও বিভিন্ন মুনাফার ওপর সুদকে করমুক্ত রাখার বিপক্ষে। সংস্থাটি চায়, এসব সুদ বা মুনাফার ওপর করমুক্ত সুবিধা আসছে বাজেট থেকেই বাতিল করতে হবে।
সংস্থাটির ঢাকা সফররত মিশন বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠককালে ‘ইনকাম ট্যাক্স এক্সপেনডিচার’ শীর্ষক তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয় বলে জানিয়েছে বৈঠক সূত্র। যেখানে রাজস্ব খাতে এমন বড় ধরনের সংস্কার আনার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব সংস্কারের কোনটা কোন সময়ের মধ্যে করতে হবে, তা-ও উল্লেখ করে দিয়েছে।
কর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুঁজিবাজার উন্নয়নে বর্তমান সরকার বাড়তি মনোযোগ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে পুঁজিবাজার উন্নয়নে বাড়তি প্রনোধণা থাকতে পারে সরকারের পক্ষ থেকে।
আইএমএফ বাংলাদেশকে দেওয়া ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে বিভিন্ন খাতে নজরদারি ও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির যুক্তিতে নানান শর্ত ও পরামর্শ দিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা ১০ দিন ধরে এনবিআরের ২০ কর্মকর্তাকে শিখন-পড়ন কার্যক্রমে অংশ নেয়। এর সমাপনী হয়েছে গতকাল।
এ ব্যাপারে এনবিআরের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা মুখ খুলতে নারাজ। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ঋণের শর্তের কারণে সংস্থাটি এসব পরামর্শ দিয়েছে। এর সবই খারাপ নয়; আবার সব ভালোও নয়। সবার ওপর সমান কর আরোপ, আইসিটি খাতের করমুক্তি সুবিধা বাতিল করা বা আসছে বাজেট থেকেই কর অবকাশ সুবিধা বাতিলের মতো অনেক স্পর্শকাতর বিষয় রয়েছে, যেগুলো রাতারাতি হয়তো সরকারের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তবে বেশ কিছু পরামর্শ বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশের জন্য খারাপ হবে না।’
দেশের আইসিটি খাতের কর অবকাশ সুবিধা ২০২৪ সাল পর্যন্ত রয়েছে। এখন আইএমএফ বলছে, এটা যেন কোনোভাবেই আর বাড়ানো না হয়। এটাও আসছে বাজেটে ঘোষণা দিতে হবে। একই সঙ্গে উৎপাদনমুখী শিল্প খাতের কর অবকাশ সুবিধাও ২০২৫ সালের পর আর না বাড়াতে বলেছে আইএমএফ। পাশাপাশি সরকারকে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এবং বিভিন্ন ধরনের বন্ডের ওপর দেওয়া কর সুবিধা প্রত্যাহারের পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বর্তমানে আইসিটি খাত কর সুবিধার কারণে বিকশিত হচ্ছে। আইএমএফের এ পরামর্শ মানা হলে এ ক্ষেত্রে কিছুটা ছন্দপতন হতে পারে। শিল্পের ক্ষেত্রেও ঢালাওভাবে কর অবকাশ সুবিধা তুলে দিলে জিনিসপত্রের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, ভোক্তার খরচ বাড়বে।
গ্যাস উত্তোলন খাতে কোম্পানিগুলো ‘ডিপ্লেশন অ্যালাউন্স’ নামে একটি বিশেষ করছাড় সুবিধা পায়। বাস্তবে এ খাতে কোম্পানির কোনো খরচ না হলেও তারা এ খাতে কর সুবিধা নিয়ে থাকে। আইএমএফ বলছে, এ সুবিধা রাখার প্রয়োজন নেই।
আসছে বাজেট থেকেই দেশের বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও শীর্ষ কোম্পানিকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করার কথা বলেছে আইএমএফ। অন্যথায় তাদের দেওয়া সব ধরনের কর রেয়াত বাতিলের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
একই সঙ্গে ২০২৬ ও ২০২৭ সাল থেকে সব করদাতাকে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। অন্যথায় তাদেরও সব কর রেয়াত বাতিল করতে বলেছে। আইএমএফ মনে করে, সব করদাতার কাগজে দেওয়া রিটার্ন কম্পিউটার ডেটাবেইসে ঢোকাতে হবে। এতে করে কর কর্মকর্তারা যেকোনো সময় যেকোনো করদাতার ফাইলে ঢুকে তা যাচাই-বাছাই করতে পারবেন।
আরও একটি বড় ধরনের সংস্কারের কথা বলেছে আইএমএফ। সংস্থাটি কর অবকাশ সুবিধা দেওয়ায় এনবিআরের স্বেচ্ছা ক্ষমতা বাতিল করতে বলেছে। এ ক্ষমতার আওতায় এনবিআরের কর কর্মকর্তারা চাইলে যেকোনো করদাতা ব্যক্তি বা কোম্পানিকে কর অবকাশ সুবিধা দিতে পারে। আইএমএফ মনে করে, এ ধরনের ক্ষমতা শুধু সংসদের থাকতে পারে।
তা ছাড়া চলতি বাজেটে কোন কোন খাত কর অবকাশ সুবিধা পাবে, তার একটি তালিকা ঘোষণা করা আছে। কিন্তু এ তালিকার বাইরেও এনবিআর চাইলে যেকোনো খাতকে কর অবকাশ সুবিধা দিতে পারবে—এমন ক্ষমতার কথা বাজেটে বলা আছে। আইএমএফ বলছে, এই ক্ষমতাও এনবিআরের হাতে থাকার দরকার নেই।
source: businessinsights24.com
pujibazar IMF tax exemption investment