অক্টোবরের মতো নভেম্বরেও বেড়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়। নভেম্বরে তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় এলো তিন দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার।
যা চলতি অর্থবছরে অন্যান্য মাসের চেয়ে বেশি। পাশাপাশি আগের বছরের একই সময়ে চেয়েও বেশি।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি ও আসন্ন বড়দিনের মৌসুম রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে বলে ধারণা এ খাতের উদ্যোক্তাদের।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে বলছে, নভেম্বর মাসে নিট পোশাক রপ্তানি কিছুটা কমেছে। তবে ওভেন বেশি রপ্তানি হয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ওভেন পোশাক রপ্তানি ২০ শতাংশ এবং নিটওয়্যার রপ্তানি ১২ দশমিক আট শতাংশ বেড়েছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে নভেম্বর পাঁচ মাসে মোট ১৬ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। আগের বছরের একই সময়ে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় হয়েছিল ১৪ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া চলতি অর্থবছরের নভেম্বর মাসে আগের বছরের চেয়ে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি রপ্তানি হয়েছে। আগের বছরে নভেম্বর মাসে রপ্তানি হয়েছিল ২ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলারের।
অর্থাৎ নানামুখী চাপের মধ্যেও তৈরি পোশাক থেকে রপ্তানি আয় তিন বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশের মতো উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধারা অব্যাহত রয়েছে।
তৈরি পোশাক শিল্পজুড়ে শ্রমিক অসন্তোষ, আইন শৃঙ্খলার অবনতির মধ্যে বেশি কিছু কারখানা উৎপাদন করতে পারেনি। শিল্প এলাকার কোথাও না কোথায় শ্রমিক অসন্তোষ লেগেই ছিল। বড় বড় বেশ কিছু কারখানা পুরো নভেম্বর মাসজুড়ে উৎপাদন করতে পারেনি। এখনো বন্ধ আছে কিছু কারখানা।
তারপরও গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রপ্তানি আয় বেড়েছে। সেই ধারা নভেম্বরেও বজায় রয়েছে।
আগস্ট থেকে তৈরি পোশাক শিল্পের অসন্তোষ লেগেছিল। নভেম্বর মাসেও বেশ কিছু কারখানা বন্ধ থেকেছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকার সর্বোচ্চ সতর্ক আছে। তারপরও তৈরি পোশাকে শিল্পের সমূহ ক্ষতি হয়ে গেছে।
এ অবস্থায় ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সবচেয়ে বেশি দরকার কারখানাগুলো সচল রাখা, মনে করছেন বিজিএমইএ-এর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কারখানা সচল রাখা এখন এক নম্বর কাজ; নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি ও উপকরণ সামগ্রী নিশ্চিত করা দ্বিতীয় অগ্রাধিকার। জ্বালানি, উপকরণ ও নিরাপত্তা সমানভাবে প্রয়োজন। নিরাপত্তা দিলাম কিন্তু জ্বালানির অভাবে চালু রাখতে পারলাম না, এতে উৎপাদন চালিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা প্রশ্নে শ্রমিক অসন্তোষ বা তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে কেউ সুযোগ না নেয়, সেটাও খুবই জরুরি। যাতে কেউ এমন সুযোগ না পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো হলো আমাদের প্রধান কারণ।
তবে অন্য সক্ষমতাগুলো আমাদের আছে, উল্লেখ করেন এই উদ্যোক্তা।
এরপরও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপ আমেরিকার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বছরের শেষে বড়দিনের কারণে বিক্রি বেড়েছে। যা আমাদের রপ্তানিতে প্রভাব পড়েছে।
রাজনীতি যাই হোক, ব্যবসাকে ব্যবসার মতো করে চলতে দিতে হবে; বাইরে যাই হোক অর্থনীতি যেন সঠিক পথে চলতে পারে, উদ্যোক্তারা এমন আশা করছেন।
তৈরি পোশাক শিল্পের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে উদ্যোক্তারা চিন্তিত।
এ বিষয়ে মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, আমরা একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। আমাদের নারী কর্মীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ এখাতে কর্মরত আছে। যদি কোনো অবস্থার প্রেক্ষিতে তৈরি পোশাক শিল্প অন্য কোথায় চলে যায় তাহলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর যে দেশে চলে যাবে তারা লাভবান হবে। আমাদের ভেতরে যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে আমাদের নিজেরা শ্রমিক, মালিক, সরকার মিলে এই সমস্যার সমাধান করব। যাতে শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাহলে নতুন নতুন বিনিয়োগ হবে, নতুন নতুন প্রোডাক্ট আনতে পারি এবং যে লক্ষ্য ঠিক করেছি সেই জায়গা পৌঁছতে পারি।
Textile RMG