অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কাটিয়ে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে দেশ। স্বাভাবিক হচ্ছে শিল্পকারখানার উৎপাদনও। গত সপ্তাহের অস্থিরতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইস্পাত শিল্প। এক সপ্তাহে অর্ধশত ইস্পাত কারখানার ক্ষতি ছাড়িয়ে গেছে হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষতি পোষাতে গিয়ে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে তারা। কারফিউ পুরোদমে উঠে যায়নি এখনও। এটিকে মেনে নিয়ে নতুন করে বিপণন কৌশল ঠিক করছে তারা। ঠিক রাখছে উৎপাদন কার্যক্রমও।
দেশে মাঝারি ও বড় আকারের ইস্পাত কারখানা আছে অর্ধশত। এর মধ্যে ৬২ শতাংশ কারখানা আছে চট্টগ্রামে। ঢাকাতে উৎপাদন হয় ৩২ শতাংশ ইস্পাত। ৮৫ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে ইস্পাত কারখানাগুলো বার্ষিক উৎপাদন করছে প্রায় ৯০ লাখ টন।
মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড কনসালটিংয়ের প্ল্যাটফর্ম বিগমিন্টের তথ্য অনুসারে, দেশে ছোট-বড় বিভিন্ন ইস্পাত কারখানা থাকলেও বর্তমানে মোট চাহিদার ৫৩ শতাংশ পূরণ করছে চট্টগ্রামের চারটি কারখানা। ইস্পাত উৎপাদনকারী এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো– বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম), আবুল খায়ের স্টিল (একেএস), জিপিএইচ ইস্পাত ও কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম)। এর মধ্যে বিএসআরএম দেশের চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশ, একেএস ১৪ শতাংশ, জিপিএইচ ৮ শতাংশ ও কেএসআরএম ৬ শতাংশ উৎপাদন করছে। বিএসআরএমের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৪ লাখ টন। একেএসের ১৫ লাখ টন। জিপিএইচ ও কেএসআরএম বছরে প্রায় ৮ লাখ টন করে মোট ১৬ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন করতে পারে।
জানতে চাইলে জিপিএইচ ইস্পাতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশে ইস্পাত উৎপাদন করছি আমরা। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েই সচল রেখেছি উৎপাদন। গত সপ্তাহের অস্থিরতায় পুরো স্টিল সেক্টর দৈনিক ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা লস দিয়েছে। পুরো সেক্টরের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন কর্মকৌশল ঠিক করছি আমরা।’
বিএসআরএমের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, ‘ইস্পাতের কাঁচামাল নিয়ে একাধিক জাহাজ আছে বন্দরে। গত সপ্তাহে বন্দর থেকে কাঁচামাল আনতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে রাতে কারফিউ থাকছে। তাই বিকল্প পদ্ধতিতে পণ্য উৎপাদন ও পরিবহন করছি আমরা।’
ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘গত সপ্তাহের অস্থিরতায় অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে আমাদের। এখন কারখানা সচল আছে। তবে কারফিউ রাতের বেলা বলবৎ থাকছে। তাই পরিবহন কৌশলে পরিবর্তন এনে নতুন চ্যালেজ্ঞ মোকাবিলা করছি আমরা।’
প্রতিদিন ৪ হাজার টন রড উৎপাদনের সক্ষমতা থাকা আবুল খায়ের স্টিলের এজিএম (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) ইমরুল কাদের ভূঁইয়া বলেন, ‘বন্দর ও কাস্টমসের সার্ভার এখনও দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারছে না। বন্দরে এখনও আমাদের দুটি জাহাজ কাঁচামাল নিয়ে নোঙর করে আছে। আগের চেয়ে কাজের গতি কিছুটা বাড়লেও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।’
শীতলপুর স্টিলের পরিচালক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কারখানায় দৈনিক ৭০০ টন রড উৎপাদন করার সক্ষমতা আছে। কিন্তু কারফিউ পুরোপুরি উঠে না যাওয়ায় পণ্য পরিবহন করতে গিয়ে কিছুটা চ্যালেঞ্জে পড়েছি।’