সামষ্টিক অর্থনীতির নানামুখী সংকটের প্রভাব পড়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে। একদিকে মূল্যস্ফীতির চাপে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা সংকুচিত হয়েছে, অন্যদিকে টাকার অবমূল্যায়ন ও ডলার সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে এসব সংকটের তেমন কোনো প্রভাব দেখা যায়নি দেশের ওষুধ খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসির ব্যবসায়। আয় ও মুনাফা বাড়ার পাশাপাশি কোম্পানিটির নগদ অর্থ ও সংরক্ষিত আয় আরো স্ফীত হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ মুহূর্তে সবচেয়ে মজবুত আর্থিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা দেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি।
ব্যবসার ভবিষ্যৎ তহবিলের চাহিদা মেটাতে কোম্পানিগুলো সংরক্ষিত আয় (রিটেইন্ড আর্নিংস) রেখে থাকে। এতে যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অর্থ সংস্থান করা সহজ হয়। কোম্পানির তহবিলে নগদ অর্থ থাকলে সেটি জরুরি প্রয়োজনে কাজে লাগানোর পাশাপাশি এ অর্থ ব্যাংকে আমানত হিসেবে রেখে সুদ বাবদ অর্থ আয় করা যায়। গুরুত্বপূর্ণ এ দুই আর্থিক নির্দেশকে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি। সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৩ হিসাব বছর শেষে কোম্পানিটির সংরক্ষিত আয় দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকায়। এ সময়ে কোম্পানিটির কাছে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৯ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য রেকর্ড পরিমাণ ১০৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশও দিয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।
চলতি ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির সংরক্ষিত আয় আরো বেড়ে ১০ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা হয়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটির নগদ অর্থ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকায়। সংরক্ষিত আয়ে সমৃদ্ধ থাকার সুবাদে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস আর্থিকভাবে শক্তিশালী কোম্পানি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ফলে কোনো ধরনের আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কোম্পানিটিকে তহবিল নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। তাছাড়া হাতে বড় অংকের নগদ অর্থ থাকার কারণে কোম্পানিটিকে ঋণের জন্য ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হয় না। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছরই নিজেদের অর্থে ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে। এছাড়া নগদ অর্থ ব্যাংকে আমানত রেখে বড় অংকের সুদ আয়ও আসছে। ২০২২-২৩ হিসাব বছরে কোম্পানিটির আমানতের বিপরীতে সুদ আয় এসেছে ৩২১ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে সুদ আয় হয়েছে ৯৬ কোটি টাকা।
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের উদ্যোক্তাদের বরাবরই ব্যবসার ক্ষেত্রে ঋণনির্ভরতা এড়িয়ে চলতে দেখা গেছে। ২০২২-২৩ হিসাব বছরে কোম্পানিটির ব্যাংক ঋণ ছিল মাত্র ১৯৯ কোটি টাকার। প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য দেনার মধ্যে না থাকাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন এর উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, এতে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়ে। বিভিন্ন ধরনের ব্যয়ের ক্ষেত্রেও কৃচ্ছ্রতা সাধন করে কোম্পানিটি। বাজারে নতুন পণ্য আনা কিংবা নতুন ইউনিট স্থাপন কিংবা ব্যবসা সম্প্রসারণ এ ধরনের খাতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোম্পানিটি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এ ধরনের কৌশলগত নীতি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসকে রিজার্ভ ও নগদ অর্থের দিক দিয়ে আরো শক্তিশালী করে তুলছে।
গত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে ব্যবসায়িকভাবেও ভালো পারফরম্যান্স করেছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। এ সময়ে কোম্পানিটির মোট আয় হয়েছে ৭ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরে আয় ছিল ৬ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। ২০২২-২৩ হিসাব বছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরে নিট মুনাফা হয়েছিল ১ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরে নিট মুনাফা বেড়েছে প্রায় ২ শতাংশ।
এদিকে চলতি ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকেও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের আয় ও মুনাফা বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির মোট আয় হয়েছে ২ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে আয় ছিল ১ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা। সে হিসাবে এ সময়ে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৫৬৪ কোটি টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরে নিট মুনাফা ছিল ৫০০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ।
জানতে চাইলে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের হিসাব ও অর্থ বিভাগের প্রধান মো. কবীর রেজা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ডলার সংকট ছিল না তা বলব না। তবে এর প্রভাব আমাদের ব্যবসায় পড়েনি। এর কারণ হচ্ছে আমাদের গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ব্যবসার মাধ্যমে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে, সেখান থেকেই কোম্পানির ডলারের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়েছে। আমাদের স্বাভাবিক ব্যবসা থেকে যে মুনাফা এসেছে সেখান থেকেই সংরক্ষিত আয় ও নগদ অর্থ বেড়েছে। এ বছর আমাদের লাইফ সায়েন্স ও কেনিয়ার দুটি ইউনিট কার্যক্রম শুরু করেছে। এ দুই ইউনিটে আমাদের বিনিয়োগের বিপরীতে এ সময় অবচয় সংরক্ষণ করতে হয়েছে। যদিও এখান থেকে সে অনুযায়ী আয় হয়নি। তা না হলে আমাদের সংরক্ষিত আয় আরো বেশি হতো।’
Source: https://bonikbarta.net
Square pharma return profit