শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বা তহবিলের উদ্যোক্তা, পরিচালক ও প্লেসমেন্ট শেয়ারধারীদের শেয়ার বা সিকিউরিটিজ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে উৎসে করের হার বাড়ানো হয়েছে। গতকাল সোমবার থেকে শুরু হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ করহার বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। সংসদে পাস হওয়া অর্থ আইনে এ বিধানটি যুক্ত করা হয়েছে।
এত দিন তালিকাভুক্ত কোম্পানি বা তহবিলের উদ্যোক্তা, পরিচালক ও প্লেসমেন্ট শেয়ারধারীদের শেয়ার বা সিকিউরিটিজ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ উৎসে কর কর্তন করা হতো। নতুন অর্থবছরে এ করহার বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। শেয়ার বা সিকিউরিটিজ হস্তান্তর করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যে মুনাফা করবেন, তার ওপর বাড়তি এই উৎসে কর কাটা হবে। নতুন বিধান অনুযায়ী, বাড়তি কর কাটার প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ।
শেয়ার বা সিকিউরিটিজের হস্তান্তর মূল্য কীভাবে নির্ধারিত হবে তা–ও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে অর্থ আইনে। আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় বলা হয়েছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ যেদিন শেয়ার বা সিকিউরিটিজ হস্তান্তরের অনুমোদনের দিনে বাজারে ওই শেয়ার বা সিকিউরিটিজের যে সমাপনী দাম (ক্লোজিং প্রাইস) থাকবে, তার ভিত্তিতেই হস্তান্তর মূল্য নির্ধারিত হবে।
- * ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি আয় বা ক্যাপিটাল গেইনের ওপর দিতে হবে কর।
* পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দানের মাধ্যমে শেয়ার বা সিকিউরিটিজের হাতবদলে উৎসে কর নেই।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির একজন পরিচালক ওই কোম্পানির এক লাখ শেয়ার অন্য কারও কাছে বিক্রি বা হস্তান্তর করবেন। যেদিন বিএসইসি বা স্টক এক্সচেঞ্জ ওই শেয়ার হস্তান্তরের অনুমোদন দিয়েছে, সেদিন কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী বাজারমূল্য ছিল ১০০ টাকা। ওই পরিচালক এ শেয়ার বিক্রি করলেন প্রতিটি ১৫০ টাকায়। এ ক্ষেত্রে সমাপনী দাম বিবেচনায় ওই পরিচালকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৫০ টাকা। এক লাখ শেয়ারে এই মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ লাখ টাকা। নতুন বিধান অনুযায়ী, মুনাফার এই ৫০ লাখ টাকার ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর দিতে হবে। তাতে করের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫ লাখ টাকা। এত দিন ৫ শতাংশ হারে এ করের পরিমাণ ছিল আড়াই লাখ টাকা।
তবে কোনো উদ্যোক্তা, পরিচালক বা প্লেসমেন্ট শেয়ারধারী তাঁর মা–বাবা, সন্তান ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দানের মাধ্যমে শেয়ার বা সিকিউরিটিজ হস্তান্তর করলে, সে ক্ষেত্রে কোনো উৎসে কর কর্তন করা হবে না। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দানের মাধ্যমে শেয়ার বা সিকিউরিটিজ হস্তান্তর উৎসে কর প্রযোজ্য হবে না।
তালিকাভুক্ত কোম্পানি বা তহবিলের উদ্যোক্তা, পরিচালক ও প্লেসমেন্ট শেয়ারধারীদের শেয়ার বা সিকিউরিটিজ হস্তান্তরে উৎসে কর দ্বিগুণ করার পাশাপাশি নতুন অর্থবছরে মূলধনি মুনাফা বা ক্যাপিটাল গেইনের ওপর প্রথমবারের মতো করারোপের বিধান যুক্ত হয়েছে। ফলে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফার ওপর কর বসবে। তবে ৫০ লাখ টাকার কম মূলধনি মুনাফা করমুক্তই থাকছে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, সেকেন্ডারি বাজারে শেয়ার লেনদেন করে কোনো বিনিয়োগকারী এক বছরে ৫৫ লাখ টাকা মুনাফা করেছেন। সে ক্ষেত্রে মুনাফার ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত-সুবিধার আওতায় থাকবে। বাকি পাঁচ লাখ টাকা মুনাফা ওই বিনিয়োগকারীর মোট আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। তাতে ওই বিনিয়োগকারীর নির্দিষ্ট একটি অর্থবছরে তার মোট আয়ের ওপর যে হারে কর প্রযোজ্য হবে, সেই হারে কর দিতে হবে। তবে কোনো বিনিয়োগকারী যদি কোনো শেয়ার একটানা পাঁচ বছর ধরে রেখে ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করেন, সে ক্ষেত্রে ওই মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপ হবে।
এদিকে গত শনিবার সংসদে পাস হওয়া অর্থ আইনে বলা হয়েছে, মূলধনি মুনাফা বা আয় হিসেবে সেই আয়কে বিবেচনা করা হবে, যা তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি বা তহবিলের শেয়ার বা সিকিউরিটিজ হস্তান্তর থেকে অর্জিত। কোনো কোম্পানি বা তহবিলের উদ্যোক্তা, পরিচালক বা প্লেসমেন্ট শেয়ারধারী শেয়ার বা ইউনিট হস্তান্তর থেকে যে আয় করবেন, সেটি মূলধনি আয় হিসেবে বিবেচিত হবে না।
tax company share bd bangladesh