প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও প্রক্রিয়ার ত্রুটি এবং স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক্করণ বা ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের সংশোধন চায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারেজ হাউস মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)। সংগঠনটি শেয়ারবাজারের উন্নয়নে একগুচ্ছ সুপারিশ তুলে ধরেছে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে এক বৈঠকে এসব সুপারিশ তুলে ধরেন ডিবিএ নেতারা। বৈঠকে ডিবিএর নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম। বিএসইসির পক্ষে সংস্থাটির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও তিন কমিশনারসহ নির্বাহী পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন। আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। এতে পুঁজিবাজারের সংস্কারে একগুচ্ছ সুপারিশ তুলে ধরেন ডিবিএ নেতারা।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ডিবিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০ বছর ধরে দেখা গেছে যেকোনো কোম্পানির আইপিওর জন্য কয়েক মিনিটের মধ্যে বিপুল পরিমাণ আবেদন জমা পড়েছে। সাধারণত একটি কোম্পানির আইপিওতে আবেদনের জন্য কয়েক দিন সময় থাকে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রত্যাশার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আবেদন জমা পড়ে। পুরো প্রক্রিয়াটিতে গলদ থাকায় এ ঘটনা ঘটছে। কারসাজি করে শেয়ারের দাম বাড়াতে সংঘবদ্ধভাবে এ রকম ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। কেন এমন ঘটনা ঘটছে, সেটি খতিয়ে দেখে পুরো প্রক্রিয়াটি সংশোধন করা দরকার।
এ ছাড়া ডিবিএ ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ও স্কিম পুনর্মূল্যায়নেরও দাবি জানায়। এর পক্ষে যুক্তি হিসেবে সংগঠনটি বলেছে, ২০১৩ সালে যখন স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হয়েছিল, তখন বলা হয়েছিল ১০ বছর পর এটির পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। কিন্তু সেটি করা হয়নি। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর এক যুগ অতিবাহিত হলেও স্টক এক্সচেঞ্জগুলোও তার খুব বেশি সুফল পায়নি। এ সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জের সক্ষমতা বা দক্ষতাও বাড়েইনি বরং তাদের গতি কমেছে। কেন এমনটি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
বৈঠকে ডিবিএ শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া প্রান্তিক বা মার্জিন ঋণের বেঁধে দেওয়া সুদহারও তুলে বাজারভিত্তিক করার প্রস্তাব দেয়। কারণ হিসেবে সংগঠনটি বলেছে, যখন ১২ শতাংশ সুদ বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তখন ব্যাংকের সুদহার কম ছিল। ব্যাংকের আমানত ও বেঁধে দেওয়া সুদহার ইতিমধ্যে তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে মার্জিন ঋণের ক্ষেত্রেও বাজারভিত্তিক সুদহার কার্যকর করা দরকার। এ ছাড়া ব্রোকারেজ হাউসের সমন্বিত গ্রাহক হিসেবে সুদ বণ্টন, মূল ব্যবসার বাইরে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বাতিল, যেকোনো অনিয়মের বিষয়ে তাৎক্ষণিক ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে সংগঠনটি।
জানতে চাইলে ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শেয়ারবাজারের উন্নয়নে আমরা বেশ কিছু কার্যকর সংস্কারের সুপারিশ করেছি। স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে কার্যকরভাবে প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকায় আনতে হলে তাদের হাতে আইনি ক্ষমতা দিতে বলেছি। আমরা আরও বলেছি, বাজারের ছোটখাটো বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে কুক্ষিগত না রেখে বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা যদি যথাযথ দায়িত্ব পালন না করে, সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।’
ipo