গত ১৪ বছরে শেয়ারবাজারে যেসব অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত করা হবে। আর সেটি করা হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কেউ এসব ঘটনায় জড়িত কি না, তাও তদন্ত করা হবে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে বিএসইসির উদ্যোগে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের কাজ চলছে।
গত ১৯ আগস্ট বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আজ রোববার প্রথম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির কমিশনার এ টি এম তারিকুজ্জামান ও মো. মোহসীন চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে শেয়ারবাজার নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। এরপর সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগামী দিনগুলোয় বিএসইসির মূল ফোকাসে থাকবে স্বচ্ছতা, সুশাসন ও বাজারের উন্নয়ন। শেয়ারবাজারের সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা হবে। অনিয়ম-দুর্নীতি ও সমস্যার এক মহিরুহ অবস্থায় বসবাস এখন আমাদের। রাতারাতি সবকিছু ঠিক করে ফেলা সম্ভব নয়। অনিয়ম-দুর্নীতি ও নানা সমস্যা সমাধানে কিছুটা সময় লাগবে। অতীতে যারা বাজারে বাজারে নানা ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটি বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। একসঙ্গে করতে গেলে দীর্ঘ সময় লাগবে। তাই আমরা পর্যায়ক্রমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজটি করতে চায়। অতীতের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তের পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য আইন-কানুনের দুর্বলতাগুলো দূর করা হবে। বাজারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার কাজটি আমরা সাংগঠনিকভাবে করব। বিএসইসির ঘর থেকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কাজটি শুরু করা হবে।’
প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, বিগত দুই কমিশনের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তে নিরপেক্ষ কমিটি গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। শেয়ারবাজার বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মাধ্যমে গঠিত তদন্ত কমিটির মাধ্যমে কাজটি করা হবে। পাশাপাশি এসব ঘটনার যাতে আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য চলমান তদারকির ব্যবস্থাকে জোরদার করা হবে। বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেয়ারবাজারের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক থাকবে, তারও একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় শেয়ারবাজারের বিদ্যমান ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর ও শেয়ারের দরপতনে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ মূল্যসীমা বা সার্কিট ব্রেকার প্রত্যাহারের বিষয়ে। জবাবে বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ ক্ষেত্রে আইন সবার জন্য সমান হবে। এখানে যাতে কোনো ধরনের বৈষম্য না থাকে, সে বিষয়ে কমিশন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘শেয়ারবাজারে যেসব অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে, সেগুলো তদন্তে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন জরুরি। তবে এ বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত কিছু বলতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। তদন্তের কাজটি করা হবে ধাপে ধাপে। ভবিষ্যতে যাতে কারসাজির ঘটনা না ঘটে, সে জন্য আমরা লেনদেনের তদারকি জোরদার করব। এ ক্ষেত্রে এক দিনের পুলিশি ব্যবস্থার চেয়ে অন গোয়িং পুলিশি ব্যবস্থায় যেতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদ পুনর্গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিভিন্ন পেশা ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদ পুনর্গঠনের চিন্তাভাবনা করছি আমরা। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’