শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কনফিডেন্স সিমেন্ট পিএলসি জরুরি আর্থিক চাহিদা মেটাতে তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কনফিডেন্স সিমেন্ট ঢাকা লিমিটেড-এর ৫০ শতাংশ অংশীদারি প্রায় ১৪১ কোটি টাকায় বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সোমবার (০৪ আগস্ট) কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সম্পূর্ণ অংশীদারি কনফিডেন্স গ্রুপের আরেকটি সহযোগী কোম্পানি কনফিডেন্স পাওয়ার হোল্ডিংস-এর কাছে বিক্রি বা হস্তান্তর করা হবে। কনফিডেন্স পাওয়ার হোল্ডিংস একটি লাভজনক কোম্পানি, যার অধীনে বগুড়া, রংপুর এবং চট্টগ্রামে চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, যেগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৩৯৩.৬ মেগাওয়াট।
বিক্রির কারণ
কনফিডেন্স সিমেন্ট পিএলসি-এর ভাইস-চেয়ারম্যান ইমরান করিম এই পদক্ষেপকে একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “ঢাকা ফ্যাক্টরির বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত অর্থ তালিকাভুক্ত কোম্পানির বর্তমান ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করা হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা আমাদের ক্ষুদ্র শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে ঢাকা প্ল্যান্ট থেকে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদিও ফ্যাক্টরির মালিকানা কনফিডেন্স গ্রুপের মধ্যেই থাকছে, এটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে আলাদা করা হচ্ছে।”
তিনি জানান, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যবসার সার্বিক কার্যকারিতা চাপের মুখে রয়েছে। যদি ঢাকা ফ্যাক্টরি তালিকাভুক্ত কোম্পানির অধীনে থাকত, তাহলে ক্ষুদ্র শেয়ারহোল্ডারদের জন্য পর্যাপ্ত ডিভিডেন্ড দেওয়া কঠিন হতে পারত।
রাইট শেয়ার প্রস্তাব বাতিল
গত বছরের সেপ্টেম্বরে কনফিডেন্স সিমেন্ট রাইট শেয়ার ইস্যু করে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল। এর ৫০ শতাংশ ঢাকা প্ল্যান্টে বিনিয়োগ এবং বাকি ৫০ শতাংশ ঋণ পরিশোধে ব্যবহারের কথা ছিল। কিন্তু ২৯ জুন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এই প্রস্তাব বাতিল করে দেয়। বিএসইসি-এর এই সিদ্ধান্তের এক মাস পরেই কোম্পানিটি ঢাকা প্ল্যান্ট থেকে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, যদিও তারা পুনর্বিবেচনার জন্য কমিশনে আবেদন করেছে।
ঢাকা ইউনিটের বিস্তারিত বিবরণ
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গায় কনফিডেন্স সিমেন্ট ঢাকা লিমিটেড নামে একটি নতুন সিমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হচ্ছে, যার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১৮ লক্ষ টন। প্ল্যান্টটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১৫ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের জন্য প্রাইম ব্যাংক প্রধান ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করে ৫৫৮ কোটি টাকার একটি সিন্ডিকেটেড ক্রেডিট সুবিধা নিশ্চিত করেছে।
আর্থিক অবস্থার খতিয়ান
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) কনফিডেন্স সিমেন্টের রাজস্ব সামান্য বেড়ে ৩১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা হয়েছে। তাদের মোট মুনাফা কিছুটা কমলেও সহযোগী প্রতিষ্ঠান কনফিডেন্স পাওয়ার হোল্ডিংস থেকে ৯৪ কোটি ১০ লাখ টাকা ডিভিডেন্ড পাওয়ায় নিট মুনাফা ২০ শতাংশ বেড়ে ৮৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা হয়েছে।
ছোট মূলধনী কোম্পানির বড় চমক
মার্চ মাস পর্যন্ত কোম্পানিটির স্বল্পমেয়াদি ঋণরয়েছে ৫৬৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ রয়েছে ১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার অনুরোধ
কোম্পানিটি সম্প্রতি বিএসইসি-কে রাইট অফার পুনর্বিবেচনার জন্য একটি চিঠি দিয়েছে। সেখানে তারা জানায়, বিদেশি মুদ্রার অস্থিরতা এবং কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে তাদের মুনাফা চাপের মুখে থাকলেও রাইট শেয়ার ইস্যু করার প্রস্তাবটি ছিল কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী করার একটি কৌশলগত পরিকল্পনা। রাইট শেয়ার থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হলে বছরে ৭ কোটিরও বেশি টাকা সুদের খরচ বাঁচানো যেত, যা ভবিষ্যতে নগদ প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করত।
কোম্পানিটি আরও জানায়, গত ১০ বছরে কোম্পানিটি ধারাবাহিকভাবে ডিভিডেন্ড দিয়ে আসছে, যার গড় ২৩.৭৫ শতাংশ। এটি তাদের সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থের প্রতি কোম্পানির অঙ্গীকারেরই প্রতিফলন।
https://sharenews24.com/article/106896/index.html
Confidcem