আফতাব অটোমোবাইলসের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাংকঋণ। এই ঋণ ও সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে কোম্পানিটি প্রতিবছর লোকসান গুনছে। কোম্পানির আয় বাড়লেও বাড়তি ঋণের কারণে লাভের মুখ দেখছে না আফতাব অটোমোবাইলস। পরিণতিতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চলতি আর্থিক বছরের ৯ মাসে আফতাব অটোমোবাইলস আয় করেছে ৫৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা, যা এর আগের আর্থিক বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বা প্রায় ৮০ শতাংশ বেশি। কিন্তু আয় বাড়লেও কোম্পানিটি লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তবে এবার আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৭ দশমিক ৪০ শতাংশ বা প্রায় চার কোটি টাকা লোকসান কমেছে। ঋণের বোঝা বাইতে গিয়ে লোকসান গুনেছে কোম্পানিটি।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে চলতি আর্থিক বছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে আফতাব অটোমোবাইলস প্রায় ৫৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা আয় করেছে, যা এর আগের আর্থিক বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বা প্রায় ৮০ শতাংশ বেশি। কিন্তু আয় বাড়লেও লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেনি কোম্পানিটি। তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির লোকসান প্রায় ১০ কোটি ৬৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর আগের আর্থিক বছরের একই সময়ে প্রায় ১৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা লোকসান গুণেছিল আফতাব অটোমোবাইলস। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির লোকসান প্রায় চার কোটি তিন লাখ টাকা বা প্রায় ২৭ দশমিক ৪০ শতাংশ কমেছে।
অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মূলত ঋণের কারণে লোকসানের বোঝা বইছে আফতাব অটোমোবাইলস। ২০২৪ সালে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত ঋণ প্রায় এক হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৮৩৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ও স্বল্পমেয়াদি ঋণ ছিল ৫৩০ কোটি ৯ লাখ টাকা। চলতি আর্থিক বছরে গত ৯ মাস আফতাব অটোমোবাইলসের ঋণ আরও বেড়েছে। ঋণের বিপরীতে গত ৯ মাসে প্রায় ২৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যাংক পরিশোধ করেছে কোম্পানিটি, যা এর আগের বছরের চেয়ে প্রায় ছয় কোটি টাকা বেশি। এই বাড়তি ঋণের বোঝা বইতে গিয়েই বিপাকে পড়েছে কোম্পানিটি।
কোম্পানি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, চলতি আর্থিক বছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী লোকসান দাঁড়িয়ে ১০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, যা এর আগের আর্থিক বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় চার কোটি টাকা কম। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান এক টাকা এক পয়সায় দাঁড়িয়েছে। এর আগের আর্থিক বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল এক টাকা ৪০ পয়সা। মুনাফার সঙ্গে চলতি আর্থিক বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদও (এনএভি) কমেছে, তৃতীয় প্রান্তিক শেষে যা প্রায় ৪৭ টাকা ৯২ পয়সায় এসেছে, যা এর আগের আর্থিক বছরের একই সময়ে ছিল প্রায় ৪৯ টাকা ৬৪ পয়সা।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাড়তি ব্যাংকঋণ, উৎপাদন খরচ, গাড়ির বাজারে চলমান প্রতিযোগিতা ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কয়েক বছর ধরে পিছিয়ে আফতাব অটোমোবাইলস, যার প্রতিফলন আর্থিক প্রতিবেদনে দৃশ্যমান। কোম্পানির লোকসানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। তবে এসব বিষয়ে কোম্পানিটির কাছ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কোম্পানি সচিব রাহাত মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
এদিকে ১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে লেনদেন হচ্ছে। কোম্পানিটির ৩০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ১০৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। রিজার্ভের পরিমাণ ২২৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। কোম্পানিটির ১০ কোটি ৫৫ লাখ ৪৪ হাজার শেয়ার রয়েছে। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে রয়েছে ২৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩২ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ শেয়ার।
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে ইস্ট পাকিস্তান অটোমোবাইলস লিমিটেড হিসেবে টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার (জিপ) অ্যাসেমব্লিং করত। ১৯৮১ সালে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। ১৯৮২ সালে অ্যাসেমব্লিংয়ের পাশাপাশি টয়োটা ও হিনো যানবাহনের যন্ত্রাংশও প্রস্তুত করতে শুরু করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো, হিনো বাস, হিনো মিনি বাস ও ট্রাক প্রভৃতি অ্যাসেম্বল করছে। ফৌজদারহাটের প্লান্টে বছরে প্রায় দুই হাজার ৪০০ ইউনিট ভেহিকলস প্রস্তুত করছে। ভারী যানবাহনের বডি তৈরি করছে।
Aftabauto https://sharebiz.net/ঋণের-বোঝায়-নাকাল-আফতাব-অ/