রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি চলছে। এতে সরকারের ব্যাংকঋণের প্রয়োজনীয়তা কমে এসেছে। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে সরকারের নিট ব্যাংকঋণের স্থিতি প্রায় এক হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নেওয়া ঋণের স্থিতিও কমেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঋণের চাহিদা কমার মূল কারণ- উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, যার ফলে অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন কমেছে। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে বেশি ঋণ পাওয়া যাচ্ছে এবং বৈদেশিক উৎস থেকেও ঋণ সহায়তা আসছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে জুলাই-জানুয়ারি মেয়াদে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করেছে মাত্র ৫৯ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ। গত এক যুগে ২০১২-১৩ থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত প্রথম সাত মাসে কখনও এডিপি বাস্তবায়নের হার ২৬ শতাংশের কম ছিল না।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে এক হাজার ৬৭৬ কোটি টাকার ঋণ পেয়েছে সরকার, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে এই খাত ঋণাত্মক ছিল ৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ প্রদান বন্ধ রেখেছে। ফলে সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ঋণ নিলেও, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে সেই লক্ষ্যও সংশোধন করে কমিয়ে আনা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা ২৭ শতাংশ কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণের সুযোগ বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা, যা ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বেড়ে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। তবে জানুয়ারি মাসে ঋণের স্থিতি ১২৬ কোটি টাকা কমেছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি সরকার। বরং গত সাত মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ৫৫ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এই পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণকে টাকা ছাপানো হিসেবে গণ্য করা হয়, তাই আলোচ্য সাত মাসে এই ঋণ পরিশোধের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি শেষে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬০ কোটি টাকা। গত বছরের জুনে এই পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। ফলে সাত মাসে নিট ব্যাংকঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ১৪ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে নিট ব্যাংকঋণের পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৭২ কোটি টাকা কমেছে।
গত অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারের ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে বাড়িয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত সরকার নিট ঋণ নেয় ৯৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। https://www.dainikamadershomoy.com/details/0194a3c5eab78
bank system bangladesh