August 21, 2025 10:18 am
Home Banking শেয়ারপ্রতি লোকসান ১৯ টাকা কী আছে এবি ব্যাংকের বিনিয়োগকারীদের ভাগ্যে?

শেয়ারপ্রতি লোকসান ১৯ টাকা কী আছে এবি ব্যাংকের বিনিয়োগকারীদের ভাগ্যে?

by fstcap

* অর্ধবার্ষিকে লোকসান ১ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা
* নিট সুদজনিত লোকসান ১৫১৮ কোটি টাকা
* মোট দায় ৪৩ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা
* সম্ভাব্য দায় ৫৩১৪ কোটি টাকারও বেশি

ভয়াবহ সংকটে পড়েছে দেশের বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক এবি ব্যাংক। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকটি ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে রেকর্ড পরিমাণ লোকসান করেছে। একদিকে যেমন কমেছে বিনিয়োগ থেকে নিট সুদ আয়, বিপরীতে বেড়েছে সুদজনিত ব্যয়। সেইসাথে বেড়েছে মোট দায় ও সম্ভাব্য দায়ের পরিমাণ। ব্যাংকটির জানুয়ারি থেকে জুন সমাপ্ত অর্ধবার্ষিকে কর পরবর্তী লোকসান দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। এতে একদিকে লোকসান করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থানে জায়গা করে নিয়েছে, পাশাপাশি আর্থিক ঝুঁকির মুখেও পড়েছে প্রথম প্রজন্মের এই ব্যাংকটি।

বিপুল পরিমাণ লোকসান

সমাপ্ত অর্ধবার্ষিকে বিপুল পরিমাণ লোকসান করেছে এবি ব্যাংক। আলোচ্য সময়ে কর পরবর্তী নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৫৮ কোটি ১ লাখ টাকা। এতে শেয়ার প্রতি লোকসান দাঁড়ায় ১৯ টাকা ৬৩ পয়সা। গত বছরে একই সময়ে যেখানে মুনাফা হয়েছিল ১৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং শেয়ার প্রতি মুনাফা ছিল ১৬ পয়সা।

সমাপ্ত ২০২৪ হিসাব বছরে ব্যাংকটির ১ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। আলোচ্য হিসাব বছরে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ২১ টাকা ২৮ পয়সা।

আর চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকেও ব্যাংকটির ১ হাজার ৫০২ কোটি টাকা কর পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা কর পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছিল। দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৬ টাকা ৭৮ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছিল ৪ পয়সা। গত ৩০ জুন শেষে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নিট দায় দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৩৩ পয়সায়।

সুদ আয়ে ধস, ব্যয়ে উল্লম্ফন

ব্যাংকটির একদিকে বিনিয়োগ থেকে সুদ আয় কমে গেছে। অপরদিকে জমা ও ঋণের বিপরীতে সুদজনিত ব্যয় বেড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত অর্ধবার্ষিকের সমন্বিত হিসাব অনুযায়ী এবি ব্যাংক ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত সুদ কমে দাঁড়িয়েছে ১৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকায়। গত বছরে এই আয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সুদ আয় কমেছে প্রায় ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। অপরদিকে, জমা ও ঋণের বিপরীতে সুদজনিত ব্যয় বেড়ে ১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকার বেশি হয়েছে, যা প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা বেশি। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে সুদ জনিত আয়ের চেয়ে সুদ জনিত ব্যয় বেশি হয়েছে। বাড়তি এই ব্যয়ের পরিমাণ বা নিট সুদজনিত লোকসান ১ হাজার ৫১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

বেড়েছে মোট দায়, কমেছে প্রভিশন সংরক্ষণ

গত ৬ মাসে এবি ব্যাংকের মোট দায় বেড়েছে। চলতি অর্ধবার্ষিকে মোট দায় হয়েছে ৪৩ হাজার ৭৬২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। গত বছরে ৩১ ডিসেম্বর শেষে এই দায়ের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৫৬২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৬ মাসে মোট দায় বেড়েছে ৩ হাজার ১৯৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

তবে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং এজেন্টদের কাছ থেকে নেওয়া ধারের পরিমাণ কমেছে। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও এজেন্টদের কাছ থেকে ধার নেওয়া অর্থের পরিমাণ ৮৭৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা । গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৯৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটি ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা প্রভিশন সংরক্ষণ করেছে। আগের বছর একই সময়ে ৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা প্রভিশন সংরক্ষণ করেছিল।

উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে সম্ভাব্য দায়

এবি ব্যাংকের সম্ভাব্য দায়ের (কন্টিজেন্ট লায়াবিলিটিস) পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্ধবার্ষিকে সম্ভাব্য ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৭৬৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ সম্ভাব্য দায় ৬ মাসে বেড়েছে ৫৭৭ কোটি ২০ লাখ ৭ হাজার ৮৯৫ টাকা। এটি এমন একটি দায় যা বর্তমানে বিদ্যমান তবে এর বাস্তবায়ন বা এর পরিমাণ ভবিষ্যতে কোনো ঘটনার ওপর নির্ভরশীল। আদালত বা বিচারাধীন মামলার মতো বিষয়গুলো সম্ভাব্য দায়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়।

শেয়ার দরে নেতিবাচক প্রভাব:

ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে শেয়ারদরেও। গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারীতে ব্যাংটির প্রতি শেয়ারের দাম দাঁড়ায় ১৩ টাকা ৪০ পয়সা। যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বৃহস্পতিবারের লেনদেন শেষে এই শেয়ারের দাম কমে দাঁড়ায় ৬ টাকা ৫০ পয়সায়। এটিই গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সংকট সাধারণত তার শেয়ারদরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এবি ব্যাংকের ক্ষেত্রেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ ৩০ জুন শেষে ব্যাংকটির মোট ইকুইটি ঋণাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১০৩ কোটি ১১ লাখ ১ হাজার ৩৮২ টাকা।

যা বলছেন বিশ্লেষকরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন বলেন, তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে বুঝা যায় যে, তাদের পারফর্মেন্স খারাপ হচ্ছে। তবে এর পেছনে পলিসির কারণে কতটুকু আর তাদের অদক্ষতার কারণে কতটুকু খারাপ হয়েছে তা জানতে সার্বিক কর্মকান্ড বিশদভাবে দেখতে হবে। পূর্বে ব্যাংকিং খাতে চরম অনিয়ম হয়েছে। এসবের কোন প্রভাব অথবা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন নতুন পলিসি হচ্ছে সেক্ষেত্রে এসবের কোন প্রভাব থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।

তবে ব্যাংকটির এই অবস্থার কারণ ও সার্বিক বিষয়ে জানতে একাধিকবার ব্যাংকের এমডি সাইয়েদ মিজানুর রহমানকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ দেওয়া হলেও কোন জবাব দেননি। ব্যাংকটির তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে হোয়াটস অ্যাপে প্রশ্ন পাঠাতে বলেন। সেখানে প্রশ্ন পাঠালেও ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোন জবাব পাওয়া যায়নি।

এবি ব্যাংক ১৯৮৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৮৯৫ কোটি ৬৯ লাখ ৪৭ হাজার ৪৯০ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ৮৯ কোটি ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার ৭৪৯টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৩১ দশমিক ২১ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া সরকারের হাতে শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২২ দশমিক ৮৮ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং বাকি ৪৪ দশমিক শূন্য ৮০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দখলে।
https://banijjoprotidin.com/archives/কী-আছে-এবি-ব্যাংকের-বিনিয

ABBANK AB Bank

You may also like