June 22, 2025 5:53 pm
Home Stock Market ঋণ আদায়ে ন্যাশনাল ফিড মিলের সম্পদ নিলামে তুলছে ব্যাংক এশিয়া

ঋণ আদায়ে ন্যাশনাল ফিড মিলের সম্পদ নিলামে তুলছে ব্যাংক এশিয়া

by fstcap

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ন্যাশনাল ফিড মিল এবং ন্যাশনাল হ্যাচারি প্রাইভেট লিমিটেডের বন্ধক রাখা সম্পদ নিলামে তুলছে ব্যাংক এশিয়া। প্রায় ৪৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংক এশিয়ার শান্তিনগর শাখা এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। গাজীপুর অর্থঋণ আদালতের আদেশ অনুযায়ী সংবাদপত্রে নিলাম বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়েছে।

ব্যাংক এশিয়া সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক এশিয়া একত্রিত ঋণ পরিশোধের ভিত্তিতে বন্ধক রাখা সম্পত্তি বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে, যা চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত খোলা থাকবে। নিলাম বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ন্যাশনাল ফিড মিল এবং ন্যাশনাল হ্যাচারির ৩১ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ৪৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বকেয়া ঋণ ছিল। বারবার দাবি ও নোটিশ পাঠানো সত্ত্বেও পরিশোধ না করায় ঋণগুলো খেলাপি হয়ে পড়েছে।

এরপর অর্থঋণ আদালত আইনের অধীনে বন্ধক রাখা সম্পত্তি বিক্রির আইনি অনুমোদন পাওয়ার পর ব্যাংক নিলামের প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বন্ধক রাখা সম্পদের মধ্যে গাজীপুরে অবস্থিত ১৫.৭৭ একর জমি, যার মধ্যে কারখানার ভবনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ন্যাশনাল ফিড মিলের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের অডিটবিহীন প্রতিবেদন অনুসারে, তাদের মোট বকেয়া ঋণ ছিল ৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক এশিয়া থেকে ২৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, মেঘনা ব্যাংক থেকে ১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ১৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল। কোম্পানিটির স্থায়ী সম্পদ ছিল ২৮ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং মোট সম্পদ ছিল ১৭৬ কোটি টাকা।

ন্যাশনাল ফিড মিল ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লোকসান করেছে, যার ফলে শেয়ারহোল্ডাররা কোনো ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। ২০১৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে কোম্পানির এটি ছিল প্রথম বার্ষিক লোকসান।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে তারা ঋণ পরিশোধ এবং ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছিল। ২০২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি ৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা নিট লোকসান করেছে। পোল্ট্রি, মাছ এবং গবাদি পশুর খাদ্য উৎপাদন ও বিক্রয়কারী এই কোম্পানিটি টানা দুই অর্থবছর ধরে ডিভিডেন্ড দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এরফলে এটিকে “জাঙ্ক স্টক” নামে পরিচিত জেড-শ্রেণীতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

ন্যাশনাল ফিড মিল ২০১৫ সালে ১ কোটি ৮ লাখ শেয়ার ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ইস্যু করে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আপিও) এর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ১৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। এই তহবিল মূলত ঋণ পরিশোধ এবং ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য নির্ধারিত ছিল।

আইপিও তহবিলের ব্যবহার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৪০ শতাংশ ঋণ পরিশোধ, ৪৫ শতাংশ কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং ৫ শতাংশ কার্যনির্বাহী মূলধনের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল, বাকিটা আইপিও-সম্পর্কিত কাজে ব্যয় হয়েছিল।

আইসিবি ক্যাপিটাল এবং পিএলএফএস ইনভেস্টমেন্টস আইপিও কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল। এরমধ্যে পিএলএফএস ইনভেস্টমেন্টস পিপলস লিজিং-এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান, যা বর্তমানে আর্থিক অনিয়ম ও কার্যনির্বাহী সংকটে জর্জরিত। তালিকাভুক্তির প্রথম বছরে ন্যাশনাল ফিড মিল ২০১৬ সালে ২২৫ কোটি টাকা রাজস্ব এবং ১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা নিট মুনাফা সহ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। সেই সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে এটি তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল।

তবে এরপর থেকে এর কার্যক্ষমতা ক্রমাগত খারাপ হয়েছে। ২০২৪ সালে এর রাজস্ব প্রায় ৩০ কোটি টাকায় নেমে আসে এবং নিট লোকসান ৬ কোটি ৬২ লাখ টাকায় পৌঁছায়।

২০২৩ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ন্যাশনাল ফিড মিল আখতার হোসেন বাবুল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসে কোম্পানিটি গড়েছিলেন। দেশের অব্যবহৃত ফিড মার্কেটে সম্ভাবনা দেখে বিদেশে অর্জিত তার ব্যক্তিগত সঞ্চয় কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানির রাজস্ব ৫৩ শতাংশ কমে ৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় নেমে আসে, যার ফলে ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা লোকসান হয়। তবে এরপর থেকে তারা কোনো ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি কোম্পানিটি।

NFML

https://sharenews24.com/article/104662/index.html

You may also like