ব্র্যাক ব্যাংকের পর দেশীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবার হাজার কোটি টাকা মুনাফার মাইলফলক ছুঁয়েছে সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটি গত বছর শেষে সমন্বিত মুনাফা করেছে ১ হাজার ১৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির সমন্বিত মুনাফার পরিমাণ ছিল ৬৩৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির মুনাফা ৩৭৬ কোটি টাকা বা ৫৯ শতাংশ বেড়েছে।
সিটি ব্যাংকের আজ মঙ্গলবার পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। একই সভায় গত বছরের জন্য লভ্যাংশেরও ঘোষণা দেওয়া হয়। ব্যাংকটি গত বছরের জন্য ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যার মধ্যে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ ও সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস। আজ পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে ব্যাংকটির মুনাফা ও লভ্যাংশের এই তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছর শেষে সিটি ব্যাংকের একক মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। তবে ব্যাংকটির সহযোগী প্রতিষ্ঠানের লোকসানের কারণে বছর শেষে সমন্বিত মুনাফা কমে ১ হাজার ১৪ কোটি টাকায় নেমেছে। সহযোগী প্রতিষ্ঠানের লোকসানের পরও সিটি ব্যাংকের মুনাফা প্রথমবারের মতো হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ব্যাংক খাতে এখন পর্যন্ত এটিই দেশীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুনাফা। এর আগে গত সোমবার ব্র্যাক ব্যাংক গত বছর শেষে রেকর্ড ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার সমন্বিত মুনাফার ঘোষণা দেয়। ব্যাংক খাতে ব্র্যাক ব্যাংকই প্রথম ব্যাংক হিসেবে হাজার কোটি টাকার মাইলফলক অতিক্রম করেছে। ব্র্যাক ব্যাংকের সেই ঘোষণার পরদিনই দ্বিতীয় ব্যাংক হিসেবে সিটি ব্যাংক মুনাফায় হাজার কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়িয়ে যাওয়ার তথ্য জানায়।
ব্র্যাক ও সিটি ব্যাংক দুটিই বেসরকারি খাতের দেশীয় মালিকানাধীন শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই দুটি ব্যাংকই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। তালিকাভুক্তির শর্ত অনুযায়ী, গত বছর শেষে মুনাফার এই তথ্য প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে লভ্যাংশেরও ঘোষণা দেওয়া হয়।
সমন্বিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সিটি ব্যাংক গত বছর ঋণের সুদ বাবদ আয় করেছে ৪ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির সুদ বাবদ আয় ছিল ৩ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির ঋণের সুদ বাবদ আয় ১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা বা ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। ঋণের সুদ আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আমানতের সুদ বাবদ ব্যয়ও বেড়েছে ব্যাংকটির। সে ক্ষেত্রে ঋণের সুদ বাবদ আয়ের চেয়ে আমানতের সুদ বাবদ ব্যয় বেড়েছে বেশি। গত বছর সিটি ব্যাংক আমানতের সুদ বাবদ খরচ করেছে ৩ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আমানতের সুদ ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বা ৭০ শতাংশ।
আমানতের সুদ ব্যয় বৃদ্ধির পরও ব্যাংকটি রেকর্ড মুনাফা করেছে। কারণ, ব্যাংকটির বিনিয়োগ থেকে আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। গত বছর শেষে সরকারি ট্রেজারি বিল বন্ডসহ অন্যান্য খাতের বিনিয়োগ থেকে সিটি ব্যাংক আয় করেছে ১ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৪৯১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এই খাত থেকে সিটি ব্যাংকের আয় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বা প্রায় ২৫০ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া কমিশন, এক্সচেঞ্জ ও ব্রোকারেজ মাশুল বাবদ আয়ও ১০০ কোটি টাকার বেশি বেড়েছে। গত বছর এই খাত থেকে সিটি ব্যাংক আয় করেছে ৮৬৯ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৭৩৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এই খাত থেকে ব্যাংকটির আয় ১৩৬ কোটি টাকা বেড়েছে। যার ফলে বছর শেষে হাজার কোটি টাকা মুনাফা ছাড়িয়েছে ব্যাংকটির।
সিটি ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত বছর ব্যাংকটির আমানত বেড়েছে ১২ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৩১ শতাংশ বেশি। একইভাবে ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা বা ১২ শতাংশ। গত বছর সিটি ব্যাংক সরকারি বিল-বন্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদি সিকিউরিটিজে ১২ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। ২০২৩ সালে সরকারি বিভিন্ন সিকিউরিটিজে সিটি ব্যাংকের বিনিয়োগ ছিল ৬ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
রেকর্ড মুনাফার বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রেখে আমানত রেখেছে। গত বছর আমাদের আয়-ব্যয়ের অনুপাত ৬০ শতাংশ থেকে কমে ৪২ শতাংশে নেমে এসেছে। ফলে মুনাফায় বড় উল্লম্ফন ঘটেছে। আমরা কর্মীদের বেতন বাবদ ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়েছি, যা কর্মীদের উৎসাহিত করেছে। আমাদের পরিচালনা পর্ষদ সৎ ও মেধাবী। এ ছাড়া আমাদের ব্যাংকের সুশাসন ঈর্ষণীয় পর্যায়ের। এসব কারণে গত বছর শেষে আমরা হাজার কোটি টাকার বেশি রেকর্ড মুনাফা করতে পেরেছি।’ https://www.prothomalo.com/business/market/hxkvt94zm3
City Bank