Home Stock Market শিপিং কর্পোরেশনের বহরে যুক্ত হচ্ছে ৬ নতুন কনটেইনার জাহাজ

শিপিং কর্পোরেশনের বহরে যুক্ত হচ্ছে ৬ নতুন কনটেইনার জাহাজ

by fstcap

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বিএসসির বহরে আরও ১৬টি জাহাজ যুক্ত হবে, যা দেশের সমুদ্রগামী বাণিজ্যে বড় পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন শিপিং খাতের সংশ্লিষ্টরা। 

তেল এবং খোলা পণ্যবাহী জাহাজ পরিচালনা করলেও সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) বহরে কোনো কন্টেইনারবাহী জাহাজ ছিল না । তবে এবার রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটির বহরে প্রথমবারের মতো ছয়টি নতুন কন্টেইনারবাহী জাহাজ যুক্ত হতে যাচ্ছে। জাহাজগুলো কেনা হবে কোরিয়া থেকে । 

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বিএসসির বহরে আরও ১৬টি জাহাজ যুক্ত হবে, যা দেশের সমুদ্রগামী বাণিজ্যে বড় পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন শিপিং খাতের সংশ্লিষ্টরা। 

বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক টিবিএসকে জানান, ৩৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কোরিয়ার দুটি শিপইয়ার্ড থেকে ছয়টি কনটেইনার জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক ৩৫০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে, আর বাংলাদেশ সরকার ৩০০ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী হলে ২০২৭ কিংবা ২০২৮ সালের মধ্যে জাহাজগুলো বহরে যুক্ত হবে। প্রতিটি জাহাজের ধারণক্ষমতা ২৫০০ থেকে ২৮০০ টিইইউ এবং ড্রাফট প্রায় ৯ দশমিক ৮ মিটার হবে।

 

নতুন এই ছয়টি কনটেইনার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরের মধ্যে চলাচল করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং ও তানজুম পেলাপাস রুটে এসব জাহাজ পরিচালিত হবে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক রুটে চার্টারিংয়ের (ভাড়ায় পরিচালিত) মাধ্যমেও এগুলো ব্যবহার করা হতে পারে।

এই প্রকল্পের আওতায় ছয়টি কনটেইনার জাহাজ সংযোজনের ফলে বছরে প্রায় ৬ লাখ টিইইউ (২০ ফুট সমতুল্য ইউনিট) কনটেইনার পরিবহণ সম্ভব হবে, যা বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করবে বলে জানিয়েছে বিএসসি।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, জাহাজ থেকে বার্ষিক আয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৬১ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং বার্ষিক পরিচালন ব্যয় হবে ১ হাজার ২১৫ কোটি ১১ লাখ টাকা।

ছয়টি সেলুলার জাহাজ সংগ্রহে প্রকল্পের ব্যাংক চার্জ, ভেসেল রেজিস্ট্রেশন, বায়ারের সার্ভেয়ার ফি, ট্যাক্স ও ভ্যাট এবং লজিস্টিক আইটেমসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৩৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

এছাড়া, প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৯২ শতাংশ বৈদেশিক ঋণ থেকে অর্থায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, শুধু এই ছয়টি জাহাজই নয়, বিএসসি ২০৩০ সালের মধ্যে আরও ১৬টি জাহাজ সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে থাকবে বাল্ক ক্যারিয়ার ও অন্যান্য ধরনের জাহাজ। চীন ও কোরিয়া থেকে এসব জাহাজ কেনার আলোচনা চলছে। 

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিএসএসসি ২৫০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা প্রতিষ্ঠানের ৫৩ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। নতুন জাহাজ সংযোজনের ফলে দেশের সামুদ্রিক বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে এবং আন্তর্জাতিক শিপিং শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুসংহত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ টিবিএসকে বলেন, রাষ্ট্রীয় শিপিং কোম্পানি বিএসসির বহরে নতুন জাহাজ যুক্ত করার পরিকল্পনা আশাব্যঞ্জক। তবে পরিকল্পনা যাতে দ্রুত এবং বাস্তবে রূপ নেয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। নতুন জাহাজ যুক্ত হলে বাংলাদেশে এই খাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে। সেটি দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। 

একসময় বিএসসির বহরে কেবল দুটি লাইটার জাহাজ ছিল, যা চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গর থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারির জেটিতে তেল পরিবহণ করত। ২০১৮-১৯ সালে ছয়টি নতুন অয়েল ট্যাংকার ও বাল্ক ক্যারিয়ার যুক্ত হলে বিএসসির বহর দাঁড়ায় আটটিতে। 

তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ইউক্রেনে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং একজন নাবিক নিহত হন। সম্প্রতি আরও দুটি পুরোনো লাইটার জাহাজ স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা কমে পাঁচটিতে নেমে এসেছে, যা নতুন জাহাজ সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

উল্লেখ্য, বিএসসি ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রাম-সিঙ্গাপুর রুটে কনটেইনার ফিডার পরিষেবা চালু করেছিল। সে সময় ‘বাংলার রবি’, ‘বাংলার মনি’ ও ‘বাংলার শিখা’ নামে তিনটি জাহাজ পরিচালিত হতো। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে মিলিয়ে বাংলাদেশের সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৩টি।    https://www.tbsnews.net/bangla/বাংলাদেশ/news-details-313281

shipping corporation Bangladesh bd

You may also like