দেশের শেয়ারবাজারের পর এবার হংকং স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হতে চায় ইস্পাত খাতের দেশি কোম্পানি জিপিএইচ ইস্পাত। কোম্পানিটির ইস্পাত কারখানার বড় ধরনের সম্প্রসারণের জন্য মূলধন সংগ্রহে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জিপিএইচের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, হংকং স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার জিপিএইচ ইস্পাতের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল হংকং যাচ্ছে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। সফরকালে প্রতিনিধিদলটি স্টক এক্সচেঞ্জ অব হংকং লিমিটেড, দেশটির মার্চেন্ট ব্যাংক আলটাস ক্যাপিটাল, অবলেখনকারী বা আন্ডাররাইটার প্রতিষ্ঠান লেগো করপোরেট ফাইন্যান্সসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবে।
নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হলে ইস্যু ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেটি করতে হয়। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে ইস্যু ব্যবস্থাপনার কাজটি করে থাকে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে স্টক এক্সচেঞ্জ, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, অবলেখনকারীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ জন্য হংকংয়ে কার্যরত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠক করতে যাচ্ছে জিপিএইচ ইস্পাতের প্রতিনিধিদল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিপিএইচ ইস্পাতের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আমাদের কোম্পানিটির উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে বড় ধরনের সম্প্রসারণ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, এতে ১৮ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার বা প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো লাগবে। এর মধ্যে ১৫ কোটি ডলার বা ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা হংকং স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে চাই। বাকি অর্থ আমরা কোম্পানির পুঞ্জীভূত মুনাফা বা রিটেইনড আর্নিংস থেকে জোগান দেওয়া হবে।’
জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ‘আমরা যে সম্প্রসারণ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি, সেটি ব্যাংকঋণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা কঠিন। কারণ, বর্তমানে ব্যাংকঋণের সুদহার খুবই বেশি। অন্যদিকে ব্যাংক থেকে ১০ থেকে ১৫ বছর মেয়াদের ঋণ পাওয়াও কঠিন। এ কারণে আমরা মূলধন সংগ্রহের মাধ্যমে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মূলধন সংগ্রহের অগ্রগতি সাপেক্ষে চলতি বছরের শেষের দিকে নতুন এ সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজে হাত দেবে কোম্পানিটি। এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে দুই বছর বা তারও বেশি সময় লাগবে। আর প্রকল্পটির সুফল পেতে আরও কয়েক বছর সময় লেগে যাবে।
জিপিএইচের একাধিক উদ্যোক্তা বলেন, ‘হংকং স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কত শেয়ার ছেড়ে কত অর্থ আমরা সংগ্রহ করতে পারব এবং কত দামে শেয়ার ইস্যু করা যাবে—এগুলো চূড়ান্ত করা হবে দেশটির সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর। যদি শেয়ারের দাম বেশি পাওয়া যায়, তাহলে আমাদের কম শেয়ার ইস্যু করতে হবে। আর দাম কম পেলে সে ক্ষেত্রে বেশি শেয়ার ইস্যু করতে হবে।’
দেশের শেয়ারবাজারের বদলে কেন বিদেশের শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে—জানতে চাইলে কোম্পানিটির উদ্যোক্তারা বলেন, দেশের শেয়ারবাজারে গভীরতা এখনো খুবই কম। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে এই বাজারে মন্দাভাব চলছে। এ অবস্থায় দেশের শেয়ারবাজার থেকে বিপুল মূলধন সংগ্রহ করা কঠিন। এ কারণে হংকংয়ের মতো বড় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বহুজাতিক পরামর্শক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস বা পিডব্লিউসি হংকং ও ভারতের চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস এলএলপিকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে কোম্পানিটি।
জিপিএইচ ইস্পাত দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১২ সালে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি শেয়ারবাজার ৬০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেস ভ্যালুর সঙ্গে ২০ টাকা প্রিমিয়াম বা অধিমূল্য যোগ করে প্রতিটি শেয়ার আইপিওতে বিক্রি করা হয় ৩০ টাকায়। আইপিওতে কোম্পানিটি ২ কোটি শেয়ার ইস্যু করেছিল। বর্তমানে এটি ৪৮৪ কোটি টাকার মূলধনের একটি কোম্পানি। গতকাল সোমবার দিন শেষে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল প্রায় ২১ টাকা।
কোম্পানিটির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে জিপিএইচ ইস্পাত প্রায় ২৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। আর গত জুনে সমাপ্ত সর্বশেষ আর্থিক বছরের জন্য কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। https://www.prothomalo.com/business/market/p3k9xi7vyj
GPHISPAT