কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির মাধ্যমে তারল্য সহায়তা পেয়ে গতি পেয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল)। গ্রাহকদের পুরো টাকা না দিতে পারলেও বেসরকারি খাতের এই ব্যাংকটি এখন স্বল্প অঙ্কের চাহিদা তত্ক্ষণাৎ পরিশোধ করতে পারছে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন অবসানের পর থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৭৯৪ কোটি টাকা বকেয়া এবং খেলাপি ঋণ আদায় করেছে এসআইবিএল। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে গ্রাহকের পূর্ণ আস্থা ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গতকাল সোমবার সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফোরকানউল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা থেকে বের হয়ে এসেছি। এটি চলার পথে হোঁচট খাওয়ার মতো। তবে আমাদের সৌভাগ্য যে ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেওয়া হয়েছে।
আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে তারল্য সহায়তাও পেয়েছি। আবার আদায়ও হচ্ছে ভালো। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত ৮ আগস্ট। সে সময় থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বকেয়া এবং খেলাপি ঋণ আদায় আশাব্যঞ্জক।
ব্যাংকটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. সাদিক ইসলাম বলেন, ‘১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দেশের প্রথম সারির ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকটি যখন দ্রুতগতিতে সাফল্যের চূড়া অভিমুখে এগিয়ে চলছিল, ঠিক তখনই দুঃশাসন ও দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়ে। ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ জোরপূর্বক দখল করে নেয় ব্যাংকটিকে। এস আলমের কবলে পড়ে ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত আট বছরে ব্যাংকটির মজবুত অর্থনৈতিক ভিত্তি যেমন দুর্বল হয়েছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাংকের গ্রাহক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে দেশ যখন স্বৈরাচারী শাসনমুক্ত হয়ে পুনরায় স্বাধীনতার স্বাদ পেল, তখন দুর্বৃত্তের কালো থাবামুক্ত হলো আমাদের প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠান সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাত পড়ে যায় সাময়িক সংকটে। যেহেতু পতিত সরকারের সরাসরি দোসর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে দখল করে রেখেছিল, তাই এই ব্যাংকেরও ক্ষতি হয়েছে। সে কারণে এসআইবিএল বর্তমানে কিছুটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এর মধ্যে তারল্য সংকট অন্যতম।’
চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশের ৯টি ব্যাংক তারল্য সমস্যায় ভুগছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ক্ষেত্রে কোনো রকম টাকা না ছাপিয়ে ভিন্ন পদ্ধতিতে গ্যারান্টির মাধ্যমে তারল্য সংকটের সমাধান করেছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। এরই মধ্যে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে চারটি ব্যাংক থেকে ৯০০ কোটি টাকার তারল্যের প্রতিশ্রুতি পেয়েছি এবং তার মধ্যে ৪৫০ কোটি টাকা তারল্য-ডিপোজিট পেয়েছি। এ ছাড়া আরো কয়েকটি ব্যাংক এরই মধ্যে আমাদের তারল্য-ডিপোজিট প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক থেকে পাওয়া তারল্য ব্যবস্থাপনায় স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রাথমিকভাবে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাময়িকভাবে স্থগিত হওয়া বিভিন্ন বিল সংগ্রহের হিসাবগুলো, যেমন—ডেসকো, তিতাস, পল্লী বিদ্যুৎ, ওয়াসা, বিটিসিএল, বিআরটিএ, ডিপিডিসি, বাখরাবাদ, কর্ণফুলী ইত্যাদি হিসাব চালু করা হয়েছে।
SIBL