Home Banking তীব্র অর্থ সংকট: নতুন করে সহায়তা চায় গ্লোবাল ইসলামী ও পদ্মা ব্যাংক

তীব্র অর্থ সংকট: নতুন করে সহায়তা চায় গ্লোবাল ইসলামী ও পদ্মা ব্যাংক

by fstcap

তীব্র তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা বেসরকারি খাতের গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক নতুন করে সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে।

সচল রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা সহায়তা চায় গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। অন্যদিকে পদ্মা ব্যাংক কোনো সুনির্দিষ্ট অঙ্ক না চেয়ে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার আগ পর্যন্ত সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছে।

গত ২৫ আগস্ট পদ্মা ব্যাংক এবং ১৬ দিন পর মঙ্গলবার গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তাদের সহায়তা দেওয়া হবে কি না, এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, পাওলা নিট ওয়্যার লিমিটেড, ট্যাঙ্গন গার্মেন্টস লিমিটেড, নিয়ার নিট ফ্যাশন লিমিটেড, এম আর ফ্যাশন এবং নাজিফা ফ্যাশন রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মচারীদের অগাস্ট মাসের বেতন-ভাতা বাবদ ৪ দশমিক ৭০ কোটি টাকা দিতে হবে।

প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রা ও টাকা থাকলেও ব্যাংকের তারল্য সংকটের কারণে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না উল্লেখ করে ব্যাংকটি বলেছে, “বেতন-ভাতা পরিশোধ করা না হলে শ্রমিক অসন্তোষ এবং কারখানা অচল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা পোশাক শিল্পে চলমান অস্থিতিশীল অবস্থা আরও বেড়ে যেতে পারে।”

 

সম্প্রতি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০১৩ সালে ব্যাংকটির যাত্রা শুরু হয় এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক হিসেবে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিতরণ করা ঋণ আর ফেরত না আসার ঘটনায় ধীরে ধীরে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার অবনতি হতে থাক।

 

গত বছর শেষে ব্যাংকটির ঋণ ছিল ১৩ হাজার ১৪১ কোটি টাকা, যার ১২ হাজার কোটি টাকার সুবিধাভোগী এস আলম গ্রুপ বলে অভিযোগ আছে।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এস আলমের প্রভাব মুক্ত করতেই ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে নতুন পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

ভেঙে দেওয়ার আগে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন প্রবাসী নিজাম চৌধুরী, পরিচালক পদে ছিলেন সাইফুল আলমের ভাই শহীদুল আলমসহ কয়েকজন স্বজন। ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলমও পরিচালক ছিলেন।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ব্যাংক খাতে যে পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র পরিচালক করা হয়েছে মেঘনা ব্যাংকের সাবেক এমডি মোহাম্মদ নুরুল আমিনকে।

চার স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. জামাল মোল্লা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সাবেক ডিএমডি নুরুল ইসলাম খলিফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অধ্যাপক আবু হেনা রেজা হাসান ও হিসাববিদ মু. মাহমুদ হোসেন।

ব্যাংকটির পুনর্গঠিত বোর্ডের সঙ্গে তারল্য সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকও হয়। কীভাবে তারল্য সংকট থেকে উত্তরণ করা যায় তার একটি রোডম্যাপও প্রণয়ন করা হয়।

ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তারল্য সহায়তা চেয়েছি। কারণ, ব্যাংকটি থেকে একটি প্রভাবশালী গ্রুপকে ঋণ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেই ঋণ আর আদায় করতে পারেনি। তাতে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে।

“গভর্নর বলেছেন আন্তঃব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা নেওয়ার জন্য। আমরা সেভাবেই চাই।”

ব্যাংকটিতে গ্রাহকরা চাহিদা মোতাবেক নগদ টাকা তুলতে পারছেন না, এই সমস্যার সমাধান কবে হবে- এই প্রশ্নে নুরুল আমিন বলেন, “ এখনও তা বলা যাচ্ছে না। তবে এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।”

 

পদ্মা ব্যাংকের কী বক্তব্য

মারাত্মক তারল্য সংকটে পড়া ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপোর মাধ্যমে ধারসহ আর্থিক সুবিধা নিয়ে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে এই ব্যাংকের চুক্তি হওয়ার পর গ্রাহকদের আমানত উত্তোলনের চাপ তীব্র হয়েছে। অনেক গ্রাহক তাদের দীর্ঘস্থায়ী আমানত ও স্কিম মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তুলে নিচ্ছেন।

এসব কথা তুলে ধরে পদ্মা ব্যাংক লিখেছে, একীভূত প্রক্রিয়া চলমান থাকায় নতুন আমানত আনাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর সিআরআর/এসএলআর এবং চলতি হিসাব ঘাটতি থাকার পরও লেনদেন কার্যক্রম চালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তবে সরকার পতনের পর গভর্নর হয়ে আসা আহসান এইচ মনসুর সে সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে ব্যাংকগুলো এখন দৈনন্দিন কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।

পদ্মা ব্যাংকের বক্তব্য নিতে ব্যাংকটি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আফজাল করিমকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

চলতি বছর এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ হওয়ার জন্য সমঝোতা স্মারকে সই করেছে পদ্মা ব্যাংক। সে সময় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। পরে তিনি এই পদ ছাড়েন।

২০১৩ সালে ব্যাংকটি ফারমার্স নামে চালু হয়। কিন্তু যাত্রার তিন বছর পার করেই ধুঁকতে শুরু করে। ২০১৯ সালে ফারমার্স ব্যাংক থেকে পদ্মা ব্যাংক হওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৭০ কোটি টাকা।

ডুবতে বসা ব্যাংকটিকে টেনে তুলতে এটি পুনর্গঠন করে নাম দেওয়া হয় পদ্মা ব্যাংক। কিন্তু তাতে লাভ কিছু হয়নি। বরং চার বছর পর ২০২৩ সালে খেলাপি ঋণ আরও ছয়শ কোটি টাকা বেড়ে যায়।

গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির আমানত দাঁড়ায় ছয় হাজার ১৪১ কোটি টাকা। এই আমানতের মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবিরই এক হাজার কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের পরিমাণ দুই হাজার ৮৫০ কোটি টাকা।

ব্যাংকটি পুনর্গঠনের সময় দেওয়া আমানত দিয়ে এখন বিপাকে পড়েছে সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। বিনিয়োগের বিপরীতে এক টাকাও মুনাফা পায়নি তারা।

GIB

You may also like