বিদ্যমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বীমা কোম্পানির জন্য সুসংবাদ বয়ে আনছে। উচ্চ সুদহার জীবন বীমা ব্যবসায় নতুন গতিশীলতা যোগ করেছে এবং সঞ্চয় পণ্যের চাহিদা বাড়িয়েছে। ‘সুইস রে’ ইনস্টিটিউটের বার্ষিক ওয়ার্ল্ড ইন্স্যুরেন্স প্রতিবেদনে এমন আশাবাদ রয়েছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পুনঃবীমা কোম্পানি ‘সুইস রে’ গত মাসে প্রকাশিত তাদের হালনাগাদ বার্ষিক ইন্স্যুরেন্স রিপোর্টে পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী জীবন বীমার প্রিমিয়াম ২ দশমিক ৯ শতাংশের বেশি হবে। ২০২৩ সালে যা ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ। চলতি বছর জীবন বীমা খাতের মুনাফায় শক্তিশালী ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। বিনিয়োগ আয়ে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে যার কারণ। সঞ্চয় পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ার ফলে অবসর সুরক্ষায় সহায়তা করবে। উপরন্তু, উচ্চ সুদের হার নতুন মূলধন বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করবে। ফলে ঝুঁকি স্থানান্তরে শিল্পের সক্ষমতা বাড়বে এবং সামাজিক প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হবে।
প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, কমপক্ষে ১২ মার্কিন ডলার ব্যয় করার ক্ষমতা রয়েছে এমন ৯ কোটি ১০ লাখ মানুষ ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী ভোক্তা শ্রেণিতে যোগ হবে। এর মধ্যে ৮১ শতাংশ আসবে চীন এবং ভারত থেকে। আরও ১১টি বাজার প্রত্যেক ১০ লাখ করে এ ধরনের ভোক্তা যোগ করবে। দেশগুলো হলো– বাংলাদেশ, ব্রাজিল, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক এবং ভিয়েতনাম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্পদ এবং ব্যয় ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উদীয়মান বাজারগুলোতে ভোক্তা শ্রেণির প্রসার ঘটছে, যা তাদের আরও বেশি বীমা কভারেজ গ্রহণের সামর্থ্য দিচ্ছে এবং এর ফলে বীমা প্রবেশের মাত্রা বাড়ছে। বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনীতিতে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি এবং উচ্চ সুদের হার জীবন বীমা কোম্পানির জন্য সুসংবাদ। উচ্চ সুদের হার বিশেষত সঞ্চয় পণ্যের চাহিদা এবং সঞ্চয় ও সুরক্ষা ব্যবসায়ের মুনাফা বাড়াচ্ছে।
দেখা গেছে, বিশ্ব অর্থনীতি আশ্চর্যজনকভাবে স্থিতিশীল থেকেছে, যা বীমা শিল্পে প্রবৃদ্ধি এবং মুনাফা বাড়ানোর জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে।
সুইস রের গ্রুপ চিফ ইকোনমিস্ট জেরোম হেগেলি বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরের চ্যালেঞ্জের পর বীমা শিল্প নতুন এক ভারসাম্যে পৌঁছেছে। বিশ্ব অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করেছে, যা বীমার চাহিদা বাড়াতে সহায়তা করবে। বিশেষ করে জীবন বীমা খাত নজরে রাখার মতো। কারণ উচ্চ সুদের হার বিনিয়োগ আয় এবং বার্ধক্যজনিত পেনশনের জন্য ভোক্তার চাহিদা বাড়াচ্ছে, যা আরও বেশি লোককে নিরাপদ অবসর আয়ের সুযোগ দিচ্ছে।’
সুইস রে ইনস্টিটিউট অনুমান করছে, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রকৃত অর্থে ২ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়বে, যা ২০২৩ সালের সমান। এ স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি ২০২৫ সালেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক, তবে বিভিন্ন অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির গতিপথ ভিন্ন। যেমন–২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যেখানে ইউরো অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ হবে, যা প্রবণতার তুলনায় কম।
সুইস রে করপোরেট সলিউশনসের চিফ আন্ডাররাইটিং অফিসার কেরা ম্যাকডোনাল্ড বলেন, বাণিজ্যিক বীমা প্রায় মোট সম্পত্তি এবং দায়বদ্ধতা বীমা বাজারের অর্ধেকের মতো অংশ ধারণ করে। আমরা আশা করছি, ২০২৪ সালে বাণিজ্যিক সম্পত্তি এবং দায়বদ্ধতা বীমাকারীরা লাভজনকতা বজায় রাখবে।
এ প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ সুদের হারের পরিবেশ জীবন বীমা শিল্পের জন্য দ্বিগুণ সুবিধা নিয়ে এসেছে, ফলে প্রবৃদ্ধি এবং মুনাফা দুটিই বাড়ছে। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ মোট প্রিমিয়াম ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বাজারে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি পুনরায় দেখা যাবে, পশ্চিম ইউরোপ এবং উন্নত এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রিমিয়াম প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসবে। ২০২৪ সালের বৃদ্ধি পাওয়া প্রিমিয়াম এবং বিনিয়োগ আয়ের সমন্বয়ে জীবন বীমা খাতের লাভজনকতা বাড়বে।
সুইস রে ইনস্টিটিউট মনে করে, জীবন বীমার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৃদ্ধির ক্ষেত্র হলো অবসর সঞ্চয় বাড়ানোর জন্য বার্ধক্যজনিত পেনশন গ্রহণ। দীর্ঘমেয়াদে উন্নত বাজারগুলো পরবর্তী ১০ বছরে সব অতিরিক্ত প্রিমিয়ামের অর্ধেকের জোগান দেবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা বার্ধক্যজনিত পেনশনের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির দ্বারা চালিত হবে।