২০১০ সালের ধসের পর দীর্ঘদিন দেশের শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক গতি ফেরেনি। বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষায় ছিলেন, যে কোনো সময় সুদিন ফিরবে শেয়ারবাজারে। কিন্তু দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও সেই দিন ফিরে পায়নি বিনিয়োগকারীরা। এর মধ্যে চলে গেছে প্রায় ১৪ বছর। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এবার মনে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে।
তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন দেশের শেয়ারবাজারে সুশাসন ছিল না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা নানাভাবে বাজারে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছে। তাতে শেয়ারবাজারের সংকট আরও বেড়েছে। একই সঙ্গে একের পর এক দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শেয়ারবাজারে কিছুটা গতি ফিরেছে। ফলে বাজারে নতুন বিনিয়োগকারীদের আগমন হচ্ছে। পাশাপাশি নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীদের অনেকেই আবার সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। অন্যদিকে গত সপ্তাহে বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরে দেশের পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব পালন করা বিগত তিন কমিশনই তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে ধ্বংস করেছে। এসব কমিশনপ্রধান গোষ্ঠীস্বার্থ, ব্যক্তিস্বার্থ এবং
রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিবিশেষের ইচ্ছা অনুযায়ী পরিচালিত হয়েছিলেন। বিনিয়োগকারী এবং সার্বিক অর্থনীতির স্বার্থে এ বাজারকে গড়ার বিন্দুমাত্র চেষ্টা তাদের ছিল না। তবে সরকার পতনের ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ায় মানুষের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। বিশ^দরবারে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সব উন্নয়ন সহযোগীরাও সযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। এতে মানুষ ফের শেয়ারবাজারমুখী হয়েছেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশিদ লালী আমাদের সময়কে বলেন, শেখ হাসিনার পতনের ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আশার সঞ্চার হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে এতদিন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজার নিয়ে হতাশা তৈরি হয়েছিল। তাই বাজারমুখী হননি অনেকে। ‘অন্তর্বর্তী সরকারের হাত ধরে নতুন বেশকিছু সংস্কার হবে এবং সুফল মিলবে বাজারেÑ এমন আশায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে।
এদিকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬ হাজার ৪১১ কোটি ১১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৩৩৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৩ হাজার ৭১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮ হাজার ৯৬৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৩ হাজার ৯১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৫ হাজার ৫১ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
অন্যদিকে বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪০ হাজার ৯৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ২৭ হাজার ২৫২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ১২ হাজার ৮৭৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ফলে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে বাজার মূলধন বেড়েছে ১৭ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা।
শেয়ারবাজারের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য অনুযায়ী, গত সাত দিনে শেয়ারবাজারে নতুন বিও হিসাব খোলা হয়েছে ৫ হাজার ৬৪৭টি। আর তিন কার্যদিবসে নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবগুলোর মধ্য থেকে ৫ হাজার ৯৭৮টি সক্রিয় হয়েছে।
সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, ১১ আগস্ট বাজারে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৫২৩। ১৪ আগস্ট এই সংখ্যা কমে হয় ৩ লাখ ১৪ হাজার ১৭৬। সেই হিসাবে তিন কার্যদিবসে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৪ হাজার ৩৪৭।
এদিকে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউটিরিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেছেন ড. এম মাসরুর রিয়াজ। গতকাল এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান মাসরুর রিয়াজ। বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে তাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে মাসরুর বলেন, এই মুহূর্তে তিনি শুধু অর্থনীতিবিদ হিসেবেই কাজ করতে চান।
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত মঙ্গলবার মাসরুর রিয়াজকে বিএসইসির চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।