শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে কমিশনার মোহসীন চৌধুরীকে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিএসইসির দুই কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন এবং রুমানা ইসলামকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে। আজকের মধ্যে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কথা। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
মোহসীন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আপাতত তিনি এ সংস্থার প্রধান নির্বাহী হিসেবে রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। এর বাইরে গত বৃহস্পতিবার আত্মগোপনে থেকে শিবলী রুবাইয়াত তিন কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বহাল রেখে যে আদেশ দিয়েছিলেন, তা বাতিল করতেও এফআইডি বিএসইসিকে পৃথক নির্দেশনা দিয়েছে। ওই নির্দেশনা মেনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গতকালই আদেশটি বাতিল করে নতুন আদেশ জারি করেন।
গত শনিবার রাত ১০টায় এফআইডির সচিব আবদুর রহমান খানের হোয়াটসঅ্যাপে নিজের পদত্যাগপত্র পাঠান শিবলী রুবাইয়াত। পদত্যাগপত্র পাঠানোর আগে তিনি চেয়ারম্যান পদে থাকতে নানা চেষ্টা ও তদবির করেছেন বলে জানা গেছে। অবশ্য তাতে কাজ হয়নি। গতকাল সকালে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
অধ্যাপক শিবলীর পদত্যাগের পর প্রশ্ন উঠেছিল, বিতর্কিত কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ স্বপদে বহাল থাকবেন কিনা। সরকারের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে সমকালকে জানান, ‘এরই মধ্যে তাদের পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। আশা করছি, সোমবারের মধ্যে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। একই সঙ্গে অপর কমিশনার রুমানা ইসলামকেও পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে।’
বিএসইসির এই দুই কমিশনারের বিরুদ্ধে সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলীর নানা অনৈতিক ও অবৈধ কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ আছে। শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ বেশি। আরও তিনজন কমিশনার থাকার পরও আস্থাভাজন হিসেবে তাঁকে বিএসইসির প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্ব দিয়ে গত জুনে অফিস আদেশ জারি করেন শিবলী রুবাইয়াত। রিং শাইন টেক্সটাইলের আইপিও জালিয়াতির ঘটনা উদ্ঘাটনের পর কোম্পানিটির মালিকানা স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে হস্তান্তরে শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ অবৈধ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন মর্মে তাঁর বিরুদ্ধে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন এ কোম্পানির বিদেশি উদ্যোক্তারা।
এদিকে দিনের লেনদেন শেষের হিসাবে টানা চতুর্থ দিনে শেয়ারদর ও সূচকের উত্থানের ধারা অব্যাহত ছিল শেয়ারবাজারে। সকাল ১০টায় দিনের লেনদেন শুরু হয় ব্যাপক উত্থানে। এর পর অবশ্য পতনের ধারা দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে ১৭১টির দর বেড়ে, ২০৪টির দর কমে এবং ২০টির দর অপরিবর্তিত অবস্থায় লেনদেন শেষ হয়। এদিকে ছয় মাস পর ডিএসইতে ২ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। ডিএসইর মূল প্ল্যাটফর্মেই ২ হাজার ১০ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা গত ৮ ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ মিলে মোট ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৯১ পয়েন্ট বেড়ে ৬০১৫ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। এ নিয়ে গত চার কার্যদিবসে সূচকটির মোট ৭৮৬ পয়েন্ট বেড়েছে। টানা দরপতনে গত ১২ মার্চ সূচকটি ৬০০০ পয়েন্টের মাইলফলক থেকে ছিটকে পড়ার পাঁচ মাস পর ফের ওই মাইলফলক অতিক্রম করল সূচকটি। সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর মুহূর্তে ডিএসইএক্স সূচক ১৬৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬০৯০ পয়েন্ট ছাড়ায়। এর প্রথম ২২ মিনিট পর্যন্ত টানা বেড়ে আগের দিনের তুলনায় ২৯১ পয়েন্ট বেড়ে ৬২১৬ পয়েন্ট ছাড়িয়েছিল। মাত্র চার দিনের দর বৃদ্ধিতে অনেক শেয়ারের দর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সূচক এ পর্যায়ে ওঠে।
উত্থানের সুবিধা নিতে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি শুরু করলে সংশ্লিষ্ট শেয়ারগুলো দর হারাতে থাকে। তাতে সূচকও নিম্নমুখী হয়। অবশ্য আশাবাদী বিনিয়োগকারীদের ক্রয় চাপে নতুন করে অনেক শেয়ার দর ফিরে পায়। এতে সূচকও ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে ইসলামী ব্যাংক, গ্রামীণফোন, বিএটি বাংলাদেশ, ব্র্যাক ব্যাংক, রবিসহ বৃহৎ বাজার মূলধনি কোম্পানি। এই পাঁচ শেয়ারসহ ডিএসইএক্সভুক্ত ৯৩ শেয়ার সূচকে মোট ১৪৩ পয়েন্ট যোগ করে, যা শীর্ষ ১০টি সাকল্যে ১০১ পয়েন্ট যোগ করেছে। বিপরীতে নেতিবাচক প্রভাব রাখা ১৫৯ শেয়ারের কারণে সূচক হারায় ৫২ পয়েন্ট।