দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন আবার হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গতকাল রোববার এই বাজারে লেনদেন কমে ৯২৫ কোটি টাকায় নেমেছে। ১১ কার্যদিবস পর ডিএসইতে লেনদেন হাজার কোটি টাকার নিচে নামল।
লেনদেনের পাশাপাশি কমেছে মূল্যসূচকও। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স এদিন ৫৩ পয়েন্ট কমে হয়েছে ৬ হাজার ২৮৩ পয়েন্ট। টানা পাঁচ কার্যদিবস ধরে সূচক কমছে এ বাজারে। তাতে ৯ কার্যদিবস পর ডিএসইএক্স সূচকটি আবার ৬ হাজার ৩০০ পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে। সর্বশেষ ৪ ফেব্রুয়ারি এ সূচক ৬ হাজার ২৮১ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্য থেকে কিছু কোম্পানিকে দুর্বল মানের ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন ধরে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। বিনিয়োগকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেন্দ্রিক বিভিন্ন গ্রুপে এ নিয়ে নানা ধরনের কথাবার্তা ছড়ায়, যার রেশ ধরে অনেকেই কিছু শেয়ার থেকে বিনিয়োগ তুলে নিতে শুরু করেন। এতে বিক্রির চাপ বেড়ে শেয়ারগুলোর দাম কমতে থাকে।
‘নিয়ম অনুযায়ী, জেড শ্রেণিভুক্ত কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা কোনো ধরনের ঋণসুবিধা পান না। আবার এসব শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তি হতেও তিন কার্যদিবস সময় লাগে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যাতে খারাপ বা দুর্বল মানের কোম্পানির শেয়ার কেনায় খুব বেশি আগ্রহী না হন, সে জন্য ঋণ বন্ধসহ লেনদেন নিষ্পত্তির সময় বাড়ানো হয়েছে।’
বিভ্রান্তি দূর করতে গত বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারের কোম্পানিগুলোকে জেড শ্রেণিভুক্ত করার বিষয়ে নির্দেশনা জারি করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ওই নির্দেশনা ও বিএসইসির মতামতের ভিত্তিতে গতকাল ২২ কোম্পানিকে জেড শ্রেণিভুক্ত করা হয়। তিনটি কারণে এসব কোম্পানিকে জেড শ্রেণিভুক্ত করা হয়। প্রথমত নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা না করায়, দ্বিতীয়ত ছয় মাসের বেশি উৎপাদন বন্ধ থাকায় ও তৃতীয়ত কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে লোকসানের পরিমাণ বেশি হওয়ায়।
‘বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্য থেকে কিছু কোম্পানিকে দুর্বল মানের ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন ধরে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে।’
বিএসইসির যে নির্দেশনায় এসব কোম্পানিকে জেড শ্রেণিতে স্থানান্তর করা হয় তাতে আরও বলা হয়েছিল, যেসব কোম্পানি পরপর দুই বছর লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি, সেগুলো জেড শ্রেণিভুক্ত হবে। কিন্তু পরপর দুই বছর লভ্যাংশ না দেওয়া কোনো কোম্পানিকে শেষ পর্যন্ত বিএসইসি জেড শ্রেণিভুক্ত করেনি। ফলে নির্দেশনাটি আংশিক বাস্তবায়ন করায় এটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বাজারসংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একাধিক সূত্র জানায়, লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানিগুলোকে জেড শ্রেণিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গেলে তাতে আরও ২০টির মতো কোম্পানিকে জেড শ্রেণিভুক্ত করতে হতো। সে ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দরপতন হলে তাতে বাজারে বড় ধরনের পতনের শঙ্কা রয়েছে। তাই নির্দেশনাটি আংশিক বাস্তবায়ন করা হয়। এদিকে পুঁজিবাজার বিশ্লেষকেরাও বিএসইসির এ ধরনের পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন।
‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা যখন কোনো নিয়ম করে, সেটি সবার জন্য সমান হতে হবে। কারও জন্য নিয়ম কার্যকর, আর কাউকে ছাড়—এ ধরনের পদক্ষেপ বাজারের জন্য ক্ষতিকর। এমনভাবে নিয়ম প্রণয়ন ও কার্যকর করতে হবে, যাতে বিনিয়োগকারীরা সেটি সহজেই বুঝতে পারেন। তা না হলে একধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হবে, যা কখনো বাজারের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী’
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, জেড শ্রেণিভুক্ত হওয়া ২২ কোম্পানির মধ্যে ১৬টিই ডিএসইএক্স সূচকে অন্তর্ভুক্ত। এর ফলে এসব কোম্পানির সর্বোচ্চ দরপতন হওয়ায় গতকাল ডিএসইর সূচকেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে এদিন নতুন করে জেড শ্রেণিতে স্থানান্তর হওয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ারের ক্রেতাসংকট ছিল বাজারে। তাই এসব শেয়ারের খুব বেশি লেনদেন হয়নি।
নিয়ম অনুযায়ী, জেড শ্রেণিভুক্ত কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা কোনো ধরনের ঋণসুবিধা পান না। আবার এসব শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তি হতেও তিন কার্যদিবস সময় লাগে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যাতে খারাপ বা দুর্বল মানের কোম্পানির শেয়ার কেনায় খুব বেশি আগ্রহী না হন, সে জন্য ঋণ বন্ধসহ লেনদেন নিষ্পত্তির সময় বাড়ানো হয়েছে।
source: prothomalo.com
suchok kome gelo DSE lenden