ব্যাংক খাতকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে বড় সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে খেলাপিদের ধরতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে ব্যাংকের কার্যনির্বাহীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মামলায় আটকে থাকা অর্থ আদায়ে অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্রলিং পেগ বাস্তবায়ন, কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে ধার দেওয়া, কোন কোন ব্যাংককে মার্জার করা যায় সে বিষয়ে ব্যাংকারদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এছাড়া দুর্বল ব্যাংকের ওপর আসবে নানা নিষেধাজ্ঞা। সব মিলিয়ে প্রমোট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
বুধবার বিকালে ব্যাংকার্স সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের এসব নির্দেশ দিয়েছেন। সভা শেষে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক।
তিনি বলেন, গত ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোকে সংস্কারের জন্য প্রমোট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ঘোষণা করেছি। সেখানে সংস্কারের ক্ষেত্রে কভীাবে ব্যাংকগুলোর অবস্থান নির্ণয় করা হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা দেওয়া আছে। চলতি বছরের (২০২৪) ডিসেম্বর প্রান্তিকের হিসাব ধরে আগামী বছরের (২০২৫) মার্চ নাগাদ ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু হবে। এজন্য ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের ব্যক্তিগতভাবে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার প্রতি দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। আর যেসব ব্যাংকের অবস্থা একেবারেই দুর্বল তাদের ঋণ বিতরণ, আমানত সংগ্রহ থেকে শুরু করে কার্যক্রমের ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। আবার কোনো কোনো দুর্বল ব্যাংককে একে অপরের সঙ্গে একীভূত (মার্জার) করেও দেওয়া হতে পারে। তবে এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলো যদি তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে পারে তাহলে তো কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা আসবে না।
মেজবাউল হক বলেন, সম্প্রতি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। টার্গেট বাস্তবায়ন পর্যন্ত এই ধরনের মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে। সেক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর আর্থিক সংকট দেখা দিতে পারে। এজন্য তাদের আগে থেকেই সতর্ক থাকতে বলা হয়। যাতে তারা তারল্য ব্যবস্থাপনা ঠিকমতো করতে পারে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যাংকের সুশাসন ফেরাতে চায়। এজন্য আইনি প্রক্রিয়ায় মার্জার অ্যাকুয়েজেশন করা হয়। আগামীতে সে বিষয়গুলো চর্চা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই ব্যাংকের সুশাসন ফেরাতে একটি কমিটি গঠন করেছি। তারা একটি অ্যাকশন প্ল্যান করছে। সেখানে খেলাপি ঋণ কমানো এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় ক্রলিং পেগ চালুর কথা বলা হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটি বাস্তবায়ন করা হবে। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের ক্রলিং পেগ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
মেজবাউল হক বলেন, মামলা কমাতে এডিআরের ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ব্যাংক নির্বাহীদের। এতে মামলার সংখ্যা কমে আসবে। তবে এটাও তাদের সতর্ক করা হয়েছে, যাতে কোনো গ্রাহক এই এডিআরের সুবিধা নিয়ে শুধু শুধু সময়ক্ষেপণ না করতে পারে। এছাড়া কিছুদিন আগে একটি প্রজ্ঞাপনে ব্যাংক ঋণ গ্রহীতাদের আঙুলের ছাপ নিতে বলা হয়। এক্ষেত্রে তাদের কোনো সমস্যা হবে কিনা সে বিষয়েও পরামর্শ চাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে সব ধরনের সুদহার আরও বাড়তে পারে। ব্যাংকগুলো যাতে কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়ে সে বিষয়ে আগে থেকেই পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ডলার সোয়াপে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ডলার আছে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য ডলার রেখে টাকা নিতে পারবে। আবার সময় শেষে টাকা ফেরত দিয়ে ডলার ফেরত নিতে পারবে। অনেক সময় ব্যাংকের কাছে শর্তের অতিরিক্ত ডলার থাকে। সেক্ষেত্রে শর্তের কারণে তাদের সেই ডলার বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। আবার পরবর্তী সময়ে তাদের এলসি পেমেন্টের সময় ব্যাংকগুলো ডলার পাচ্ছে না। এজন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক কারেন্সি সোয়াপের দিকে যাচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশেই এই চর্চা আছে। এর আগে এ ধরনের সমস্যা তৈরি হয়নি। তাই বাংলাদেশের জন্য এটা নতুন।
ব্যাংকার্স মিটিংয়ের বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে পিসিএ, ক্রলিং পেগ, মার্জারসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়। অর্থাৎ দুর্বল ব্যাংকগুলো যাতে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করে ভালো কিছু হয় সেটাই চিন্তা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর বলেছেন, পলিটিক্যালি যাই হোক না কেন, তিনি ব্যাংকে সুশাসন ফেরাতে কোনো আপস করবেন না। তিনি বলেছেন, কোন ব্যাংককে কীভাবে মার্জ করতে চান সে বিষয়ে আপনারাই দেখেন। অর্থাৎ আগামীতে ব্যাংকিং সেক্টর ঘুরে দাঁড়াবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে ফ্রেমওয়ার্ক দিয়েছে সে অনুযায়ী ব্যাংক খাত পরিচালনা করা হবে। খেলাপিদের ধরতে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা করা হবে না। এছাড়া ব্যাংকে সুশাসন ফেরাতে যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সবকিছুই নিতে গভর্নর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো ইতোমধ্যেই কাজ করতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। ডলার সংকটও আগের মতো নেই। যা আছে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে কেটে যাবে। আর ডলার সংকটের কারণে রমজানের পণ্য আমদানিতে কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি হবে না।
source: jugantor.com
weak bank Prohibition bangladesh bank bb political