Home National ডলার সংকটে ২২ কোম্পানি নতুন করে লোকসানে

ডলার সংকটে ২২ কোম্পানি নতুন করে লোকসানে

by fstcap

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দেশীয় কোম্পানিগুলোর গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে মুনাফায় সার্বিকভাবে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। বেশিরভাগ কোম্পানির মুনাফা কমে গেছে। সংকটের কারণে মুনাফায় থাকা ৩৩ কোম্পানি চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে লোকসানে পড়েছে। ডলার সংকটের পাশাপাশি কাঁচামাল ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিকে লোকসানের কারণ হিসেবে দায়ী করছে কোম্পানিগুলো। অতিরিক্ত মূল্যে ডলার কিনতে গিয়ে বেড়েছে পরিচালন ব্যয়। এতে একই সঙ্গে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রি কমছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মুনাফায়।

 

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দেশীয় উৎপাদন ও সেবা খাতসংশ্লিষ্ট ১৭৮টি চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকের, অর্থাৎ গত জুলাই-সেপ্টেম্বরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে লোকসান করেছে ৫৫টি কোম্পানি; যার ২২টি গত বছর মুনাফায় ছিল। নতুন করে লোকসানে পড়া বেশিরভাগই বস্ত্র খাতের। এর মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেড, মতিন স্পিনিং, ম্যাকসন্স স্পিনিং, মেট্রো স্পিনিং, এস্কোয়ার নিটিং, ডেল্টা স্পিনিং, শেফার্ড, সোনারগাঁও, স্টাইলক্রাফট, জাহিন স্পিনিং, জাহিন টেক্সটাইল ও আনলিমা ইয়ার্ন অন্যতম।

 

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২২-২৩ হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকের প্রতিবেদন প্রকাশ করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১২৪টির কম-বেশি মুনাফা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫টির মুনাফা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। আবার মুনাফায় থাকা ২৮ কোম্পানির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে নামমাত্র ১ থেকে ৯ পয়সা পর্যন্ত মুনাফা করেছে বলে জানিয়েছে। ১৬টি লোকসান থেকে মুনাফায়।

২০২২-২৩ হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাপক মুনাফায় থাকা বেক্সিমকো লিমিটেড লোকসানে পড়েছে। কোম্পানিটি চলতি প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ৭৯ পয়সা লোকসান করেছে, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৩ টাকা ৮৩ পয়সা। ডলার সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রপ্তানি ও স্থানীয় চাহিদা ব্যাপক হারে কমে যাওয়ার পাশাপাশি গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি কোম্পানিটির লোকসানের প্রধান কারণ বলে জানানো হয়েছে।

মতিন স্পিনিং আগের বছর ভালো মুনাফায় থাকলেও এবার লোকসানে পড়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ১ টাকারও বেশি, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ২ টাকা ৭ পয়সা। লোকসানের কারণ সম্পর্কে কোম্পানিটি জানিয়েছে, উৎপাদন খরচ বাড়লেও সুতার দাম কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিক্রিও উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে, যা মুনাফার মার্জিন কমিয়ে দিয়েছে।

ভালো মুনাফায় থেকে লোকসানে পড়া মেট্রো ও ম্যাকসন্স স্পিনিং জানিয়েছে, আর্থিক ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কাঁচামাল ও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সুতার উৎপাদন বেড়ে গেছে। কিন্তু উৎপাদিত সুতার দাম কমে গেছে। এ ছাড়া বিদেশি মুদ্রা বিনিময় হারে লোকসানের পাশাপাশি কাঁচামাল ও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিকে লোকসানের প্রধান কারণ হিসেবে অভিহিত করেছে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ।

লোকসানে থাকা ৫৫ কোম্পানির সাকল্যে ১০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এর মধ্যে গত বছর মুনাফায় থাকা ২২ কোম্পানির মুনাফা বিবেচনায় নিয়ে সব কোম্পানির মোট লোকসানের পরিমাণ ছিল ৪৬ কোটি টাকা।

এদিকে নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরও ৬২ কোম্পানি আর্থিক প্রতিবেদনই প্রকাশ করেনি। এগুলোর কয়েকটি এ জন্য পর্ষদের ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত সভা হয়নি। আর ৩৮টি কোম্পানি পর্ষদ সভা আহ্বানই করেনি। ধারণা করা হয়, নির্ধারিত সময়ে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করা কোম্পানিগুলোর সিংহভাগই আর্থিকভাবে রুগ্ণ অবস্থায় বা বন্ধ আছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫৫ কোম্পানির মধ্যে ২২৮টি দেশীয় সেবা ও উৎপাদন খাতসংশ্লিষ্ট।

সার্বিক নেতিবাচক অবস্থা বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ডলার সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব যে মুনাফায় পড়বে, তা জানাই ছিল। তবে এখানকার কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অনেক কোম্পানি শেয়ারদরের ওঠানামা দেখে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে। লোকসানকে মুনাফা বানিয়ে দেখায়। আবার দরকার পড়লে মুনাফা কমিয়ে দেখায়। গুটিকয় বহুজাতিক ছাড়া বেশিরভাগ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে কারও বিশ্বাস নেই।

তবে সার্বিক নেতিবাচক ধারার মধ্যেও কিছু কোম্পানি ভালো মুনাফা করেছে। সাকল্যে কোম্পানিগুলো নিট ৭২১ কোটি টাকা মুনাফা করেছে বলে জানিয়েছে; যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬৭৫ কোটি টাকা; অর্থাৎ গড়ে পৌনে ৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

মুনাফায় থাকা ১২৪ কোম্পানির মধ্যে ৭০টির মুনাফা গত হিসাববছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশের বেশি মুনাফা বেড়েছে ৪৪টির। তবে মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ৫০ শতাংশ ধরলে, এই সংখ্যা হবে ২২টি।

শেয়ারপ্রতি ১ টাকা বা এর বেশি মুনাফা করার তথ্য দিয়েছে ৪২ কোম্পানি। ১০ টাকার শেয়ারের বিপরীতে সর্বাধিক ৯ টাকা ২৪ পয়সা করে মুনাফার (ইপিএস) তথ্য দিয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পদ্মা অয়েল। গত বছরের একই সময়ে এই কোম্পানি ইপিএস ছিল ৭ টাকা ২০ পয়সা। এ ছাড়া যমুনা অয়েলের মুনাফা ইপিএস ৫ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বেড়ে এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৭ টাকা ৫৯ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। উভয় কোম্পানি জানিয়েছে, ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়াই মুনাফা বৃদ্ধির কারণ।

ইপিএসের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বেসরকারি ওষুধ কোম্পানি শেয়ারপ্রতি ৮ টাকা ৮৯ পয়সা মুনাফা করেছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১০ টাকা ৮৬ পয়সা। স্কয়ার ফার্মার ইপিএস সামান্য বেড়েছে, ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৭৭ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। তবে ইপিএসে এগিয়ে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সোনালি পেপার, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্্লস, ইউনাইটেড পাওয়ার, ডরিন পাওয়ার, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের মুনাফা কমেছে।

বিপরীতে দেশীয় ইলেট্রনিকস পণ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী জায়ান্ট ওয়ালটন গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৫২ পয়সা করে লোকসান করেছিল। এ বছর ৬ টাকা ৬৭ পয়সা করে মুনাফা করার তথ্য দিয়েছে। বিএসআরএম স্টিলও শেয়ারপ্রতি ৯৩ পয়সা লোকসান থেকে ১ টাকা ২১ পয়সা মুনাফা করেছে বলে জানিয়েছে।

লোকসান থেকে বেরিয়ে আসার কারণ ব্যাখ্যায় ওয়ালটন জানিয়েছে, গত হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে ডলার ও ইউরোর বিনিময়জনিত লোকসান ছিল ২৬২ কোটি টাকার বেশি, যা এ বছর ২ কোটি টাকার নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। পাশাপাশি অর্থায়ন খরচও কমানো হয়েছে। এতে কোম্পানির মুনাফা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

Source: deshrupantor.com

Dollar crisis Bangladesh

beximco zaheen deltaspin makson metro anlima shephard

You may also like