নীতি সুদহার ও ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধির পরে ট্রেজারি বিলের সুদের হারও বাড়ানো হয়েছে। এক বছরের ট্রেজারি বিলে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ দিচ্ছে সরকার। যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিলো ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ । দেড় শতাংশ বাড়ানো হয়েছে এক বছরের ট্রেজারি বিলের সুদের হার।
এছাড়া ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলে সুদ এখন ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। সেপ্টেম্বর মাসে ছিলো ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর ১৮২ দিনের ট্রেজারি বিলে সুদহার সাড়ে ৯ শতাংশ। গত মাসে ছিল ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
এখন কেউ সরকারি ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ করলে ব্যাংকের আমানতের দ্বিগুণ সুদ পাবে। কারণ বর্তমানে ব্যাংকে গড় সুদহার পাঁচ শতাংশের নিচে। তবে কোনো কোনো ব্যাংকে গ্রাহক আমানত রাখলে সর্বোচ্চ সাত শতাংশ হারে সুদ পাচ্ছে। যদিও এগুলোর বেশিরভাগই দুর্বল ব্যাংক। মূলধন ও আমানত ঘাটতির পূরণে তারা উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার ব্যাংকের সুদহার ও আমানতের সুদ বাড়িয়েছে। তাই পরিপ্রেক্ষিতে এবার ট্রেজারি বিলের সুদের হার বাড়িয়েছে। এরফলে আমানত বাড়বে ব্যাংকে। আমানেতর ফলে ঋণের চাহিদা বাড়বে। ঋণের চাহিদার ফলে আয় বাড়বে। আয় বাড়লে আমানতকারী এর মুনাফা পাবে। এতে মানুষের ক্রয়-ক্ষমতাও বাড়বে। তাতে মানুষের কিছুটা হলেও কষ্ট দূর হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ইতিমধ্যে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বাড়িয়েছে। সেপ্টেম্বরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যা সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি।
তথ্যমতে, গত আগস্টে ব্যাংক আমনতে গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। ওই মাসে পদ্মা ব্যাংক গ্রাহকে সর্বোচ্চ সাত দশমিক ৯৬ শতাংশ সুদ দিয়েছে। যদিও তা মানুষের জন্য পর্যাপ্ত নয়। কারণ আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ শতাংশের ওপরে। এ সময় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশে পৌঁছায়। এছাড়া জুলাইয়ে ব্যাংক আমানতের গড় সুদহার ছিল চার দশমিক ৪৬ শতাংশ ও জুনে চার দশমিক ৩৮ শতাংশ।
অন্যদিকে এখন তিন মাস থেকে এক বছরের ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ করলে সর্বনিম্ন ৯.২৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ পাওয়া যাবে, যা ব্যাংক আমানতের সুদহারের চেয়ে অনেক বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ এখন লাভজনক খাত। কারণ এখানে এখন বেশি সুদ পাওয়া যায়, যা ব্যাংকের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়া ট্রেজারি বিলে উৎসে কর ৫ শতাংশ, ব্যাংকের আমানতে যা ১০ শতাংশ। আর এখানে বিনিয়োগের কোনো সীমা নেই।
তারা আরও বলেন, ব্যাংকে চেয়ে ট্রেজারি বিল বন্ডে বিনিয়োগ শতভাগ নিরাপদ। কারণ এটি সরকারি পণ্য। অধিকাংশ ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেলে অর্থ পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে এখানে বিনিয়োগে ওইরকম কোনো ঝুঁকি নেই। তাই ট্রেজারি বিল হতে পারে নিরাপদ বিনিয়োগের জায়গা।
সূত্রমতে, সরকারের ইস্যু করা বিল এবং বন্ডকে ট্রেজারি বিল ও ট্রেজারি বন্ড বলা হয়। কোনো বিনিয়োগকারী যেকোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘সিকিউরিটিজ হিসাব’ খুলে ১ লাখ টাকা বা তার গুণিতক যেকোনো অঙ্ক বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। নির্দিষ্ট সময় অন্তর বাংলাদেশ ব্যাংকে এগুলোর নিলাম হয়। এটি প্রাথমিক বাজার। ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় প্রাথমিক বা সেকেন্ডারি বাজার থেকে বিল বা বন্ড কিনতে পারেন। তবে বিল ও বন্ডে সাধারণ বিনিয়োগকারী নেই বললেই চলে। মূলত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো এসব বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করেছে।
বর্তমানে তিন মেয়াদের ট্রেজারি বিল ও পাঁচ মেয়াদের ট্রেজারি বন্ড প্রচলিত আছে। ট্রেজারি বিলের মেয়াদ ৯১ দিন, ১৮২ দিন ও ৩৬৪ দিন। আর ট্রেজারি বন্ড ২, ৫, ১০, ১৫ ও ২০ বছর মেয়াদি। এগুলোর নিলাম করে সরকার নিয়মিত ঋণ গ্রহণ করে। এগুলোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ও করপোরেট প্রতিষ্ঠান থেকেও ঋণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এসব গ্রাহক সরকারি বিল ও বন্ড কেনার প্রতি আগ্রহ দেখায় না। যে কারণে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরাও এখন ট্রেজারি বন্ড কিনছেন। সাধারণ মানুষ যাতে সহজে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন, এজন্য নিয়মকানুনও সহজ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘ব্যাংকের চেয়ে ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করলে লাভ বেশি। বাংকের চেয়ে সুদের বেশি। এখানে কোন ঝুঁকি নেই। ব্যাংকের আমানত রাখলে ১০ শতাংশ মুনাফার ওপর কর দিতে হয়। এখানে বিনিয়োগে কোনো সীমা নেই। যতো ইচ্ছা বিনিয়োগ করা যাবে। অন্যসব ক্ষেত্রে সীমা রয়েছে।’
source: sangbad.net.bd
treasury bill 10 percent profit cse dse