যাযাদি ডেস্ক
১৯ আগস্ট ২০২৩, ১২:৩৬
https://www.jaijaidinbd.com/share-/386493
‘উপায় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’ নামের একটি প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ভিন্ন ভিন্ন খাতের তিন কোম্পানির পর্ষদ। কোম্পানিগুলো হলো তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড, ওষুধ ও রসায়ন খাতের নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও বিবিধ খাতের আরামিট লিমিটেড। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কোম্পানি তিনটির পৃথক পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্তে অনুমোদনও করা হয়েছে। মূল্যসংবেদনশীল তথ্যে পৃথকভাবে এ তথ্য জানিয়েছে কোম্পানি তিনটি।
তথ্যানুসারে, ‘উপায় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’ নামের প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকটির মোট পরিশোধিত মূলধন হবে ১২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জেনেক্স ইনফোসিস ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও আরামিট লিমিটেড ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকটির মোট পরিশোধিত মূলধনের যথাক্রমে ১০ শতাংশ, ৬ শতাংশ ও ৫ শতাংশের মালিকানায় থাকবে কোম্পানি তিনটি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন চাইবে কোম্পানিগুলো। তবে প্রস্তাবিত ব্যাংকটি স্থাপনে এ তিন কোম্পানির সঙ্গে কনসোর্টিয়াম বা জোটের অন্য সদস্য কারা হবে সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
এরই মধ্যে ‘ডিজি ১০ ব্যাংক পিএলসি’ নামের একটি প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের লক্ষ্যে ১০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সমন্বয়ে কনসোর্টিয়াম গঠন হয়েছে। এ জোটের সদস্য হয়ে ডিজিটাল ব্যাংকটিতে বিনিয়োগের প্রস্তাব ১০টি ব্যাংকের পর্ষদেই অনুমোদিত হয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল), ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, প্রাইম ব্যাংক লিমিটড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স (এনসিসি) ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) লিমিটেড, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড ও মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড। প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকটির মোট পরিশোধিত মূলধন হবে ১২৫ কোটি টাকা। জোটে থাকা ১০ ব্যাংকই এতে সাড়ে ১২ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করবে। যা প্রস্তাবিত ব্যাংকটির মোট পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিটি ব্যাংক সাড়ে ১২ কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকটির ১০ টাকা মূল্যের ১ কোটি ২৫ লাখ শেয়ারের মালিকানায় থাকবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন চাইবে ব্যাংকগুলো।
এর বাইরে স¤প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহীদের আবেদন আহŸান করা হলে তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকটি ব্যাংক, বীমা কোম্পানি ও অন্যান্য খাতের কোম্পানির পর্ষদে এ ব্যাংক গঠনে বিনিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। তবে এসব ব্যাংক কিংবা কোম্পানি তাদের সঙ্গে জোটে কারা রয়েছে সে বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। প্রথম ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের পর্ষদে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন হয়। ব্যাংকটির পর্ষদে একটি প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকে সাড়ে ১২ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়েছে, যা ওই ব্যাংকের মোট পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ। তবে তাদের সঙ্গে প্রস্তাবিত এ ডিজিটাল ব্যাংক গঠনে জোটে কারা রয়েছে, তা জানানো হয়নি। ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের পর্ষদে ‘বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’ নামে একটি ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে। প্রস্তাবিত ব্যাংকটি গঠনে জোটে কারা রয়েছে তা নিশ্চিত করা হয়নি। আর এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংক লিমিটেডের পর্ষদে অন্য একটি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনে বিনিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। তবে এ ডিজিটাল ব্যাংকের নাম কী হবে কিংবা এতে তাদের সঙ্গে জোটে কারা রয়েছে সে বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। এনআরবিসি ব্যাংক প্রস্তাবিত এ ডিজিটাল ব্যাংকের মোট পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বিপরীতে বিনিয়োগ করবে। এছাড়া ‘সঞ্চয় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’ নামের একটি প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের মোট পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বিপরীতে বিনিয়োগের প্রস্তাব ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের পর্ষদে অনুমোদিত হয়েছে।
অন্যদিকে বীমা কোম্পানি প্রগতি ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ও প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের পর্ষদে ‘প্রগতি ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’ একটি ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। কোম্পানি দুটির সঙ্গে জোটে কারা রয়েছে, তা জানা যায়নি। ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি এসিআই লিমিটেডের পর্ষদে ‘কোরি ডিজিটাল পিএলসি’ নামের একটি ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। কোম্পানিটির সঙ্গে সমন্বিত জোটে কারা রয়েছে, তাও নিশ্চিত করা হয়নি। এর বাইরে ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের কোম্পানি ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসির পর্ষদে ‘আমার ডিজি ব্যাংক পিএলসি’ নামের একটি প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এ কোম্পানিও তাদের সঙ্গে জোটে কারা রয়েছে, তা জানায়নি।
উল্লেখ্য, দেশের প্রচলিত ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি আর্থিক সেবা দিতে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী উদ্যোক্তাদের অবশ্যই পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হতে হবে। এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণের শেষ দিন ছিল ১৭ আগস্ট। এ আবেদনের সময় আর বাড়ানো হবে কিনা, সে বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা জারি করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি।
জানা গেছে, ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহীদের আবেদনের প্রসেসিং ফি বাবদ অনলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে ৫ লাখ টাকা জমা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে ডিজিটাল ব্যাংকগুলোকে জনসমক্ষে আসতে হবে। ডিজিটাল ব্যাংকগুলো কাউন্টারের মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকদের কোনো সেবা দিতে পারবে না এবং কোনো ফিজিক্যাল ইনস্ট্রমেন্টও ইস্যু করতে পারবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির বিধিমালা অনুসারে, ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের ন্যূনতম ১২৫ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন দেখাতে হবে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে অর্থাৎ আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে উত্থাপিত মূলধনের পরিমাণ পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে কম হলে এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। আর মূলধন আসতে হবে অবশ্যই উদ্যোক্তাদের থেকে। এক্ষেত্রে প্রতি উদ্যোক্তাদের ন্যূনতম ৫০ লাখ টাকার শেয়ার মালিকানা নিতে হবে।
যাযাদি/ এসএম