Home Featured হঠাৎ দেশের আর্থিক হিসাবে বড় পরিবর্তন

হঠাৎ দেশের আর্থিক হিসাবে বড় পরিবর্তন

by fstcap

হঠাৎ করেই দেশের আর্থিক হিসাবে বড় পরিবর্তন দেখিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক মাসের ব্যবধানে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের বিপুল ঘাটতি উদ্বৃত্তে রূপ নিয়েছে। প্রতি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যালেন্স অব পেমেন্টের যে হিসাব দেয় সেখানে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময় পর্যন্ত আর্থিক হিসাবে ৯২৫ কোটি ডলার ঘাটতি থাকলেও জুলাই-এপ্রিল সময়ে সেটা ২২৩ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত দেখানো হয়েছে। মূলত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে মিল রেখে রপ্তানির হিসাব সমন্বয়, বাণিজ্য ঘাটতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকে আর্থিক হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করায় ঘাটতি উদ্বৃত্তে রূপ নিয়েছে।

এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত দেখানো হয়েছে ৩৫৪ কোটি ডলার। যদিও একই অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ঘাটতি ছিল ৪০৯ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

আর্থিক হিসাবের এই পরিবর্তন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান বলেন, এতদিন ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের মধ্যে বড় ধরনের ফারাক ছিল। যা এখন সমন্বয় করা হয়েছে। এতে আমাদের আর্থিক হিসাবে এই উদ্বৃত্ত তৈরি হয়েছে। এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ইপিবির রপ্তানির তথ্যে কোনো গরমিল থাকবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক-ইপিবি এবং এনবিআরের সমন্বয়ে নতুন হিসাব তৈরি করা হয়েছে।

পরে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও ব্যালেন্স অব পেমেন্টের হিসাবের ব্যাখ্যা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, নেট এফডিআই বা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকে আর্থিক হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পদ বিপিএম-৬ অনুযায়ী গণনা করা হয়েছে। এছাড়া এনবিআর একাধিক এন্ট্রি সমন্বয় করে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ইপিবিকে রপ্তানি চালানের ডেটা সংশোধন করে এবং সরবরাহ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ অনুযায়ী স্থানীয় বিক্রয়, সিএমটি (কাটিং, মেকিং এবং ট্রিমিং) ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে রপ্তানি তথ্য সংকলন করে। এখন থেকে ইপিবিও একই পদ্ধতিতে রপ্তানির তথ্য সংকলন করবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণের অর্থসহ বেশ কিছু দাতা সংস্থার ছাড়কৃত অর্থ রিজার্ভে যোগ হওয়ায় আর্থিক হিসাবে এই পরিবর্তন হতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বেশ কয়েকটি কারণেই আর্থিক হিসাব ইতিবাচক হতে পারে। প্রথমত, গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সে ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে, দ্বিতীয়ত, আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির ঋণের অর্থও রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে। এর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকসহ আরও কয়েকটি সংস্থাও বড় অঙ্কের অর্থছাড় করেছে। সব মিলিয়ে রিজার্ভে কিছুটা ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

দেশে আন্তর্জাতিক সম্পদের মালিকানা হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি পরিমাপ করা হয় আর্থিক হিসাবের মাধ্যমে। সাধারণত এই হিসাবে ঘাটতি তৈরি হলে দেশে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ও বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হারের ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়। আর উদ্বৃত্ত হলে স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি তৈরি হয়।

দেশে দুই বছর ধরে চলা ডলার সংকট এখনো কাটেনি। যে কারণে রিজার্ভের পতনও থামছে না। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের মধ্যবর্তী দাম ১১৭ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে গত মে এবং জুন মাসে রেমিট্যান্সে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ মাস গত জুনে প্রবাসীরা ২৫৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর পুরো অর্থবছরে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

আর্থিক হিসাবের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), পোর্টফোলিও বিনিয়োগ, অন্যান্য বিনিয়োগ ও রিজার্ভ অ্যাসেট বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অন্যান্য বিনিয়োগের মধ্যে রয়েছে বিদেশি সহায়তা, সরকারের মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, ঋণের কিস্তি পরিশোধ, দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্যিক ঋণ, ট্রেড ক্রেডিট বা রপ্তানির বিপরীতে প্রত্যাবাসিত অর্থ এবং অন্যান্য সম্পদ ও দায়।

এদিকে, ডলার-সংকট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ির কারণে দেশে মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ সার্বিকভাবে আমদানি কমেছে। ব্যাংকগুলো আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার বিষয়ে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করেছে। অন্যদিকে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এতে সার্বিকভাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। জুলাই-এপ্রিল সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৬৯ কোটি ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার। যদিও জুলাই-মার্চ পর্যন্ত বাণিজ্য ঘাটতি আরও কিছুটা কম ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই-এপ্রিল সময়ে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত হলেও চলতি হিসাবে বড় ঘাটতি দেখানো হয়েছে। জুলাই-এপ্রিল সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৫৭২ কোটি ডলার। যদিও জুলাই-মার্চ সময়ে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দেখানো হয়েছিল ৫৭৯ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৮ কোটি ডলার।

Bangladesh bd economic sector Bangladesh bank

You may also like