শেয়ারবাজারে এখন কদর বেশি বন্ধ কোম্পানির। এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেন ঘিরে বাজারে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ এক কারসাজি চক্র। বছরের পর বছর বন্ধ, বিনিয়োগকারীদের এক পয়সাও লভ্যাংশ দিতে পারছে না। কিন্তু শেয়ারের দর বাড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ২ গুণ বা তার বেশি দর বেড়ে যায়। কোম্পানিতে কোনো উৎপাদন না থাকলেও ১০ টাকার শেয়ার ২০০ টাকায় লেনদেন হয়। কীভাবে এসব শেয়ারের দর বাড়ে কেউ বলতে পারে না। এই চক্রের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পথে বসবে বলে আশঙ্কা করছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। শেয়ার বাজারের কারসাজি চক্র সিরিয়াল ট্রেড, গুজব ছড়িয়ে শেয়ার দর বৃদ্ধি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দিনের পর দিন শেয়ারবাজারে সক্রিয় এই কারসাজি চক্রের তৎপরতা চলছে। শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে নিয়মিত গুটিকয়েক কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়। এসব শেয়ারের পেছনে রয়েছে কোনো না কোনো চক্র। তাদের কার্যক্রম সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পথে বসাবে এবং বাজারে আস্থা নষ্ট করবে। দীর্ঘমেয়াদে এটি শেয়ারবাজার ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
জানা গেছে, ইমাম বাটন, জুট স্পিনার্স, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, নর্দার্ন জুটের মতো কোম্পানিগুলোর দাপট চলছে শেয়ারবাজারে। এসব কোম্পানির কোনোটি বন্ধ, কোনোটি বছর শেষে কোনো লভ্যাংশ প্রদান করে না। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ। প্রতিষ্ঠানটির তিন মাস আগে শেয়ার দর ছিল মাত্র ৩০ টাকায়। গতকাল এই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২১০ টাকায়। অর্থাৎ তিন মাস আগে মাত্র ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ২ কোটি টাকা মুনাফা করছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটি ক্ষুদ্র একটি কোম্পানি। ২০২৩ সালে তারা কোনো মুনাফা দেয়নি বিনিয়োগকারীদের। ২০২২ সালে মাত্র ২ শতাংশ মুনাফা দিয়েছে। এই সময় তালিকাভুক্ত কিছু কোম্পানি ৪০০ শতাংশ মুনাফা দিলেও সেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর বাড়েনি। খাদ্য খাতের আরেকটি কোম্পানি রাঙামাটি ফুড প্রোডাক্টস নিয়ে বড় ধরনের কারসাজির প্রমাণ পায় ডিএসই। ২০০৩ সাল থেকে কোম্পানিটির কার্যক্রম বন্ধ। ওটিসিতে থাকা কোম্পানিটি ২০২২ সালে একটি গ্রুপ ১০ লাখ শেয়ার কিনে নেয় প্রায় ১ কোটি টাকায়। সঙ্গে ব্যাংকের দায়দেনার ভার নেয়। এরপরই ঘটে শেয়ার নিয়ে কারসাজি ও নানা অনিয়ম। মাত্র ৯ টাকায় শেয়ার কেনা হলেও মাসের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর উঠে যায় আকাশচুম্বী দরে। ডিএসই তদন্তে নেমে বড় ধরনের অনিয়ম পায়। এর মধ্যে টাকা ছাড়া নতুন শেয়ার ইস্যু, ভুয়া কাজ দেখিয়ে অর্থ খরচ, যন্ত্রপাতি কেনার ভুয়া বিল তৈরি, জনবল ও পরামর্শককে ভুয়া বেতন প্রদানসহ আর্থিক নানা অনিয়ম। এসব অনিয়ম করে আর্থিক প্রতিবেদন সামনে নিয়ে আসে শেয়ার দর বৃদ্ধির কারসাজি করেছে।
জানতে চাইলে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজার জাঙ্ক শেয়ারে বিনিয়োগ হচ্ছে। যেসব কোম্পানি দিনের পর দিন বন্ধ তাদের শেয়ার দর বাড়ে। এক মাসের মধ্যে ১০ গুণও দর বেড়ে যায়। এটা কীভাবে সম্ভব? বছর শেষে মুনাফা দিতে পারে না কিন্তু দর বৃদ্ধি তালিকায় শীর্ষ থাকে। এতে শুধু কিছু সিন্ডিকেটের সঙ্গে কোম্পানি ম্যানেজমেন্ট জড়িত। এই কারসাজি সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের হাত থেকে বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে আইন সঠিকভাবে পরিপালন করতে হবে। কারসাজির কারণে ছোট কোম্পানির দর বহুগুণ বাড়তে থাকলেও প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। এটা ঠেকাতে হলে শুরুতে পদক্ষেপ নিতে হবে। কারসাজির বিরুদ্ধে যদি দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকে দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারবাজার ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
source: bangladesh protidin’
Activities of bettors in the stock market sharebajar bajikor